Social Media

Light
Dark

সম্ভাবনার নিভে যাওয়া প্রদীপ

১৫৬.৩, ১৫৯.০, ১৬০.৭, ১৫০.৫, ১৫৬.৯, ১৫৫.১ – ছয় বলের সবক’টি ডেলিভারির গতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের ওপরে। ওভারের তৃতীয় বলটি (১৬০.৭) করতেই পুরো মেলবোর্ন জুড়ে দর্শকদের উল্লাস, করতালি। সেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ গতির ওভার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার শন টেইট।

ads

২০১০ সালে সেই বারুদঠাসা ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন পাকিস্তানি ওপেনার ইমরান ফরহাত। ওই ওভার থেকে চার রানও আদায় করেন তিনি; যদিও পুরো ওভারেই তিনি ছিলেন অস্বস্তিতে। শন টেইটের গতির ঝড় সেদিন কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল ফরহাতের বুকে। চোখে মুখেও সেই ভয়টা দেখা গিয়েছিল স্পষ্ট।

ইমরান ফরহাতের কথা আসলেই যেন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে পড়ে যায় সেই অগ্নিঝড়া ওভারের কথা। সেখানে ইমরান ফারহাত ছিলেন পার্শ্বচরিত্র। আসলে, সেই ওভারটার মতই যেন তাঁর ক্যারিয়ার। কখনোই ঠিক লাইম লাইটে আসা হয়নি তাঁর।

ads

ওপেনিংয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে জাতীয় দলে এসেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। অনূর্ধ্ব-১৯ দল, ঘরোয়া ক্রিকেট আর ‘এ’ দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তিনি জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য ছিল। তবে সেই সামর্থ্য কিংবা সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি তিনি। লম্বা সময় পাকিস্তানের হয়ে খেললেও সামর্থ্যের সবটা দিতে পারেননি তিনি। ছিলেন দলের অধারাবাহিক আর অনিয়মত এক মুখ।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঘরোয়া ক্রিকেটে পথচলা। পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেন তিনি। ইমরানের বড় ভাই হুমায়ুন ফরহাতও পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় ফরহাতের। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্টেও অভিষেক হয় এই ওপেনারের।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি জাতীয় দলে। বাজে পারফরম্যান্সের কারণে অল্পতেই বাদ পড়েন দল থেকে। ২০০৩-০৪ মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আবার জাতীয় দলে ফেরেন তিনি।

ওই বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ১২৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। সাদা পোশাকে এটি ছিল ফরহাতের ক্যারিয়ার সেরা স্কোর। এরপর ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ ওয়ানডে সিরিজ পার করেন এই ওপেনার। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে তিন হাফ সেঞ্চুরি ও এক সেঞ্চুরিতে প্রায় ৭০ গড়ে করেছিলেন ৩৪৮ রান। ওই সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে ৫-০ তে হারায় পাকিস্তান। বলতে গেলে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জনটা এই নিউজিল্যান্ড সিরিজই।

পরের বছর ২০০৪ সালে ফরহাতে ১০১ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ভার‍তের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জয় পায় পাকিস্তান। ২০০৪ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সামনে রেখে বাদ পড়েন এই ওপেনার। টানা ব্যর্থতায় তার উপর আস্থা হারান নির্বাচকরাও। মোহাম্মদ হাফিজ, আসাদ শফিক, আহমেদ শেহজাদরা সেসময় সম্ভাবনাময় তারকা হিসেবে উঠে আসছিল। যার কারণে আর নিয়মিত হতে পারেননি এই ওপেনার। তরুণ সম্ভাবনাময় তারকাদের ভীড়ে জাতীয় দলে জায়গা মেলাতে হিমসিম খেতে হয় ফরহাতকে।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি প্রায় ১৬ হাজার রানের মালিক। লিস্ট এ ক্রিকেটেও আছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি রান। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের ছিটেফোঁটাও তিনি দেখাতে পারেননি জাতীয় দলে। প্রথমবার বাদ পড়ার পর দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু আবারও মুখ থুবড়ে পড়েন অল্পতেই। সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায় আক্ষেপের বেড়াজালে।

৪০ টেস্টে ৩২ গড়ে করেছেন ২৪০০ রান। ৩ সেঞ্চুরি আর ১৪ ফিফটি করেছেন নিজের নামে। অপরদিকে, ৫৮ ওয়ানডেতে ৩০.৬৯ গড়ে করেছেন ১৭১৯ রান। ১ সেঞ্চুরি আর ১৩ ফিফটি করেছেন এই ফরম্যাটে। ৭ টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেলেও করেছেন মোটে ৭৬ রান।

ওপেনিংয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে আশার আলো জ্বেলে এসেছিলেন। হতে পারতেন লম্বা রেসের ঘোড়া। সুযোগও পেয়েছিলেন পর্যাপ্ত। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি সামর্থ্যের সবটা দিয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে আসলেও জাতীয় দলে ছিলেন সাদামাটা। অধারাবাহিকতার সাগরে কূল না পেয়ে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান এই ওপেনার।

আরো চার-পাঁচ বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন। সব রকম ক্রিকেটকে বিদায় জানান ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। কে জানে, আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো ক্যারিয়ারের গতিবিধি অন্যরকম হতে পারতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link