একটু স্মৃতিতে জোর দিন। ঠাওর করতে পারেন শেষ কবে বাংলাদেশের খেলা আপনি টেলিভিশনে দেখেননি? না নিশ্চয়ই। ঘরের মাঠে খেলা হলে গ্যালারি থেকে কানায় কানায় পূর্ণ। আর ভিনদেশে খেলতে গেলে তো আমাদের চোখ সরেছে টেলিভিশনের পর্দা থেকে এমন কোন দৃশ্যও তো স্মরণ হবার কথা নয়।
কিন্তু নাটকীয়তার চরম পর্যায়ের কিছু একটা না ঘটলে আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ দেশে বসে দেখা যাবে না। হ্যা, অনেক জল্পনা-কল্পনা হলেও এ কথা মোটামুটি নিশ্চিত যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করবে না। এর পেছনে বেশ জটিলতা রয়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ সিরিজের সম্প্রচার স্বত্ব কিনে নিয়েছে টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিং (টিসএম) নামক এক কোম্পানি। বাংলাদেশে যেসব বেসরকারি টিভি চ্যানেল খেলা সরাসরি প্রচার করে থাকে তাঁদের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। আর মূলত সেই সিন্ডিকেটের সাথেই ব্যবসায়িক দ্বন্দ রয়েছে টিএসএম কোম্পানির।
সে জন্যে বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা টিএসএম এর কাছ থেকে ফিড কিনবে না। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের দর্শকদের টিভিতে খেলা দেখার কোন উপায় আর খোলা থাকছেন না। নিকট অতীতে এমন ঘটনার সম্মুখীন টাইগার ভক্তদের হতে হয়েছে বলেও মনে পড়ে না। বাংলাদেশে ক্রিকেট উন্মাদনা ঠিক কতটা তা তো আর নতুন করে বলার নেই। চ্যানেল নাইনের খেলা দেখানোর সম্ভাবনা থাকলেও সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিন পুরো দেশে যেন নেমে আসে অঘোষিত ছুটির দিন। সেদিন তারাতারি সব কাজ ছেড়ে সবাই যেন বসে পড়েন টিভি সেটের সামনে। তবে আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশের দর্শকদের এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। বাংলাদেশ সবে মাত্র তখন ক্রিকেট অঙ্গনে পথচলা শুরু করেছে। আর সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ এক টেস্ট সিরিজ দেখা যায়নি বাংলাদেশে বসে।
২০০৩ সালে বাংলাদেশ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে। সেটাই ছিল অজিদের মাটিতে বাংলাদেশের খেলা প্রথম ও শেষ টেস্ট সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড খানিকটা তাচ্ছিল্য করেছিল বৈ কি। বাংলাদেশের সাথে দু’টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুই অখ্যাত স্টেডিয়ামে। ডারউইন ও কেয়ার্নসে যে দুইটি ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল সেখানে এর আগে কখনো টেস্ট ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়নি।
সে সিরিজে নবাগত দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ডারউইনের প্রথম টেস্টটা বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ১৩২ রানের ব্যবধানে। সে ম্যাচে বাংলাদেশের জন্যে আশার প্রদীপ হয়ে হাজির হয়েছিল হাবিবুল বাশারের অর্ধশতক ও মাশরাফি বিন মর্তুজার শিকার করা তিন উইকেট।
পরের ম্যাচে আর বলার মত কিছুই নেই। দুইটি মাত্র উইকেটই শিকার করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। তবে তা প্রথম সারির কোন বোলার করেননি। ‘পার্টটাইমার’ হিসেবে বল করতে আসা সানোয়ার হোসেন পেয়েছিলেন সে দুইটি উইকেট। নিশ্চয়ই তেমন পারফরমেন্স টিভির পর্দায় দেখে খুব একটা স্বস্তি পেত না বাংলাদেশের সমর্থকেরা।
তবে সেখান থেকে একটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। উন্নতির হিসেব-নিকেশ একটু আড়ালে রেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিশ্চয়ই টেস্ট সিরিজ দেখতে বসত টাইগার সমর্থকেরা। দুই দশক আগের সে হতশ্রী পারফরমেন্সে হয়ত এখন দেখতে হয় না। আবার মাঝেমধ্যেই তার থেকেও খারাপ দিন দেখতে হয়।
তবে আধুনিকায়নের এই যুগে খবর নিশ্চয়ই পৌঁছে যাবে সর্বত্র। কিন্তু এমন সব দ্বন্দের বলি কেন সাধারণ দর্শক-সমর্থকদের হতে হবে সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।