ভক্তরা বলেন, তাঁর নাকি একটা সুপার পাওয়ার আছে। নীরবে, নি:শব্দে প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ বের করতে জানেন তিনি। সেই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রও বটে। কাগজে-কলমে এখনো তিনি একটা ফরম্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক।
আর বছরটা যখন ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় তখন তাকে তিন ফরম্যাটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরম্যাটের অধিনায়ক বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। তবুও অনেকদিন ধরেই জাতীয় দলে সাথে অনুশীলন করা হয়না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অনেকদিন ধরেই মিরপুরে এমন একাকি অনুশীলন চলছে এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের। ব্যাপারটা যেন রিয়াদের সাথে খানিকটা বেমানানই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি পরিচিত সাইলেন্ট কিলার হিসেবেই। ব্যাটের জাদুতেই ঠাণ্ডা মাথায় কুপোকাত করতেন প্রতিপক্ষকে। বাংলাদেশকে অনেক হারতে থাকা ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি। দলের প্রয়োজনে মিডল অর্ডারে নেমে নীরবে প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ বের করে আনতে পারার ক্ষমতার জন্যই সাইলেন্ট কিলার উপাধি পেয়েছিলেন।
দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টপ অর্ডার ব্যাটাররা যেখানে ব্যর্থ হতেন, হুড়মুড় করে যেখানে একের পর এক উইকেট পড়ে যেত, রিয়াদ সেখানে হাল ধরতেন। অনেকটা ঝড়ে বিধ্বস্ত নৌকার হাল ধরার মতো ছিল বিষয়টা।
বাংলাদেশ দলকে অনেক দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু টেস্ট খেলা নিয়ে অনেক নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে অনেকটা অভিমান নিয়েই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের পর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপর অনেকদিন দেখাতে পারেননি জৌলুস।
ওদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও খুব একটা ভালো সময় পার করছেন না তিনি। যদিও তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। এবছর তাঁর নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। তবে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে পুরনো সেই রিয়াদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা অনেকদিন ধরেই।
বিশেষ করে তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে আছে নানারকমের সমালোচনা। এমনকি অধিনায়ক হলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের মেজাজটা রিয়াদ ধরতে পারছেন না এমন তর্কও আছে। ফলে সবমিলিয়ে বেশ চাপের মধ্যেই আছেন এই অধিনায়ক।
যেমন ২০২১ সালে বাংলাদেশের হয়ে ২৬ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ২৩.৬১ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৯৬ রান। ২৬ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন মাত্র দুইবার। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাঁর স্ট্রাইকরেট। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয় নম্বরে ব্যাট করা রিয়াদের স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১০৫.৩০। ফলে তাঁর এই মন্থর ইনিংস গুলো ভালো ভাবেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।
ওদিকে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মনোযোগ দিয়েছে টেস্টের প্রতি। যেহেতু দল টেস্ট বেশি খেলছিল তাই সুযোগ হচ্ছিল না কোন ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিকল্পনা করার। অর্থাৎ অনেকদিন ধরেই কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে মাঠে নামতে পারেননি রিয়াদ। অন্যদিকে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেললেও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি ওভাবে।
সামনেই আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। টেস্টকে বিদায় জানানো রিয়াদ তাই আসন্ন সিরিজে শুধুমাত্র ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তে খেলবেন। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বের ভারটুকুও তাঁর কাঁধে।
প্রায় তিন মাস পর সরাসরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামাটা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য। রেস্টিং স্পোর থেকে বেড়িয়ে এসে এই পাণ্ডব ক্রিকেটের মাঠে আবারো তাঁর তাণ্ডব দেখাবেন এই প্রত্যাশায় আশায় বুক বাঁধতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। হয়তো, এটাই রিয়াদের শেষ সুযোগ। কিংবা বড়জোর এই বছরটাই। শেষটা কি পাণ্ডব তাণ্ডব দিয়েই রাঙিয়ে দিতে চাইবেন না!