গেল শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ভারতের প্রথম টি- টোয়েন্টি ম্যাচটি অনায়াসে ভারত জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করলো। ভারতের এই ম্যাচ জয়ের নেপথ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ছিল। প্রথমে ব্যাট হাতে অধিনায়ক রোহিত শর্মার দারুণ পারফরম্যান্স এবং ফিনিশারের ভূমিকায় দীনেশ কার্তিকের পারফর্ম্যান্স এবং শেষে ভারতীয় বোলাদের দাপটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ধস সবমিলিয়ে দারুণ এক জয় পেল ভারত। পাঁচ ম্যাচের টি– টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ভারতের কাছে ৬৮ রানে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৪.৫ ওভারে ৪৪ বলে ৬৪ রান করে রোহিত শর্মা ফিরে যাওয়ার পর ভারতীয় দলের রানের নৌকার হাল ধরে দারুণ ভূমিকা পালন করেছেন দীনেশ কার্তিক। সেই সময়ে ভারতের অবস্থান ছিল ১২৫ রান। দীনেশ কার্তিক ব্যাট করতে নামেন সাত নম্বরে। প্রথমে রবীন্দ্র জাদেজা ও পরে অশ্বিনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কার্তিক।
১৪.৫ ওভার থেকে ভারতের ইনিংসকে টেনে বাকী ৫.১ ওভারে ভারত সংগ্রহ করে আরও ৬৫ রান। ২০ ওভার শেষে ভারতের অবস্থান দাড়ায় ৬ উইকেটে ১৯০ রান। অর্থাৎ প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য টার্গেট দাড়ায় ২০ ওভারে ১৯১ রান।
দীনেশ কার্তিক একাই করেন ৪১ রান। মাত্র ১৯ বল খেলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে! চারটি চার এবং দুইটি ছয় দিয়ে কার্তিক তাঁর ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন। এই ম্যাচে দীনেশ কার্তিকের স্ট্রাইক রেট ছিল ২১৫.৭৮! ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা তাঁর এই অসাধারণ ইনিংসে মুগ্ধ হতে বাধ্য। একেবারে ‘পারফেক্ট ফিনিশার’ যাকে বলে, সেই দায়িত্বটাই তিনি যাথার্থভাবে পালন করলেন।
এইদিকে দীনেশ কার্তিক রেকর্ডবুকেও জায়গা করে নিলেন কালকের পারফরম্যান্স দিয়ে। আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান করলেন দীনেশ কার্তিক। ২০১২ সাল থেকে এই কীর্তিটা মহেন্দ্র সিং ধোনির দখলে ছিল। এম এস ধোনিকে পেছনে ফেলে সেই জায়গাটি দখল করলেন কার্তিক। আর তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জুটে দীনেশ কার্তিকের ঝুলিতে।
কার্তিকের ক্যারিয়ারটা থমকে গিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির কারণে। ধোনিকে টপকে যাওয়াটা আর হয়ে ওঠেনি কার্তিকের। ধোনি তাঁর ধীশক্তি আর ম্যাচের কঠিন মুহূর্তে অসাধারণ সব ইনিংসের কারণে মহেন্দ্র সিং ধোনি টিকে ছিলেন। লম্বা সময় ধরে দলের স্তম্ভ তিনিই ছিলেন। ভারতকে জিতিয়েছেন সম্ভাব্য সকল শিরোপা। তাই ধোনিকে একেবারে অগ্রাহ্য করবার সুযোগটা নেই। তিনি স্বমহীমায় ছিলেন দলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কার্তিক জানিয়েছেন, অধিনায়ক এবং গোটা দলের সমর্থন তাঁর সাথে ছিলো যার কারণেই তিনি এতটা হাত খুলে নির্ভয়ে খেলতে পারছেন। তিনি বলেন, “উইকেট একটু ভেজা ছিল। ফলে শুরুতে খেলতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সেট হয়ে যাওয়ার পর উইকেটের গতি বুঝতে পেরে কী ধরনের শট খেলব সেটা ঠিক করে নিয়েছিলাম।”
ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে এসে এমন ফর্ম বেশ উপভোগ করছেন কার্তিক। তিনি আরও বলেন, “ফিনিশারের ভূমিকা বেশ উপভোগ করছি। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই ভূমিকায় সব সময় সাফল্য পাব এমন নয়। তবে কোনও এক দিন ভাল খেলে যদি দলকে জেতানো যায়, তা হলে ভাল লাগে। এর জন্য অধিনায়ক এবং কোচের সমর্থন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা আমি ভাল ভাবেই পেয়েছি।”
অথচ এই দীনেশ কার্তিকই কিনা ভারতের হয়ে ২০১০-২০১৭ সময়কালে সাত বছরের মধ্যে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলার সুযোগ পান নি! তবে যাইহোক তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন আইসিসি টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য তাঁর দলীয় অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। ধারণা করা যায় এই ফিনিশারকে ছাড়া দল সাজানোর কথা ভাববেই না ভারত।