বছরের শেষ দিকে বসতে চলেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। কড়া নাড়ছে দরজায়। কোন দেশ কেমন দল নিয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ায় তা নিয়ে বেশ সরগরম ক্রিকেট মহল। তবে ভারতের ক্রিকেট মহলের এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন গতি বিস্ময় উমরান মালিককে নিয়ে।
ভারতের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আরও একটি ‘প্রোডাক্ট’ উমরান মালিক। গতির ঝড় তুলে তিনি যেন নি:শ্বাস ফেলছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি শোয়েব আখতারের ঘারের উপর। ঠিক তাঁর ঘাড় নয়, তাঁর রেকর্ডের ঘারের উপর। ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম বলের রেকর্ড তো শোয়েব আখতারের দখলেই।
তবে সে ভিন্ন আলাপ। উমরান পারবেন কি না সেটা সময়ের বিবর্তনে আমাদের সামনে দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়েই যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে উমরান মালিক কি আদৌ ভারতের হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় উড়াল দেওয়ার সুযোগ পাবেন কি না। ইতোমধ্যে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে হওয়া সিরিজের দলের ছিলেন। তবে একাদশে সুযোগ মেলেনি তাঁর।
আবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হওয়া সিরিজে তাঁর খেলার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের এই তরুণ তারকাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন ডেল স্টেইন। কেননা ফ্রাঞ্চাইজিটির বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন স্টেইন। তিনি বলেন, ‘সে কঠোর অনুশীলন করে। তাঁর হাত থেকে বল কেড়ে নিতে হয় অনুশীলন থামানোর জন্যে।’
নিজেকে প্রমাণের অদম্য ইচ্ছে ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দেয়।
উমরানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাতাতে দেখতে চান স্টেইন। একসময় স্টেইনও তো গতির ঝড় তুলতেন বাইশ গজে নিয়ম করে। ‘আমি উমরানকে একটি ম্যাচ খেলতে দেখতে চাই। ১৫০ কিলো/ঘন্টা গতিতে যেকোন খেলোয়াড়কে বল করতে দেখা সত্যিই রোমাঞ্চকর। খুব বেশি বোলার সেটা করতেও পারেন না।’
তবে উমরানকে অনুশীলন করানো স্টেইন এখনই তাঁকে বড় কোন পরীক্ষার মুখে ফেলে দিতে চাইছেন না। তিনি জানেন উমরানের আরও খানিকটা সময় প্রয়োজন নিজেকে প্রমাণের জন্যে। তাছাড়া বিশ্বকাপ দলে তিনি সুযোগ পাবেন কি না সে নিয়েও খানিকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রোটিয়া পেসার।
স্টেইনের মতে, ‘তাঁকে(উমরান) বিশ্বকাপ দলে যুক্ত করাটা বেশ কঠিন। যদি তাঁকে দুই তিন ম্যাচ সুযোগ দেওয়া হয় এবং সে ১২ উইকেট নিয়ে ফেলতে পারে তাহলে তাঁকে ফেলে রেখে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া নিয়ে দ্বিধার সৃষ্টি হতে পারে। আবার আপনি যদি একজন বিশেষ বোলার হিসেবে কাওকে বিশ্বকাপে খেলাতে চান তবে উমরান একটা ভাল বিকল্প হতে পারে।’
কয়েকদিন আগেই ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফও ঠিক একই রকম কথাই যেন বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি উমরান মালিককে একদিন ভারতের হয়ে খেলতে দেখতে চাই। কিন্তু আমি চাই না সে তাড়াহুড়া করুক।’
তাছাড়া কাইফ রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশংসা করেছেন। কেননা দ্রাবিড় তাঁকে দলের সাথে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। দলের অন্দরমহলের পরিবেশটা তাঁর মত সম্ভাবনাময় তরুণের বোঝাটা জরুরি।
কাইফের সে কথার সাথে তাল মিলিয়ে স্টেইন বলেছেন, ‘দলের সাথে থাকাটা তাঁর (উমরান) জন্যে বেশ ভাল একটা দিক। সানরাইজার্সে থাকাকালীন আমি তাঁকে দেখেছি, সে কিছুটা লাজুক। সে ভারত দলের সাথে থেকে ক্রিকেট ড্রেসিংরুমের বিষয়গুলো জানতে পারছে।’ স্টেইনও চাচ্ছেন দলের সাথে পরিবেশ বুঝতে শিখুক উমরান। তাছাড়া কঠিন পরিস্থিতিতে সাজঘরের আবহাওয়া ঠিক কেমন হয় সেটা জানাও বেশ জরুরি।
তবে স্টেইন এ কথা আবারও স্বীকার করেছেন যে উমরান বেশ সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড়। তিনি দলের প্রয়োজনে যেকোন সময়েই বল করতে পারেন। তবে তাঁর আরেকটু সময়ের প্রয়োজন।
স্টেইন বলেন, ‘সে খুব সম্ভবত ম্যাচের সব পরিস্থিতিতেই বল করতে পারবে। তবে তাঁকে সানরাইজার্সে আমরা উইকেট শিকারি বোলার হিসেবেই ব্যবহার করেছি। তাঁকে আরও একটু শেখার সুযোগ দিতে হবে, তাঁকে খেলতে দিতে হবে।’
উমরান শেষমেশ অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে চড়বেন কি-না সে নিয়ে একটা ধুম্রজাল নিশ্চয়ই শেষদিন অবধি থেকে যাবে। তবে উমরান যে বিশেষ প্রতিভাবান, তা নিয়ে সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এখন পুরো বিষয়টা ভারতীয় নির্বাচকদের হাতে। তাঁরা নেবেন কি একটা ঝুঁকি?