প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে নাস্তানাবুদ করতে কিংবা রান আটকে দিতে বোলারদের জন্য সেরা এক অস্ত্র ইয়র্কার। বিধ্বংসী ইয়র্কারে স্ট্যাম্প উপড়ে দিচ্ছেন – বোলারদের কাছ থেকে এমন দৃশ্য ২২ গজে প্রায়ই দেখা মিলে। পেসারদের জন্য মারাত্মক এক অস্ত্র ইয়র্কার। শোয়েব আখতার, লাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে উমর গুল, মিশেল স্টার্ক, জাসপ্রিত বুমরাহ, লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট, শাহিন আফ্রিদি, কাগিসো রাবাদারা এই ইয়র্কার দিয়েই প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। সাদা বলের ক্রিকেটে যেকোন বোলারের জন্যই ইয়র্কার বিধ্বংসী অস্ত্র। যুগ যুগ ধরেই ব্যাটারদের চাপে ফেলতে বোলাররা ইয়র্কার দিয়ে আসছেন।
যুগে যুগে পেসারদের করা বেশ কিছু দুর্দান্ত ইয়র্কার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। এর মধ্যে কয়েকটির স্মৃতিচারণ করা যাক –
১৯৯৯ সালে কলকাতা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করছিল ভারত। উইকেটে থিতু ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ওয়াকার ইউনিসকে বসিয়ে শোয়েব আখতারকে দলে নেন পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। ওয়াকারের স্থলে তরুণ শোয়েবকে নেওয়ায় খানিকটা সমালোচনাও হল।
দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রাহুল দ্রাবিড়ের স্ট্যাম্প দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে উপড়ে ফেললেন। পরের বলেই আরেকটি দুর্দান্ত ইয়র্কারে শচীন টেন্ডুলকারের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেললেন শোয়েব। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন গেঁথে থাকার মত দুই ডেলিভারি; ওয়াসিমের আস্থার প্রতিদানও দিলেন।
দ্রাবিড়ের উইকেট নেওয়ার পর শোয়েব দৌড় দিলেন বাউন্ডারির দিকে। ওয়াসিম বলছিলেন, ‘ আরে ফিরে আসো পরের বলও তো করতে হবে। ‘ পরের বলেই শচীনকে দুর্ধর্ষ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন শোয়েব আখতার।
স্যুইংয়ের জন্য বেশ পরিচিতি থাকলেও ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠানকে ইয়র্কারের জন্য বিখ্যাত মানা হত না। তবে ২০০৪ সালের সিডনি টেস্টে অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে ক্ষিপ্র গতির দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন পাঠান। ক্যারিয়ারে অনেক উইকেট নিলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুর্দান্ত সেই ইয়র্কারটা পাঠানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্তই ছিল। নিজের অভিষেক সফরেই সেবার ম্যাথু হেইডেন, স্টিভ ওয়াহ, গিলক্রিস্টকে ফেরান তিনি।
ক্রিকেট দুনিয়ায় ইয়র্কার কিং হিসেবেই পরিচিত লাসিথ মালিঙ্গা। ইয়র্কারের সাথে পরবর্তীতে স্লোয়ার ইয়র্কার ভ্যারিয়েশনটা যোগ করেছিলেন তিনি। এই ডেলিভারিতেও ব্যাটারদের হরহামেশাই নাকানিচুবানি খাইয়েছেন এই তারকা পেসার। মালিঙ্গার জন্য ইয়র্কার দেওয়াটা যেন সবচেয়ে সহজ একটা বিষয়।
স্লোয়ার ইয়র্কার প্রসঙ্গে মালিঙ্গা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ যখন আপনি একটা স্কিল আয়ত্ত করবেন – আপনি এটা নিখুঁতভাবে করতে পারবেন এবং এটার সাথে বিশেষ কিছুও করতে পারবেন। যখন আপনি তরুণ বয়সে থাকেন – তখন আসলে শেখার অনেক সুযোগ থাকে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং স্কিল নিয়ে কাজ করতে হবে। ‘
শেন বন্ড স্বভাবগত ভাবে দুর্দান্ত ইয়র্কার করতে পারতেন। তীব্র গতিতে বল করতে পারতেন। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় অনেক আগেই। ২০০৬ সালে ক্রাইস্টচার্চে বিধ্বংসী এক ইয়র্কারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার ড্যারেন গঙ্গাকে বোল্ড করেছিলেন এই নিউজিল্যান্ডের পেসার। সেই দুর্দান্ত ডেলিভারিটি ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইয়র্কারগুলোর একটি হিসেবেই জায়গা করে নিয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক টেস্টে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা ওয়াকার ইউনিসকে কভারের উপর দিয়ে পর পর দুই বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকালেন। এরপরই দুর্দান্ত এক স্যুইং ইয়র্কারে লারার স্ট্যাম্প উপরে ফেলেন ওয়াকার; বিধ্বংসী ইয়র্কারে লারা মুখ থুবড়ে পড়েন ক্রিজে।