উল্টো পথের দু’জন

অধিনায়কের দায়িত্বটা অবশ্যই চাপের। দলের সবচেয়ে গুরুদায়িত্বটা অধিনায়ককেই পালন করতে হয়। দলের জয়ের ভাগটা সবাই নিলেও বেশিরভাগ সময়েই হারের দায়টা অধিনায়ককেই নিতে হয়। অধিনায়কত্বের এই চাপ সামলে খেলোয়াড় হিসেবে অনেকেই দুর্দান্ত ক্যারিয়ার গড়েছেন। কেউ বা আবার অধিনায়কের চাপে নিজের সাজানো ক্যারিয়ারেও বনে গেছেন অধারাবাহিক। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অবশ্য এই চাপ খানিকটা কম। তবে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সেটা কয়েকগুন বেশি।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএলে) অধিনায়ক হিসেবে অনেকেই সফল হয়েছেন। বিপরীতে বেশ কয়েকজন ছিলে ব্যর্থ। চলছে আইপিএলের পঞ্চদশ আসর। এবারের আসরে দশ দলের মাঝে আট দলেরই অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে আছেন ভারতীয় কোনো ক্রিকেটার। এই আট অধিনায়কের প্রায় সবাই ব্যাট হাতে বেশ ভাল পারফরমই করেছেন। তবে উলটো রথে ছিলেন পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

বাকি অধিনায়করা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক থেকে অনেকটা ভাল অবস্থানে থাকলেও এই দুই তারকা ব্যাটারই এবার চরম ব্যর্থ। লোকেশ রাহুল লখনৌতে যোগ দেওয়ায় পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তবে সেই দায়িত্বের বোঝা তিনি বইতে পারেননি। অধিনায়ক ট্যাগের চাপেই যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন এই ওপেনার।

গেল আসর গুলোতে ব্যাট হাতে ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে। অধিনায়ক হিসেবে এবারের আসরে প্রথমবার দায়িত্ব পেয়েছেন। আর এতেই যেন আগারওয়ালের শনির দশা। ১৭.৭৩ গড়ে মোটে ১৯৫ রান করেছেন তিনি। বলতে গেলে অধিনায়ক কোটাতেই খেলে যাচ্ছেনে এই ওপেনার। আসরে এক ফিফটির দেখা পেলেও বাকি ম্যাচগুলোতে ছিল হতশ্রী পারফরম্যান্স।

ঠিক একই চিত্র রোহিত শর্মার। জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কের দায়িত্ব। মেগা নিলামে দলে পরিবর্তন, নিজের অফ ফর্ম – সব মিলিয়ে যেন এবার আরও ব্যাকফুটে ছিলেন রোহিত। অধিনায়কত্বের চাপটা যেন গ্রাস করে ফেলেছেন ভারতের এই ওপেনারকে। পাঁচবারের শিরোপাজয়ী মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবারের আসরে পয়েন্টস টেবিলের একদম তলানীতে। ব্যাট হাতে দু:স্বপ্নের মত এক মৌসুম কাটিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১৩ ম্যাচে মাত্র ২০ গড়ে করেছেন ২৬৬ রান, নেই কোনো ফিফটি। রোহিতের বাজে ফর্ম প্রভাব পড়েছে দলের উপরেও। এবারের আসরে মাত্র তিন জয় পেয়েছে মুম্বাই।

পয়েন্ট টেবিলের নয়ে থাকলেও চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটে এবার রানের দেখা মিলেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার শিরোপা জয় করা দলটা ইতিমধ্যেই বাদ পড়েছে প্লে অফের দৌড়ে। দল ভাল না করলেও ধোনির পারফরম্যান্স খারাপ বলার সুযোগ নেই। ১৩ ম্যাচে ৩৪.৩৩ গড়ে করেছেন ২০৬ রান, আছে এক ফিফটি। বয়স আর গেল দুই আসর বিবেচনায় নিলে এবার ব্যাট হাতে বেশ ভালই করেছেন এই ভারতীয় তারকা।

হার্দিক পান্ডিয়া, লোকেশ রাহুল, সাঞ্জু স্যামসনরা অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও দলের সাথে নিজেদের পারফরম্যান্সও দেখিয়েছেন নজরকাড়া। শ্রেয়াস আইয়ার, ঋষাভ পান্তরাও ব্যাট হাতে বেশ ভালই করেছেন। তবে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন আগারওয়াল-রোহিতরা।

গেল আসরেও রোহিতের ব্যাটে রান বন্যার দেখা মিলেনি। এবারের আসরে আরও সাদামাটা পারফরম্যান্স। রোহিতের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়েছে দলের উপরেও। গেল আসরগুলোতে দুর্দান্ত ব্যাট করা আগারওয়াল এবার চরম ব্যর্থ। অধিনায়কের চাপটা যে তিনি নিতে পারছেন না সেটাও স্পষ্ট। তবে রোহিতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। অধিনায়কত্ব করেই পাঁচবার মুম্বাইয়ের হয়ে শিরোপা জিতেছেন। তবে হুট করেই এত দায়িত্ব কাঁধে আসায় যেন এলোমেলো হয়ে গেছেন তিনি।

পঞ্চদশ আসরে যেখানে ব্যাট হাতে বাকি ভারতীয় অধিনায়কেরা ছুঁটছেন রানের ফোয়ারা ছোটাতে -উলটো পাশে রোহিত-আগারওয়ালরা ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে শেষ করছেন এবারের আসর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link