বলিউড পাড়ায় হৈচৈ। লোলিত মোদি নামের একজনের সাথে সাবেক মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেনের প্রেমের গুঞ্জনে রীতিমতো কেঁপে উঠেছে গণমাধ্যম। বৃহস্পতিবার লোলিত মোদি নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবিসহ একটি পোস্টে তাঁর ও অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের সম্পর্কে থাকার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু কে এই ললিত মোদী? কি তাঁর পরিচয়? এই ব্যক্তির পুরো পরিচয় জানলে নিশ্চিত চমকে উঠবেন আপনিও। আসলে তিনি ভারতের ক্রিকেটের এক আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র।
পুরো নাম লোলিত কুমার মোদি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর উত্থানের সাথে তাঁর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তাঁর হাত ধরেই আইপিএলের জন্ম, পরিচিতি ও বিস্তার। আজ যে আইপিএল নামক ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এতো জৌলুস তা তাঁর মাথা থেকেই এসেছে।
লোলিত মোদির জন্ম ‘মোদি এন্টারপ্রাইজ’ এর মালিক ধনকুবের কৃষাণ কুমার মোদির ঘরে। রীতিমতো সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা মোদি বেশ অশান্ত বালকটি ছিলেন। ছেলের কাজকর্মে অতিষ্ঠ বাবা লোলিতকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সেখানেও তিনি সুবোধ ছেলেটি হয়ে দিনানিপাত করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরার সময়ে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে দেশে ফিরে আস্তে বাধ্য হন তিনি। দেশে ফিরে কিছুকাল বাবার ব্যবসায় মনোনিবেশ করে ধীরে ধীরে ক্রিকেটাঙ্গনে যুক্ত হয়েছেন।
একসময় সুকৌশলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে মোদি রাতারাতি আরসিএ সভাপতি হিসেবে বিসিসিআইয়ের সদস্য হয়ে যান। বিসিসিআইয়ের সদস্য হওয়ার পরপরই তৎকালীন সভাপতি জগমোহন ডালমিয়াকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ’ নামে সীমিত ওভারের একটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাব দেন, যেখানে বিদেশিরাও খেলতে পারবেন। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেন নি।
কিন্তু মোদির মাথায় ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ভূত বেশ ভালো করে চেপেছিলো। তিনি তখন কংগ্রেসনেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ডালমিয়াকে বোর্ড থেকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি নিজে গছিয়ে নেন বিসিসিআইর সহ–সভাপতির পদটি।
কিন্তু ততদিনে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) নামে একটি টুর্নামেন্ট মাথা তুলে ফেলেছে। তাঁর নিজের পরিকল্পনা অন্য কেউ বাস্তবায়ন করে ফেলার ঘটনায় জেদ চেপে গিয়েছিল তাঁর। তারপর মোদি আইপিএল এর যাত্রা শুরু করেন। মোদির জোড়া লক্ষ ছিল এসেল গ্রুপের মালিক সুভাষ চন্দ্রের আইসিএলকে জৌলুশহীন করা ও বিপুল টাকা কামাইয়ের করা। সেখান থেকেই ক্রিকেট দুনিয়ায় শুরু হয় ‘লোলিত মোদি যুগ’ আর তাঁর আইপিএলের জয়জয়কার।
মোদি ২০০৫ এর পরবর্তী সময়কালে শুধু ভারতীয় ক্রিকেটই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের ও অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে তিনি সেই সময়ে অন্যতম ক্ষমতাধর ক্রীড়াব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার জরিপে একসময় তিনি ভারতের ৩০ তম ক্ষমতাধর মানুষ ছিলেন! প্রচন্ড ক্ষমতাবলেই হয়ত মোদি মারাত্মক বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। ২০১০ এর দিকে বিরোধে জড়িয়ে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সরকারের সাথে। বহিষ্কৃত হলেন বিসিসিআই এর পদ থেকেও। তাতে আইপিএলের চেয়ারম্যানের পদটাও চলে যায়।
দল কেনাবেচায় কারচুপি, বেনামে আইপিএল দলের মালিকানা নেওয়া, প্রচারস্বত্বে অস্বচ্ছতা, অবৈধ লেনদেন, আয়করে ফাঁকি ইত্যাদি একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে তাঁর দিকে। এরপর তিনি পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।
কিন্তু তিনি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলেও তাঁর উদ্ভাবিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও জমজমাট ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ। বিশ্বের সর্বাধিক দেখা ক্রিকেট লিগও এটি। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে এসেছেন অনেক ভারতীয় তারকা।
ধরেই নেয়া হয় যে, আইপিএলে ভালো পারফর্ম করে নজর কাড়তে পারলে, ভারতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পাবেনই। তাছাড়া আইপিএলের মঞ্চ ক্রিকেটারদের সামর্থ্য প্রমাণের গুরুত্বপূর্ণ একটি আসর। মুদ্রার ওপিঠে আবার জুয়া, ম্যাচ ফিক্সিং, কোটি কোটি টাকার ফ্রাঞ্চাইজি রাজনীতি ইত্যাদি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তবুও এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, ক্রিকেটবিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণের নেপথ্যের নায়ক সেই সুস্মিতা প্রেমিক লোলিত মোদিই।