সেমিফাইনাল বনে যাওয়া নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের শেষ ওভার। সেই ওভারে নো-বল বিতর্কের ঘটনাটা ক্রিকেটপ্রেমীদের অজানা নয়। মুস্তাফিজুর রহমানকে করা ইসুরু উদানার পর পর দুই শর্ট বাউন্সের পর নো বল ডাকেন আম্পায়ার। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা গেল সেটি নাকচ করে দিয়ে বলটি লিগ্যাল ডেলিভারি হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিবাদ জানান নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ড্রেসিং রুম থেকে নিচে নেমে এসে সাকিব বার বার রিয়াদ-মুস্তাফিজদের খেলা ছেড়ে উঠে আসতে বলছিলেন।
এবার একই দৃশ্য দেখা গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) গতকালের দিল্লী ক্যাপিটালস বনাম রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচে। ইনিংসের শেষ ওভারে দিল্লীর জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৬ রানের। আপাতদৃষ্টিতে এই রান করাটা অসম্ভব প্রায়।
স্ট্রাইকে ছিলেন ক্যারিবিয়ান পাওয়ার হিটার রভম্যান পাওয়েল আর বোলিংয়ে আরেক ক্যারিবিয়ান ওবেড ম্যাকয়। ম্যাকয়ের করা প্রথম দুই বলেই দুই ছক্কা হাঁকালেন পাওয়েল। দিল্লীর সমর্থকদের মধ্যে হঠাৎ উল্লাস-হৈচৈ। ম্যাচে যেন প্রাণ ফিরলো পাওয়েলের দুই ছক্কায়। যদিও দিল্লীর জন্য জয়টা তখনও অসম্ভব প্রায়।
এরপর তৃতীয় বলটা দিলেন কোমরের কাছাকাছি উচ্চতায় ফুলটস। সেটিও সজোরে হাঁকিয়ে আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল এটি নো বল। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ার নিতিন মেনন অবশ্য নো বল ডাকলেন না। ফুঁসে উঠলেন পাওয়েল। আম্পায়ারকে নো বলের কথা জানাতেই সেই আবেদন নাকচ করে দিলেন। এরপর মেননকে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে যাওয়ার কথা জানান পাওয়েল। কিন্তু তাঁর সেই আবেদনও নাকচ করে দেন ব্যাটার।
ততক্ষণে দিল্লীর ডাগআউটে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন অধিনায়ক ঋষাভ পান্ত। ডাগ আউট থেকে সমানে ডেভিড ওয়ার্নার, পান্তরা নো বলের ইঙ্গিত করতে থাকেন। তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে আবেদন জানানোর ইশারা করলেও অন ফিল্ড আম্পায়াররা সেদিকে কর্ণপাত না করে খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এতে ক্রিজে থাকা পাওয়েল এবং কুলদ্বীপ যাদবকে মাঠ থেকে বেড়িয়ে আসার নির্দেশ দেন দিল্লি অধিনায়ক পান্ত। অধিনায়কের নির্দেশে দুজনে মাঠের বাইরে চলে যেতে চাইলে তাঁদের আটকান আম্পায়াররা। বেশ কিছু সময় ধরে চলতে থাকে এই নাটক।
এরপর হঠাৎ করেই রাগে, ক্ষোভে মাঠে ঢুকে পড়েন দিল্লীর সাপোর্ট স্টাফ প্রবীণ আম্রে। তিনি গিয়ে আম্পায়ারদের সাথে তর্কে জড়ান।
বেশকিছু সময় তর্কাতর্কির পর পুনরায় শুরু হয় খেলা। ততক্ষণে অবশ্য মনযোগ ব্যাহত হয় পাওয়েলের। এরপর খেলা শুরু হলেও জয়ের দেখা আর পায়নি দিল্লী। পরের দুই বল থেকে নেন দুই রান। আর শেষ বলে আউট হয়ে হতাশাজনক হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে দিল্লী। পাওয়েলের ১৫ বলে পাঁচ ছক্কায় ৩৬ রানের ক্যামিওতেও পরাজয় এড়াতে পারেনি দিল্লী ক্যাপিটালস।
আম্রে মাঠে প্রবেশ করায় ধারাভাষ্যকাররাও অবশ্য সমালোচনা করেন। ধারাভাষ্যকাররা বলতে থাকেন, ‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আপনি খেলার মাঝে মাঠে প্রবেশ করে আম্পায়ারের সাথে তর্কে জড়াতে পারেন না।’
ম্যাচ শেষে ঋষাভ বলেন, ‘ম্যাচের শেষ ওভারে পাওয়েল আমাদের একটা সুযোগ দেখিয়েছিল। নো বল হলে সেটা আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান হত। আমার মনে হয়েছিল বলটা আর একবার দেখা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা আমাদের সেটা তো আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এটা খুব হতাশাজনক। কিন্তু আমি আর কী বা করতে পারতাম। আমাদের সকলেই খুব হতাশ হয়েছে। নো বল হলেই পারত। আমাদের মনে হয় এতে তৃতীয় আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল। কারণ ওটা নো বলই ছিল। কিন্ত আমি তো নিয়ম বদল করতে পারি না।’
১৯৯৯ সালে অ্যাডিলেড ওভালে মুরালিধরনের নো বলের প্রতিবাদে মাঠ ছেড়েছিলেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। এরপর ২০০৬ সালে অযৌক্তিক পেনাল্টি রান দেওয়ায় দল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। এরপর নিদাহাস ট্রফিতে নো বল বিতর্কে সাকিবের ক্ষোভ। সেই দৃশ্যই যেন চার বছর বাদে আবার দেখা মিলল আইপিএলে।