আগুন চোখের লড়াই

ক্রিকেটের এত হিজিবিজি নিয়ম তাঁর একেবারেই পছন্দ ছিল না। এরচেয়ে বরং হ্যান্ডবল কিংবা ভলিবল খেলাতেই বেশি আনন্দ। তবে নিয়তি বদলানোর সাধ্য কার। তাঁকে ক্রিকেটে আসতেই হলো। শুধু আসলেনই না, একসময় ক্রিকেট অপছন্দ করা জাহানারা আলম হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার গার্ল।সম্ভবত, বাংলাদেশের ইতিহাস সেরা নারী ক্রিকেটারদের একজন তিনিই।

নারীদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন জাহানারা আলম। নিখুঁত লাইন লেন্থের পেস বোলিং এর সাথে তাঁর সৌন্দর্য মিলে একটা রূপকথার মত ব্যাপার ঘটেছে। বাংলাদেশের যেকোন ক্রিকেট ভক্ত যেন জাহানারা আলমেরও বিরাট ভক্ত। বাংলাদেশের গণ্ডী পেরিয়ে তিনি বিশ্বক্রিকেটেরও বড় তারকা হয়ে উঠেছেন।

তবে জাহানারা আলমের ছোটবেলাটায় কোন ভাবেই ক্রিকেট ছিল না। খেলাধুলার সাথেই অবশ্য তিনি ছিলেন। স্কুলে থাকাকালীন সময় থেকেই হ্যান্ডবল, ভলিবল খেলে বেড়াতেন। সেই সময় ক্রিকেট ব্যাপারটা জাহানারা আলমের জন্য বেশ জটিল। এত নিয়মের মারপ্যাঁচ পছন্দ হতো না তাঁর। ফলে এই খেলাটা থেকে দূরেই থাকতেন।

কিন্তু, তখন দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নারী ক্রিকেট নিয়ে বেশ সোচ্চার হয়েছে। ফলে পুরো দেশ জুড়ে হান্টিং শুরু হলো। সেই সময়ই জাহানারাকে তাঁর এক শিক্ষক ক্রিকেটে আসতে বললেন। জাহানারা শুরুতে আমতা আমতা করেছিলেন। তবে পরে অনেকের পরামর্শেই জাহানারা এই চ্যালেঞ্জটাও নিলেন।

এরপর আসলে আর কখনো জাহানারা আলমকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রিকেটের জাহানারা এগিয়ে গেছেন অনেক দূরে, সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও টেনে তুলার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। বাংলার মেয়েরাও যে ক্রিকেটটা খেলতে পারে সেটাই করে দেখিয়েছিল জাহানারারা। তবে চোখে কাজল দিয়ে বাইশ গজে নেমে যাওয়া জাহানার আমাদের সমাজকেও একটা বার্তা দিয়েছিলেন।

একবিংশ শতান্দীর একেবারে শুরুতে যখন বাংলাদেশের ছেলেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই সময় একটা মেয়ে রোজ ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে যাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কত লোকে কত কথা বলেছে। একটা মেয়ে কেন ক্রিকেট খেলবে এমন প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয়েছে জাহানারার পরিবারকে।

তবে শেষ পর্যন্ত মেয়ের পাশে ছিলেন জাহানারার বাবা। সবাই যখন মেয়েকে আটকানোর কথা বলছিল তখন জাহানারাকে আরো সামনে এগিয়ে দিয়েছেন এই ভদ্রলোক। বলেছেন মেয়েটা যখন খেলতে চায় তাহলে খেলুক না। জাহানারাও মন প্রাণ দিয়ে খেলেছেন। বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিলেন জাহানারা।

বাংলাদেশের হয়ে তাঁর কীর্তির কোন কমতি নেই। ২০১১ সালে শুরু হওয়া যাত্রাটা এখনো চলছে দাপটের সাথেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ উইকেট ছুঁতে প্রয়োজন আর মাত্র একটি উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৪ টি ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোট ৫৫ টি উইকেট আছে এই পেসারের ঝুলিতে।

তবে এই উইকেট সংখ্যায় আসলে জাহানারা আলমকে মাপা কঠিন। কেননা তাঁর ক্রিকেট খেলাটায় আসতে সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক বাঁধার। পথটা একেবারেই সহজ ছিল না। তবে জাহানারার মত ক্রিকেটাররা এখনকার মেয়েদের জন্য পথটা অনেক মসৃণ করে দিয়েছেন। এখন শুধু জাহানারাদের দেখানো পথে হেঁটে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পালা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link