লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক। বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে এনামুল হক বিজয় সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে। প্রায় তিন বছর বাদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা। রঙিন পোশাকে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চটা নিজের মত রাঙানোই এবার লক্ষ্য।
কথায় আছে, ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ’। টেস্ট সিরিজ শুরুর একদম অন্তিম মূহুর্তে ইনজুরির কারণে ছিটকে গেলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। স্কোয়াডে ‘ব্যাকআপ’ খেলোয়াড়ের সংখ্যাও খুব বেশি নেই। অগ্যতা রাব্বির ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে গেল বিজয়ের। টেস্ট দলেও অন্তর্ভুক্ত করা হল এই ওপেনারকে।
আট বছর পর টেস্ট দলে ফেরা। সাদা পোশাকে সবশেষ খেলেছিলেন ২০১৪ সালে। অভিষেকের পর মাত্র ৪ টেস্ট খেলেছেন। ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স নিয়ে আসলে বলার মত কিছুই নেই। ৪ টেস্টে মাত্র ৯ গড়ে করেছিলেন ৭৩ রান। সাদা পোশাকের ব্যর্থতা আর কাটিয়ে উঠার সুযোগ পাননি তিনি। প্রায় আট বছর আর টেস্টে ফেরা হয়নি তাঁর। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিক রানের ফোয়ারা ছুঁটিয়ে গেছেন বিজয়।
পরিশ্রম আর সাধনা নাকি কখনো বিফলে যায় না। সেটি যেন প্রমাণ করলেন বিজয়। বাজে ফুটওয়ার্কের সাথে অফ ফর্ম, সব মিলিয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান দারুণভাবে। গেল কয়েক মৌসুম ধরে ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ ছন্দে। সবশেষ বিপিএল ও ডিপিএলে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম করেন এই ওপেনার।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ৯ ম্যাচে ২৮০ রান করেছিলেন। পরে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে রেকর্ড গড়ে ১১৩৮ রান করেছেন ডানহাতি এই ওপেনার।
লাল বলের ক্রিকেটে বিজয়ের ক্যারিয়ার একদম ছোট। বিজয় অবশ্য একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটই তাঁর সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাট। ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের উপহারস্বরূপ সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলের মঞ্চে। ২৯ বছর বয়সী এক ক্রিকেটারের লক্ষ্য এখন একাদশে সুযোগ পেলেই নিজের সেরাটা দেওয়ার।
স্কোয়াডে ডাক পেলেও একাদশে সুযোগ পাবেন কি না সে নিয়েও সংশয় আছে। কারণ মূলত ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবেই থাকবেন তিনি। তবে ভাগ্য সহায় হলে হয়ত দেখা যেতে পারে সাদা পোশাকেও। আর সুযোগ পেলে এই ফরম্যাটেও দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তন করতে চাইবেন বিজয়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত বৈরি কন্ডিশনে ঠিক কতখানি নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
দীর্ঘ সময় ধরেই টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে একটা সংকট আছে। তামিম ইকবালের বিপরীতে লম্বা সময় ধরে খেলতে পারেননি কেউই। বিজয়ের অভিষেকের পর থেকে ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম থেকে হালের মাহমুদুল হাসান জয় – বেশ কয়েকজনকে সুযোগ দেওয়া হলেও ওপেনিংয়ে লম্বা পথ পাড়ি দিতে পারেননি কেউই।
ওপেনার সংকট, ব্যাকআপ ওপেনার বলতেও তেমন কেউ নেই। বিজয়ের জন্য তাই সুবর্ণ সুযোগ। সুযোগ পেলে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সটা টেনে আনতে চাইবেন জাতীয় দলের জার্সিতে। এখন শুধু অপেক্ষা সুযোগের। সাদা পোশাকে ক্যারিবীয়দের ডেরায় সেই সুযোগ পাবেন, নাকি অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। বিজয় নিশ্চয়ই একটা সুযোগের আশায় বুক বেঁধেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে সে যে তিনি নিজেও জানেন না।