একটা ধকল গেল নিশ্চয়ই। খানিক মুখ লুকানোর মত অবস্থা। নাস্তানাবুদ হতে হতে হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হতশ্রী এক পারফর্মেন্স। প্রথম টেস্টে কোন রকমে মান বাঁচানো গেলেও দ্বিতীয় টেস্টে আর রক্ষা হল না। দশ উইকেটের বিশাল একটা হার সয়ে নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বোলিং-ব্যাটিং কোন ক্ষেত্রেই যেন লড়াইটা করা হয়ে ওঠেনি।
ব্যাটিং তো একেবারেই যাচ্ছেতাই। এমন পারফরমেন্স মানসিক অবসাদ বৈ আর কিছুই নিয়ে আসে না। টানা পাঁচটা দিন তপ্ত রোদে প্রতিদিনের নব্বই ওভার ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং শারীরিক অবসাদের কারণ হয় ঠিকই। তবে এমন লজ্জাজনক হার মানসিকভাবে খানিকটা হলেও বিপর্যস্ত করে তোলে। সে মানসিক ক্লান্তি কাটাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ছুটছেন বিদেশ পানে।
একটু বিরতি অবশ্য বড্ড প্রয়োজন। কেননা বাংলাদেশ এরপর চলে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পূর্ণাঙ্গ এক সিরিজ খেলতে।তার আগে অবশ্য ছুটিটা প্রয়োজনই ছিল। তাইতো সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে সবাই যাচ্ছেন নিজ নিজ নির্ধারিত গন্তব্যে। কেউ হয়ত ইউরোপ যাচ্ছেন তো কেউ যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে। কারও গন্তব্য আবার যুক্তরাষ্ট্র।
সাকিব অবশ্য যাচ্ছেন মেডিকেল চেকআপে সিঙ্গাপুরে। বিসিবির তত্বাবধানে বাৎসরিক চেকআপে যাচ্ছেন সাকিব। সেখান থেকে তিনি চলে যাবেন যুক্তরাষ্ট্র। পরিবারের সাথে খানিক সময় কাটিয়ে একেবারে ১০ জুন যুক্ত হবেন দলের সাথে। অন্যদিকে স্বপরিবারে দুবাই চলে গিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টেস্টের পঞ্চম দিনের রাতেই তিনি চলে যান সেখানে।
এর আগে অবশ্য তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা চলে গিয়েছেন সেখানটায়। তাছাড়া টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ তাইজুল ইসলামও যাচ্ছেন দেশের বাইরে। বিসিবি মারফত জানা গেছে তিনি খানিক অবসর সময় কাটাতে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে। এছাড়াও জাতীয় দলের আরেক উইকেট রক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানও ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন আমেরিকাতে। তাঁর উপর দিয়েও একটা ধকল যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে থাকছেন না মুশফিকুর রহিম। তিনি অবশ্য ছুটি নিয়েছেন পবিত্র হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে। তিনি এই ছুটির জন্যে বহু আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন বিসিবিকে। তাই একাদশে হয়ত সুযোগ মিলতে পারে সোহানের। আর তেমনটা ঘটলে তিনি হতে পারেন নিয়মিত। এর আগে মানসিক রসদ জোগাতেই তাঁর বিদেশ ভ্রমণ।
প্রথম সারির খেলোয়াড় ছাড়াও দুই প্রোটিয়া কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও অ্যালান ডোনাল্ড চলে গেছেন নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। দলের বাকিরা হয়ত নিজেদের মত করে ছুটি কাটাবেন, পরিবারকে সময় দেবেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের জন্যে এই ছুটি বড্ড বেশি প্রয়োজন। দলের কোন ডিপার্টমেন্টই আসলে নিজেদের সেরাটা দিতে পারছে না মাঠের ক্রিকেটে।
সম্ভবত সবার মস্তিষ্কই খানিকটা ভার হয়ে রয়েছে নানান ক্রিকেটীয় চিন্তায়। সেখান থেকে একটা বিরতি নেওয়া যেন ছিল অবধারিত। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তা ও সুস্থতা বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেটের সাথে এই মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমশ যুক্ত হচ্ছে, প্রধান এক ফ্যাক্টর হয়ে সামনে আসছে। ক্রিকেটটা তো আখেরে মস্তিষ্কেরও খেলা। শুধু গায়ের জোরে এখন আর ক্রিকেটটা খেলা যায় না।