আক্ষেপের মাঝেও মুগ্ধতা

জাতীয় দলের দরজাটা বন্ধ প্রায় বছরখানেকের বেশি সময়। বয়স বিবেচনায় দলে জায়গা পাবার সুযোগ নেই বললেই চলে। হ্যাঁ পারফরম্যান্সে এখনও তিনি সেরা। কিন্তু বোর্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় আর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ তত্ত্বের গ্যাড়াকলে জাতীয় দলের জার্নিটা ফাফ ডু প্লেসিসের জন্য শেষ বলা চলে।

মাস দুয়েক বাদেই বয়সটা ৩৮ ছুঁয়ে ফেলবে। এই বয়সে ক্রিকেটাররা ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে ভিন্ন পরিকল্পনা করেন। কেউ বা কোচিং পেশায়, কেউ ধারাভাষ্যকার হিসেবে নয়তো পারিবারিক ব্যবসায়ে মনযোগী হন। কেউ কেউ পরিবারকে নিয়ে বাকি সময়টা একান্তে কাটাতে চান। কিন্তু এই বয়সেও দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছু ক্রিকেটার। তাদেরই একজন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস।

জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হলেও ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে তিনি মাঠ মাতাচ্ছেন নিয়মিতই। সবশেষ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শেষে যোগ দিয়েছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে।

আর গেল ম্যাচেই লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে খেলেছেন ৬৪ বলে ৯৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। আক্ষেপটা অবশ্যই আছে। আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতেই আউট হন ফাফ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শেষ ওভারে জেসন হোল্ডারের পঞ্চম বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে মার্কাস স্টোয়েনিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৯৬ রানে আউট হন ফাফ। ফাফের দুর্দান্ত ইনিংসে লখনৌর বিপক্ষে ১৮ রানের জয় তুলে নেয় ব্যাঙ্গালুরু।

এই আক্ষেপে অবশ্য একবার পোড়েননি তিনি। ২০১৯ সালে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৫৫ বলে ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। স্যাম কারানের বলে বোল্ড হয়ে সেবারও মাত্র ৪ রানের আক্ষেপ নিয়ে ডাগ আউটে ফিরেন ফাফ। এরপর গেল আসরেও হাতছানি ছিল সেঞ্চুরির। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে খেলেন ৬০ বলে ৯৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতেই দল ততক্ষণে জয়ের বন্দরে!

লখনৌর বিপক্ষে ৯৬ রানের এই ইনিংসের আগে এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই খেলেছিলেন ৫৭ বলে ৮৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। পরের পাঁচ ম্যাচে করেন মোটে ৬৬ রান! দল জয়ের ধারায় থাকলে অধিনায়ক প্লেসিসের ব্যাটটা ঠিক হেসে উঠতে পারেনি। সমালোচনা রেশ উঠতেই ব্যাট হাতে আবারও খেললেন অধিনায়কোচিত ইনিংস। সেই সাথে অধিনায়ক হিসেবেও এখন পর্যন্ত বিচক্ষণ নেতৃত্বেরই ছাপ রেখেছেন তিনি।

৭ ম্যাচে ৫ জয়ের পয়েন্টস টেবিলের দুইয়ে অবস্থান করছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু।

ব্যাঙ্গালুরুর জার্সিতে এবারই প্রথম তাও আবার নতুন ভূমিকায়। প্রথমবারের মতো আইপিএলে অধিনায়কের দায়িত্ব। জাতীয় দলে লম্বা সময় অধিনায়কত্ব করলেও আইপিএল ইতিহাসে এবারই প্রথম। তাও যে দলটার দায়িত্ব গেল ১৪ আসর ধরে ছিলো সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির কাঁধে!

ফলে, চাপটা যে আকাশ সমান সেটা বলে না দিলেও চলে। আইপিএলে বিরাট কোহলির সাফল্য না থাকলেও তিনি ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক।

এর আগের চার আসরে খেলেছিলেন চারবারের আইপিএল শিরোপাজয়ী দল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। চলতি বছর ১৫ তম আসরের মেগা অকশনে সাত কোটি রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। আর ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে সুযোগ পেয়ে প্রথম আসরেই ফাফ পেলেন অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব। অবশ্য এটা আগেই অনুমেয় ছিল। বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোয় ডু প্লেসিসের কাঁধেই উঠতে যাচ্ছে এই গুরুদায়িত্ব।

আর অধিনায়ক হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনি সফল। ব্যাট হাতেও ফিরেছেন রানা। আপাতত স্রেফ ধারাবাহিকতার প্রয়োজন। গেল আসরগুলোর তুলনায় ব্যাট হাতে খানিকটা ব্যাকফুটেই আছেন এই প্রোটিয়া তারকা। যদিও দলের পারফরম্যান্স তাঁর জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির নিঃশ্বাস। তাই মাথায় চাপের বোঝা নেই বললেই চলে।

বয়সের ছাপটাও চেহারায় অস্পষ্ট। পারফরম্যান্সেও সেই আঁচ লাগতে দেননা তিনি। আপাতত হয়ত ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নিজের সেরাটা দিয়ে সামর্থ্যের শেষ ছাপটা রাখার চেষ্টায় আছেন ফাফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link