নয়ে নয়া নজীর

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ইতিহাস ঠিক কতটা পুরোনো জানেন? ২৫০ বছর। হ্যাঁ, দুই শত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের প্রচলন। এই দীর্ঘ পথচলায় নানানরকম রেকর্ড হয়েছে। আবার তা ভেঙে নতুন করে গড়েছেন কেউ কেউ। তবে বিরল কিছু রেকর্ড এখনও যেন গড়া বাকি।

তেমনই এক রেকর্ড আজ হয়ে গেল ভারতের রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে। এক ইনিংসে গুণে গুণে ন’খানা ব্যাটার দেখা পেয়েছেন ন্যুনতম অর্ধশতকের। গেল ২৫০ বছরে এমন রেকর্ডের সাক্ষী এর আগে হয়নি বিশ্ব ক্রিকেট।

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে মুখোমুখি হয় বাংলা ও ঝাড়খণ্ড। টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ঝাড়খণ্ডের অধিনায়ক সৌরভ তিওয়ারি। সে সিদ্ধান্তই যেন কাল হল তাঁর দলের জন্যে। আর মাশুলটাও দিতে হবে হয়ত ম্যাচ যত এগোবে।

বাংলার ব্যাটাররা নিশ্চয়ই মাঠে নামার আগেই দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন যে আজ বড় সংগ্রহ গড়েই বিপাকে ফেলবেন সৌরভের ঝাড়খণ্ডকে। ইনিংসের শুরুটাও হয় দারুণ। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ সঙ্গী করেন অভিষেক রমনকে। দুইজনে মিলে স্কোরবোর্ডে জড়ো করে ১৩২ রান। শুরুতেই যেন ব্যাকফুটে চলে যায় ঝাড়খণ্ড।

প্রথম দিনের মধ্যাহ্ন বিরতির পর অভিমন্যু ফিরে যান ৬৫ রান করে। এর আগে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন অভিষেক। ততক্ষণে অভিমন্যু সঙ্গী হয়ে রানের খাতা খুলে ফেলেছিলেন সুদীপ কুমার ঘারামি। অভিমন্যু আউট হয়ে যাওয়ার পর অনুস্তুপ মজুমদারের সাথে জুটি গড়েন সুদীপ। এই জুটিটা চলে লম্বা সময় ধরে।

১১৭ রান করা অনুস্তুপ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন দলীয় ৩৭৫ রানে। মাঠে আবার নামেন অভিষেক। তবে তিনি নিজের ইনিংসটা খুব বেশি বড় করতে পারেননি। ৪১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া অভিষেকের ইনিংস থামে ৬১ রানে। কেবল ২০ রান যুক্ত করেছেন তিনি দলীয় সংগ্রহে। তাতে অবশ্য কিছুমাত্র ক্ষতি হয়নি বাংলার। বরং আরও বিশখানা রান বেড়েছে।

মনোজ তিওয়ারি নামার পর দলীয় রান ঠিক যখন ৪৫৫ তখন ১৮৬ করে আউট হয়ে যান সুদীপ। এরপর মনোজ তিওয়ারি অভিষেক পোরেলকে সাথে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন। দুইজনই তুলে নেন অর্ধশতক। বাংলার রান তখন পাহাড় সমান। দলীয় ৫৬৪ রানের মাথায় ৬৮ করা অভিষেক পোরেল আউট হয়ে যান। তখনও একপ্রান্তে মনোজ দাঁড়িয়ে।

এরপর শাহবাজ আহমেদ এসে রেকর্ডের আরও একটু কাছে নিয়ে যান পুরো বাংলা দলকে। তিনিও তুলে নেন অর্ধশতক। ৭৩ রানে মনোজ তিওয়ারি ও ৭৮ শাহবাজ আউট হওয়ার পর শেষ জুটি গড়েন শয়ন মন্ডল ও আকাশ দ্বীপ। এই দুই ব্যাটারও তুলে নেন অর্ধশতক। দুই জনেরই যখন রান ৫৩ তখন বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু ইনিংস ঘোষণা করেন।

নবম উইকেটে নামা আকাশের ১৮ বলে ৫৩ রানের সুবাদে বাংলার সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় প্রথম ইনিংসে ৭৭৩ সাত উইকেট হারিয়ে। বাংলার খেলোয়াড়রাও হয়ত বিশ্বাস করেননি যে বিরল এক রেকর্ডের সাক্ষী হতে চলেছেন তাঁরা। এমন সব রেকর্ডই তো আমাদেরকে ক্রিকেটকে আরও বেশি ভালবাসতে শেখায়।

এমন সব দলীয় রেকর্ডের দিনে নিশ্চয়ই আনন্দের কমতি থাকে না। এমন রেকর্ড তো আর হাতের নাগালে চাইলেই দেখতে পাওয়া যায় না। একেকটি ধূমকেতু। হয়ত আরও ২৫০ বছর বাদে দশ জন খেলোয়াড়ের অর্ধশতকের একটা হবে। ততদিন নিশ্চয়ই ক্রিকেট হারিয়ে যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link