২০২১/২২ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা। সবমিলিয়ে ৬ ম্যাচে বার্সেলোনার সংগ্রহ ছিল ৭ পয়েন্ট। আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা খারাপ মনে না হতে পারে; কিন্তু যখন জানা যায় এই ৬ ম্যাচে মাত্র দুই গোল করেছে কাতালান ক্লাবটি, তখন বুঝতে বাকি থাকে না আক্রমণভাগ নিয়ে কতটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের।
আর তাই নতুন মৌসুমে পুরোনো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিয়ে আসা হয়েছে পোলিশ গোল মেশিন রবার্ট লেওয়ানডস্কিকে। এই স্ট্রাইকারের জন্য ট্রান্সফার ফি হিসেবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বার্সেলোনা, যা কি না ত্রিশ বছরের বেশি কোন ফুটবলারের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফি।
এছাড়া চার বছরের চুক্তিতে আছে বড় অংকের বেতন। অথচ আর্থিক ভাবে বার্সা প্রায় বিপর্যস্ত ছিল, বলতে গেলে ক্লাবের ভবিষ্যৎ বন্দক রেখে লেওয়ানডস্কিদের কেনার ব্যবস্থা করেছে তাঁরা।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে ব্লাউগানাদের অর্থ খরচের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবেন কি না রবার্ট লেওয়ানডস্কি। জাভি হার্নান্দেজের ট্যাকটিক্সের সাথে মানিয়ে নিয়ে আগের মত ভুরি ভুরি গোল করতে পারবেন সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ তারকা?
বার্সেলোনায় যোগদান করার সময় লেওয়ানডস্কি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি গ্রহণ করেছিলেন। বায়ার্ন মিউনিখের মত ক্লাব ছেড়েছিলেন এবং সেইসাথে প্যারিস সেন্ট জার্মেই, চেলসির মত পরাশক্তিদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা বোধহয়, বার্সেলোনা আসলে প্রস্তুত কি না রবার্ট লেওয়ানডস্কির জন্য।
এমন প্রশ্ন ওঠার মূল কারন লা লিগার ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে। খেলোয়াড়দের উচ্চ বেতনের কারনে বার্সেলোনা ইতোমধ্যে সেই ফেয়ার প্লে নিয়ম ভঙ্গ করেছে। নতুন মৌসুমে কেসি, ক্রিস্টেনসেন, রাফিনহা, লেওয়ানডস্কিদের রেজিস্ট্রার করতে চাইলে তাই দলের অন্য সদস্যদের বেতন কমাতেই হবে বার্সাকে। যদিও হুয়ান লাপোর্তার হাতে কিছুটা সময় আছে, তবু শঙ্কা থেকে যায় তিনি আদৌ লা লিগাকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন কি না।
যদি কোন ক্রমে লাপোর্তা এই কাজে ব্যর্থ হন, তাহলে কি রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেটি ভাবা যায় না৷ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর কাছে এখনও কাঙ্ক্ষিত ৩৪ বছর বয়সী রবার্ট লেওয়ানডস্কি যখন লাস ভেগাসে বার্সেলোনার জার্সিতে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন তখনও তিনি জানতেন না নতুন মৌসুমের জন্য সময়মতো সম্পূর্ণরূপে আনুষ্ঠানিক করা হয়েছে কি না।
রবার্ট লেওয়ানডস্কি বার্সেলোনার হয়ে আসন্ন মৌসুমে খেলতেন পারবেন – এটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যায় না।
উদাহরণ স্বরূপ, দানি আলভেজের কথা বলা যায়। গত জানুয়ারিতে বার্সেলোনাতে দ্বিতীয়বারের মত ফিরে আসার পরও তিনি ইউরোপা লিগের স্কোয়াডে জায়গা পাননি। যদিও সেই কারনটি আর্থিক ইস্যু ছিল না। তবে এমন কিছু এবারও ঘটতে পারে। এই গ্রীষ্মে সাইন করা নতুন কোন ফুটবলার লিগে হয়তো খেলার সুযোগ পাবেন না।
অন্যদিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রবার্ট লেওয়ানডস্কি রীতিমতো কিংবদন্তি। গোলসংখ্যায় শুধুমাত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং লিওনেল মেসি তাঁর সামনে রয়েছে। আবার ম্যাচপ্রতি গোলের হিসেবে আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি। ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে তাঁর পায়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বার্সেলোনা।
তাই এই টুর্নামেন্টে সেরাটা আদায় করে নিতে লা লিগায় হয়তো ৩৪ বছর বয়সী লেওয়ানডস্কিকে নিয়মিত বিশ্রাম দিবেন জাভি হার্নান্দেজ। কিন্তু এমন বিশ্রাম মোটেই পছন্দ নয় এই খেলোয়াড়ের। ২০১০ সালের পর থেকে ক্লাব ফিক্সচারের ৯৫% ম্যাচেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। আর এজন্য রোটেশনের ব্যাপারে দ্রুত কোচ এবং শিষ্য ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে ক্ষতিটা বার্সেলোনারই হবে।
বার্সেলোনার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো হলো রবার্ট লেওয়ানডস্কির জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এছাড়া তাঁর ফিটনেস ধরে রাখা, ইনজুরি প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ক্লাবের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সুবিধা প্রদান করতে হবে।
এই পোলিশ স্ট্রাইকার বিশ্বের অন্যতম ফিট ক্রীড়াবিদ। নিজের ডায়েট, দৈনন্দিন রুটিন ঠিক রাখার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছেন। তাই এসব ব্যাপারে ক্লাবকেও পাশে পাওয়ার আশা করতেই পারেন এই অভিজ্ঞ ফুটবলার।
সবমিলিয়ে ক্যাম্প ন্যু-তে রবার্ট লেওয়ানডস্কির জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাঁর জন্য ব্যয় করা অর্থের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। আবার ক্লাবকেও লেওয়ানডস্কির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।