ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপে একটা ভরসার নামে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ডেথ ওভারে যার হাতে নিশ্চিন্তে বল তুলে দিতে পারতেন অধিনায়ক। এছাড়া অবশেষে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের আক্ষেপও মিটলো বলে মনে হচ্ছিল। তবে হঠাৎই একটা ইনজুরি যেন সবকিছু ওলট-পালট করে দিল। ভয় হচ্ছিল, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও বুঝি হারিয়ে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর ইনজুরিতে পড়ে আর বাংলাদেশের হয়ে মাঠা নামা হয়নি। মাঠের ক্রিকেটে সাইফউদ্দিন আলোচনায় না থাকলেও বাইরের নানা ইস্যুতে এই সময়টাতে আলোচিত বা সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
এবছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে সেখানে তাঁর নাম ড্রাফটে রাখা হয়নি। সেই কষ্ট থেকে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এরপর ইনজুরির সময়টায় তাঁর পাশে বিসিবি ছিল না এমন অভিযোগও করেন গনমাধ্যমের সামনে। সেজন্যও পরে তোপের মুখে পড়েছিলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। এরপর অবশ্য এই কারণে ক্ষমাও চেতে হয়েছে তাঁকে।
বিসিবির প্রতি তাঁর এই অভিযোগ অবশ্য একেবারে মিথ্যে নয়। সাইফউদ্দিন ইনজুরিতে পড়ার পর তাঁর চিকিৎসা বিসিবি করিয়েছে ঠিকই তবে এই সময়টায় লড়াইটা তাঁর একারই করতে হয়েছে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে সত্যিই কাউকে পাশে পাননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এমনকি অনুশীলন করার সুযোগও সেভাবে পাননি।
তবুও ইনজুরি কাটিয়ে নিজের এলাকাতেই একাকী ক্রিকেট খেলেছেন। নিজেকে ধীরে ধীরে ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত করেছেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন লড়াইটা জিততে পেরেছেন। ইনজুরি থেকে ফিরে আবার পেশাদার ক্রিকেট খেলেছেন। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আবাহনীর হয়ে মাঠে নেমেছিলেন।
আবাহনীর হয়ে বল হাতে সাইফউদ্দিন যে আগের মতই কার্যকর। তবে এবারের ঢাকা লিগে ব্যাট হাতে যেন আগের চেয়েও বেশি সাবলীল এই অলরাউন্ডার। শেষ ম্যাচে বল হাতে চার উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খেলেছিলেন ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস। এছাড়া শেষ তিন ম্যাচেই ব্যাট হাতে ছিলেন অপরাজিত। শেষ দিকে ব্যাট করতে নেমে ইনিংস শেষ করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন।
সবমিলিয়ে এই সাইফউদ্দিনকে বাংলাদেশের প্রয়োজন। এছাড়া মান অভিমানের পালাও ভেঙেছে সাইফউদ্দিন ও বিসিবির। চট্টগ্রামের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাংলাদেশ। আর সেখানেই হঠাত ডেকে পাঠানো হয়েছে সাইফউদ্দিনকে। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে বোলিংও করেছেন এই পেসার।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে অনুশীলনে ডাকা হয়েছিল আসলে তাঁর অবস্থা কাছ থেকে দেখার জন্য। এছাড়া আগামী মাসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে প্রস্তুত করতে চায় বাংলাদেশ। খুব সম্ভবত এই সফর দিয়েই আবার জাতীয় দলে ফিরছেন তিনি।
যদিও জাতীয় দলের পেস আক্রমণ এখন বেশ শক্তিশালী। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে তাসকিন আহমেদ এখন আছেন দারুণ ফর্মে। এছাড়া শরিফুল ইসলামও একাদশে নিজের জায়গা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন। ওদিকে মুস্তাফিজুর রহমান তো আছেনই। ফলে বাংলাদেশ দলে ডাক পেলেও একাদশে সুযোগ পাওয়াটা এখন ভীষণ কঠিন।
তবে ব্যাট হাতে সাইফউদ্দিন নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে স্লগার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারেন। এখনো বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ঘাটতি আছে। সেই সুযোগটা নিশ্চয়ই কাজে লাগাতে চাইবেন তিনি। দেখার অপেক্ষা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এই লড়াইটাও জিততে পারেন কিনা।