সময় ঠিক কতটা নিষ্ঠুর ভাবুন একবার। যে দল কি না জিতেছে চারটি বিশ্বকাপ সে দলই কি না নেই বিশ্বকাপে। কতটা বেদনাতুর এক পরিস্থিতি সে দেশের ফুটবল ভক্তদের জন্যে। বলছিলাম ইউরোপের দেশ ইতালির কথা। তাঁরা চারবার ছুঁয়ে দেখেছেন সে স্বর্ণালী ট্রফি। যার দিকে তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ।
সে ট্রফি আরও একবার ছোঁয়া তো দূরে থাক, লড়াইটা পর্যন্ত এ দফা আর করা হচ্ছে না ইতালিয়ানদের। অথচ দিন তো এমন ছিল না। ইতালির ইতিহাস তো দূর্গ জয়ের। দূর্গ গুড়িয়ে দেওয়ার। সে দূর্গ গুড়িয়ে দেওয়ার কারিগরদের নিয়েই হবে আজকের আলোচনা। বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ গোলদাতারা থাকছেন আজ।
- রবার্তো বাজ্জিও
ইতালির হয়ে একটিও বিশ্বকাপ জেতার সৌভাগ্য হয়নি রবার্তো বাজ্জিওর। তবুও তাঁকে ছাড়া আজকের আয়োজন শুরু করাও সম্ভব নয়। তিনি যে বিশ্বকাপের মঞ্চে ইতালির সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে মোট তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ইতালির হয়ে। মাত্র একটিবার ফাইনাল খেলেও অধরা রয়ে যায় শিরোপা।
তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ এই সময়ের মধ্যে টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। প্রথম বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে দুই গোল, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে করেন সাত ম্যাচে পাঁচ গোল আর শেষেরটায় তাঁর অবদান চার ম্যাচে দুই গোল। মোট মিলিয়ে ইতালির হয়ে ১৬টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে নয় গোল করেছনে বাজ্জিও।
- পাওলো রসি
ইতালির তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে হাজির হয়েছিলেন পাওলো রসি। প্রথমবার তাঁর দলকে নিয়ে তিনি সেমিফাইনাল অবধি উঠতে পেরেছিলেন। তবে এরপরের ধাপে আর পৌছানো যায়নি। টুর্নামেন্ট শেষ করতে হয়েছিল চতুর্থ স্থানে। রসি ছাড়াও পুরো ইতালি দল নিশ্চয়ই ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পরের আসরেই কিছু একটা করে দেখাতে হবে।
ঠিক সে কাজটায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাওলো রসি করেছিলেন ছয় গোল। সেবার বিশ্বকাপে ইতালি ছুঁয়ে দেখেছিল নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ। ১৯৮২ এর সেই বিশ্বকাপের আগে রসি খেলেছিল ১৯৭৮ এর বিশ্বকাপ। সেখানে সাত ম্যাচ খেলা রসির গোল ছিল তিনটি।
- ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি
ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরি ছিলেন একজন কমপ্লিট স্ট্রাইকার। সদা হন্যে হয়ে যিনি খুঁজতেন গোলের ঠিকানা। ফুটবল বোদ্ধাদের কারও কারও মতে তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। তবে সে সুখ্যাতি অর্জনে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অনেক। শুরুতে তিনি খুব একটা টেকনিকালি নিখুঁত ছিলেন না। ধীরে ধীরে হয়েছেন।
তবে আফসোস তিনি জিততে পারেননি ইতালির হয়ে একটিও বিশ্বকাপ। খেলেছেন দুইটি। সর্বোচ্চ কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি দলকে নিয়ে যেতে সহয়তা করতে পেরেছিলে ভিয়েরি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে করেছিলেন পাঁচ গোল। আর ঠিক তাঁর পরের বিশ্বকাপে চার ম্যাচে তাঁর পা থেকে এসেছিল চার গোল।
- সালভাতোর শিলাচি
বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হয়েও বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপটা নিশ্চয়ই এখনও পোড়ায় সালভাতোর শিলাচিকে। তিনি ইতালির হয়ে একটিমাত্র বিশ্বকাপই খেলেছিলেন ১৯৯০ সালে।
তৃতীয় স্থানে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে এবং তাঁর দলকে। তিনি সেবার বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে করেছিলেন ছয় গোল। ইতালিকে রীতিমত একাই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনাল অবধি। তবে শেষমেশ আর ফাইনাল খেলা হয়ে ওঠেনি তাঁর।
- আলেসান্দ্রো আলতোবেলি
১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ জয়ে খুব বেশি অবদান রাখা হয়নি আলেসান্দ্রো আলতোবেলির। তিনি কেবল একটি গোলের দেখা পেয়েছিলেন সেবারের আসরে। তবে তিনি খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনটি ম্যাচ।
তিন ম্যাচেই ছিলেন বদলি খেলোয়াড়। তবে এর পরের বিশ্বকাপে তিনি নিজের জাত চিনিয়ে চার ম্যাচে চার গোল করেছিলেন। তবে তা বৃহৎ চিত্রে ইতালির জন্যে খুব সুখকর ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারেনি।