জল্পনা-কল্পনার এশিয়া কাপ

দোরগোড়ায় চলে এসেছে এশিয়া কাপ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেটে এশিয়ার সেরা হওয়ার টুর্নামেন্টটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এশিয়া কাপের এবারের পনেরোতম আসরটির আয়োজক দেশ হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কার।

কিন্তু লঙ্কানদের দেশে তো চলছে তুমুল লঙ্কাকান্ড। তাই হয়তো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নতুন এক গুঞ্জন। ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে শ্রীলঙ্কার বদলে বাংলাদেশকে এশিয়া কাপ আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দিবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। যদিও এইরকম খবর ততক্ষণ অব্দি ভিত্তিহীন, যতক্ষণ পর্যন্ত না এসিসি থেকে এমন কোন নির্দেশনা আসছে।

কিন্তু ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা (এসএলসি) এশিয়া কাপ আয়োজনের ব্যাপারে এখন অব্দি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। দেশটিতে এই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রিকেট বোর্ড কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে ডেকে এনেছিল সিরিজ খেলতে। আবার এদিকে অজিদের সাথে সিরিজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই, গেল বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে পা রেখেছে বাবর আজমের দল।

১৬ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডকে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজনের নেপথ্যে সাহস দিচ্ছে ঘরের মাটিতে সফল এই সিরিজ দুটি।

যদিও এসএলসির সচিব মোহন ডি সিলভা বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি বলতে পারি যে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া কাপ আয়োজনের ব্যাপারে আমরা ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। সদ্যই আমরা অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আয়োজন করলাম, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজও আয়োজন করবো।’

এদিকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে এই টানপোড়েনের মুহূর্তে পাশে পাচ্ছে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সাফ জানিয়েছে, দেশটিতে চলমান অশান্তি হওয়া সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার এশিয়া কাপের আয়োজক হওয়ার প্রস্তাবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাদের সমর্থন করবে।

পিসিবি’র একটি সূত্র জানায় বোর্ডের চেয়ারম্যান রমিজ রাজা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন এশিয়া কাপ যেন শ্রীলঙ্কায়ই অনুষ্ঠিত হয় এই ব্যাপারে জোর তদবির করবে পিসিবি।

কিন্তু বাস্তবে দিন দিন শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ফের দেশটিতে জারি করা হয়েছে জরুরী অবস্থা। প্রবল জনরোষে ও বিক্ষোভের জেরে রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য চলছে বিক্ষোভ।

দেশটিতে চলছে প্রবল জ্বালানির অভাব, তেলের অভাব ও খাদ্যের অভাব। চলছে না গাড়ি, থমকে আছে সাধারণ জনজীবন। পুলিশের বন্দুক, কাঁদুনে গ্যাস উপেক্ষা করে রাস্তায় বিক্ষোভে সাধারণ মানুষ। পথে পথে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনীরীতিমতো গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থা দ্বীপটিতে। এমতাবস্থায় আদৌও এশিয়া কাপ আয়োজন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

বাংলাদেশে এশিয়া কাপের ভেন্যু পরিবর্তন হয়ে আসবে কিনা সে গুঞ্জনের ব্যাপারে বিসিবির মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু জানিয়েছেন যে এসিসি চাইলে তবেই আয়োজন করা যাবে কিনা তা নিয়ে ভাববে বিসিবি।

তাছাড়া বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন স্থানীয় গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আসলে এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা আয়োজন করবে না এমন কথা তারা বলেনি। এমনকি এসিসিও এ বিষয়ে কোন কিছু বিসিবিকে জানায়নি। যদি শ্রীলঙ্কা আয়োজন করতে না পারে তাহলে নতুন ভেন্যু কী হবে সেটির সিদ্ধান্ত নিবে এসিসি। যদি বাংলাদেশকে তারা প্রস্তাব করে তাহলে আমরা ভাববো।

তার মানে এখন অব্দি ধরে নেয়া যায় শ্রীলঙ্কাতেই আয়োজিত হবে ছয় জাতির এশিয়া কাপ। যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্বান্তটা শেষমেশ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত। এসিসির ঘোষণা না আসা অব্দি গুঞ্জনে কান না দেয়াই শ্রেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link