ক্রিকেটের রাজ্যে ক্ষুধা গদ্যময়
অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো তাঁর ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন। প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙা, গড়ার খেলায় মেতেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিজের অভিষেক ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মাঠে নামলেন। অভিষেক ম্যাচেই নিজের বোলিং দিয়ে নজর কেড়েছেন। তাঁকে রিস্ট স্পিন, ফিঙ্গার স্পিন, ক্যারাম বলও করতে দেখা গিয়েছে। অথচ মাস ছয়েক আগেও কুমার কার্তিকিয়া শুধুই একজন অর্থডক্স বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন।
পনেরো বছর বয়সেই পরিবারকে কথা দিয়ে এসেছিলেন। তাঁর ক্রিকেট খেলাটা কখনো আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না। কানপুর থেকে সেই ছোট্ট বয়সেই চলে এসেছিলেন দিল্লি, ক্রিকেট খেলবেন বলে। কুমার কার্তিকিয়া সিং খেলতে খেলতে চলে এসেছেন আইপিএল অবধি। যেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লগে নাকি টাকার ছড়াছড়ি। এই স্পিনার তাহলে কথা রেখেছেন নিশ্চয়ই।
তবে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো তাঁর ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন। প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙা, গড়ার খেলায় মেতেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিজের অভিষেক ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মাঠে নামলেন। অভিষেক ম্যাচেই নিজের বোলিং দিয়ে নজর কেড়েছেন। তাঁকে রিস্ট স্পিন, ফিঙ্গার স্পিন, ক্যারাম বলও করতে দেখা গিয়েছে। অথচ মাস ছয়েক আগেও কুমার কার্তিকিয়া শুধুই একজন অর্থোডক্স বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন।
ব্যাপারটা রীতিমত অবিশ্বাস্যই। কেননা রিস্ট স্পিন ক্রিকেটের কঠিনতম শিল্পগুলোর একটি। আর সেটা মাত্র ছয় মাসেই কী করে রপ্ত করলেন এই স্পিনার তা রীতিমত রহস্য। কুমার কার্তিকিয়া নিজেকে নতুন করে গড়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটেও কার্যকর হয়ে উঠার জন্য। ফল পেতেও সময় লাগেনি, বছর না ঘুরতেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে।
দিল্লির একাডেমিতে যখন কার্তিকিয়া প্রথম যান তখন তাঁর কোচিং ফি দেয়ার মত অবস্থা ছিল না। একাডেমির কোচরা ব্যাপারটা জানতেন। সঞ্জয় ভর্দ্দাজ সেই সেই সময় থেকেই কার্তিকিয়ার খেয়াল রেখেছেন। এই কোচ ট্রায়ালে কার্তিকিয়াকে মাত্র একটি বল করতে দেখেছিলেন। তখনই তিনি বুঝেছিলেন এই ছেলে অনেকদূর যাবে।
সঞ্জয় ভর্দ্দাজের চোখ ঠিকই দেখেছিল। এখন তাঁর ছাত্র আইপিএলে খেলছে। তবে সেই ছোট্ট কার্তিকিয়ার বোলিং নিয়ে এই কোচ বলছিলেন, ‘কার্তিকিয়ার বোলিং অ্যাকশন একেবারেই স্মুথ ছিল। সেই সময়ই অবশ্য বোলিং করার সময় আঙুলের ব্যবহার করতে চাইত।’
সেখান থেকে আজকের কুমার কার্তিকিয়া হওয়া পর্যন্ত এই স্পিনারের উপর নজর রেখেছেন এই কোচ। তবে সেই সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হতো কুমার কার্তিকিয়া খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। কার্তিকিয়া সেই সময় একটা ফ্যাক্টরিতে লেবারের কাজ করতেন। সেটা ছিল একাডেমি থেকে প্রায় ৮০ কিলো মিটার দূরে। সারারাত ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন এরপর দিনের বেলা ক্রিকেট। কখনো কয়েক মেইল হেটে আসতেন ১০ রূপি বাঁচানোর জন্য। সেটা দিয়ে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে খাবেন বলে।
কুমার কার্তিকিয়াকে প্রথম দেখার স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে আছে কোচ সঞ্জয়ের। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে সেদিনের কথা মনে করে এই কোচ বলেন, ‘একাডেমিতে প্রথম দিন দুপুরে কার্তিকিয়াকে খাবার দেয়া হলো। খাবার দেখে ছেলেটা রীতিমত কেঁদে দিয়েছিল। কেননা প্রায় এক বছর ধরে দুপুরে ভালো করে খাবার খেতে পারেনি সে।’
এরপর সেই একাডেমি থেকেই ক্রিকেট যাত্রা শুরু কুমার কার্তিকিয়ার। স্কুল ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রিকেটের সব বাধা পেরিয়ে তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। তবে এই পুরো সময়টা তাঁর মাথায় কোচ সঞ্জয় ভর্দ্দাজের হাত ছিল। ভোপালে তাঁর নতুন একাডেমিতেও নিজেকে তৈরি করেছেন কুমার কার্তিকিয়া।
আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে চার ওভার বোলিং করে এই স্পিনার খরচ করেছেন মাত্র ১৯ রান। তুলে নিয়েছেন একটি উইকেটও। তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর প্রশংসা করেছেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মত গ্রেটরাও।
ছয় মাসেই নিজেকে এমন আমুল বদলে ফেলার ব্যাপারটায় অবশ্য খুব বেশি অবাক হননি কোচ। তিনি বলেন, ‘সে যখনই ফাকা সময় পেত নেটে বোলিং করতে থাকতো। অনেক সময় ম্যাচ খেলে এসে আবার রাতে ইনডোরে বোলিং করতো। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর এই নেশাটা অবশ্য গত নয় বছর ধরেই গড়ে উঠেছে।’