সাকিব আল হাসানকে বিগ ব্যাশের একটি দল স্কোয়াডে নিতে চেয়েছিলো।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে বিগ ব্যাশের প্রায় পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকতে হবে সাকিবকে। ফলে দল পেলেও সাকিবের খেলা হতো কি না, এ নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু সেই অবধি আলোচনা যাওয়ার আগেই তাঁর নাম বিগ ব্যাশে ঢোকানোতেই আপত্তি করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইন্টিগ্রিটি বিভাগ।
এই ঘটনাটা কতদূর সত্যি, সে নিয়ে অবশ্য একটু সংশয় আছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার একটি মাত্র পত্রিকা তাদের সূত্র উদ্বৃত করে এই খবরটি জানিয়েছে। কোন দল সাকিবকে নিতে চেয়েছিলো বা ইন্টিগ্রিটি বিভাগ আসলে ঠিক কী বলে আপত্তি করেছে, এটা জানা যায়নি।
তবে সত্যিই যদি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিকতা বিভাগ এই ধরণের নীতি দেখিয়ে থাকে, সেটা তাহলে মারাত্মক স্ববিরোধী একটা কাজ হয়েছে। হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার এই সাধু হয়ে যাওয়াটা খুবই সন্দেহের ব্যাপার।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিক বিভাগ যখন এরকম একটা পদক্ষেপ নেয়, তখন মনে হতে পারে যে, তারা বুঝি কখনোই অন্যায়কারীদের কোনো প্রশ্রয় দেয় না। অথচ তাদের ইতিহাস একেবারেই বিপরীত।
এই বিগ ব্যাশ টুর্নামেন্টটার কথাই ধরা যাক।
মারলন স্যামুয়েলস সাকিবের তুলনায় অনেক ভয়াবহ অপরাধ করেও সাজা খাটার পর বিগ ব্যাশ খেলেছিলেন। ২০০৮ সালে স্যামুয়েলসকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলো আইসিসি। তার বিপক্ষে অভিযোগ ছিলো অত্যন্ত পরিষ্কার-তিনি অর্থ বা কোনো লাভের কিছু গ্রহণ করে খেলায় অন্যায় করেছিলেন।
২০১২ সালে এই স্যামুয়েলসকে মেলবোর্ন রেনেগেটস দলে ভেড়ায়। সেটা ছিলো বিগ ব্যাশের দ্বিতীয় মৌসুম। সে সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইন্টিগ্রিটি বিভাগ কোনো আপত্তি করেনি।
অথচ সাকিব আল হাসানের অপরাধ ছিলো স্যামুয়েলসের তুলনায় নিতান্তই শিশুসূলভ কাজ। সাকিব স্রেফ এক জুয়াড়ির সাথে কথোপকথনের কথা কতৃপক্ষকে জানাতে পারেননি বলে শাস্তি পেয়েছেন। আর তাকেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নৈতিকতার কথা বলে আটকে দিলো?
আচ্ছা, শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহ বা এই স্টিভ স্মিথের সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিকতা বিভাগ কোথায় ছিলো!
১৯৯৮ সালে শেন ওয়ার্ন ও মার্ক ওয়াহ এক বাজিকরের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। সে সময় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই খবর আইসিসিকে জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। নিজেরা জানার পর কিছু জরিমানা করে এই দু’জনকে ছেড়ে দিয়েছিলো। এ জন্য তাঁদের একটা ম্যাচও নিষিদ্ধ থাকতে হয়নি। তখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিকতা বিভাগের নীতিতে একটুও ধাক্কা লাগেনি।
১৯৯৯ বিশ্বকাপ ও ২০০৩ বিশ্বকাপের আগে আগে মাদক গ্রহণ ও অপকর্মের জন্য শেন ওয়ার্ন আবারও শাস্তি পেয়েছিলেন। তারপরও দলে ফিরে তার খেলায় কোনো আপত্তি করেনি অস্ট্রেলিয়ার নৈতিক পুলিশ।
এমন ছোটবড় উদাহরণ খুজলে আরও পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ অপকর্ম করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্টিভেন স্টিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা। তারা নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়া মাত্র জাতীয় দলে ফিরে এসেছেন। এমনকি তাদের জাতীয় দলে ফেরানোর লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা চলা অবস্থায়ও নানা ধরণের কর্মকান্ড চালিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
এখন অস্ট্রেলিয়ায় আলোচনা হচ্ছে যে, স্মিথকে আবারও অধিনায়ক করা হতে পারে। বিশেষ করে টিম পেইন এরকম ব্যর্থ হতে থাকলে আবার স্মিথকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। খোদ মার্ক টেলর এই প্রস্তাব করেছেন।
টেলরের সেই প্রস্তাবেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কোনো আপত্তি করেছে বলে শোনা যায়নি। এ সময় তাদের নৈতিকতা ঠিক কাজ করছে না।
সাকিবের ঘটনাটা সত্যি হলে একটা কথাই বলতে হয় যে, আমাদের দোষটা তাদের কাছে একটু বেশিই। সেই দুর্বলের ওপরই নৈতিকতার প্রয়োগটা বেশি হয়।