তারকা নির্মাণের কারিগর

শিক্ষক যদি শিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর হন, তাহলে একজন ক্রিকেট কোচ হলেন ক্রিকেট দল গড়ার কারিগর।  ক্রিকেটের ‘অ আ ক খ’ থেকে শুরু করে একেবারে জীবনের প্রথম দশায় যে মানুষটি ঘষেমেজে একেকজন ভবিষ্যতের তারকা ক্রিকেটার তৈরী করে দেন, তাদের স্থান আজীবন ওইসব ক্রিকেটারের জন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ক্রিকেটারকে অভিজ্ঞ কোচরা খুঁজে বের করেছিলেন। যারা তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে দেখেছেন এবং তাদেরকে সেরা সংস্করণে গড়ে তুলেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন গুরু-শিষ্যের অহরহ গল্প রয়েছে। এসব পথপ্রদর্শকরা ক্রিকেটের সুপারস্টার তৈরী করে দেওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন কিন্তু তারা নিজেরাই খ্যাতি থেকে দূরে থাকেন। জেনে নেয়া যাক কয়েকজন বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটারদের গুরু-শিষ্যের গল্পগুলি। 

  • বিরাট কোহলি – রাজকুমার শর্মা 

বিরাটের বাবা মারা যাওয়ার পরে, কোচ রাজকুমার শর্মা যুবকের জীবনে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন। কোচ শর্মা প্রতিভার এই আগ্নেয়গিরিটিকে সর্বোত্তমভাবে তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

বিরাট শীঘ্রই ভারতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাটারে পরিণত হন। ২০১৪ সালে, এই ব্যাটসম্যান শিক্ষক দিবস উপলক্ষে তার কোচকে একটি নতুন একটি স্কোডা র‌্যাপিড গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।

  • আশীষ নেহরা – তারাক সিনহা 

তারাক সিনহা দিল্লির কোচিং সার্কিটে একটি বিখ্যাত নাম। মাস্টার শিখর ধাওয়ান, আঞ্জুম চোপড়া, আকাশ চোপড়া, ঋষাভ পান্ত এবং আশীষ নেহরার মত ছাত্রদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। একদিন নেহরা সনেট ক্লাবে কোচ সিনহাকে খুঁজে পেলেন না।

তখন তিনি জানতে পারলেন যে, সিনহা একটি থাকার জায়গার খোঁজে বের হয়েছেন। এরপর এই ফাস্ট বোলার তার কোচ ভাড়া বাড়িতে থাকতেন শুনে, কোচের জন্য একটি নতুন ফ্ল্যাট কিনে উপহার দেন তারাক সিনহাকে।

  • মহেন্দ্র সিং – কেশব ব্যানার্জি 

ছোট ধোনির ফুটবলে দারুণ আগ্রহ ছিল। গোলরক্ষক হিসাবে তাঁর পারফরম্যান্স স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক কেশব ব্যানার্জিকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, কোচ ধোনিকে ক্রিকেটের উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলতে উপদেশ দিয়েছিলেন।

তাঁর বদৌলতেই ভারতীয় ক্রিকেট ধোনির মতো নায়ককে খুঁজে পেয়েছে। কালক্রমে তিনি বনে যান সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষকদের একজন। ২০১১ সালে ব্যানার্জিকে কি উপহার চান জিজ্ঞেস করলে, তিনি ধোনিকে বলেছিলেন যে তিনি ভারতের বিশ্বকাপ জেতা দেখতে চান। দুই এপ্রিল ২০১১ তারিখে ধোনি তার শিক্ষকের ইচ্ছা পূরণ করে ভারতকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন।

  • হার্দিক পান্ডিয়া – জিতেন্দ্র সিং 

অতি সাধারণ পটভূমি থেকে উঠে আসা হার্দিক পান্ডিয়া বর্তমানে ভারতের অন্যতম প্রধান ক্রিকেটার। এই অলরাউন্ডার তার পাওয়ারহিটিং এবং পেস বোলিং উভয় দক্ষতার বিরল সমন্বয়ের জন্য বিখ্যাত। এরূপ নৈপুণ্যের নেপথ্যে অবদান রয়েছে তাঁর কোচ জিতেন্দ্র সিংয়ের।

হার্দিক পান্ডিয়া যখন ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ফিরে আসেন, তখন তিনি ক্রিকেট একাডেমিতে যান। তারপর তাঁর কোচ জিতেন্দ্র সিংকে একটি গাড়ির শোরুমে নিয়ে গিয়ে তাঁকে একটি নতুন গাড়ি উপহার দেন। হার্দিক ভাই ক্রুনাল পান্ডিয়াও এই জিতেন্দ্র সিংকে গুরু মানেন।

  • শচীন টেন্ডুলকার – রমাকান্ত আচরেকার 

শচীন টেন্ডুলকারের গল্পটি তাঁর কোচ রমাকান্ত আচরেকারকে উল্লেখ করা ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। বিস্ময়কর এই ব্যাটিং প্রতিভাকে তৈরি করতে এই কোচ দারুণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

শচীন নিজেও তার কোচের প্রশংসায় কমতি রাখেননি কখনো। বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জনের পরেও শৈশবের কোচের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখতেন। আচরেকার ২০১৯ এর জানুয়ারিতে মারা যান। শিষ্যদের কাঁধেই শেষযাত্রা হয় কিংবদন্তি এই গুরুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link