রাজশাহীর লোকাল শেন ওয়ার্ন

বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনের গুরু ওয়াহিদুল গনি একটা লাল বল তুলে দিচ্ছেন ছেলেটার হাতে। বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম লেগ স্পিনার গনি যেন লেগ স্পিন শিল্পটার একটা মশাল তুলে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের হাতে। ওয়াহিদুল গনি যেই ছেলেটাকে খুব যত্ন নিয়ে লেগ স্পিনটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁর নাম আতিক।

সেই রাজশাহী থেকে লেগ স্পিনার আতিক ঢাকায় চলে এসেছে শুধু এইটুকুর জন্যই। কোচ ওয়াহিদুল গনিকে নিজের বোলিংটা একটু দেখাবেন বলে। একটা সেশনেই লেগ স্পিনের এই গুরুর কাছ থেকে যদি কিছু একটা শিখে নেয়া যায় সেই আশায়। আগের রাতে ট্রেন ধরেছিলেন তবে টিকিট পাননি।

ফলে পুরোটা রাস্তা ট্রেনে দাঁড়িয়ে আসতে হয়েছে। এভাবেই প্রায় সাত-আট ঘণ্টার পথ পারি দিয়ে চলে এসেছেন ঢাকায়। কিন্তু ঢাকায় থাকবেন কোথায়, একটু বিশ্রাম নিবেন কোথায় সেসব কিছুই জানা নেই। অটো রিকশাচালক বাবা যে ছেলেকে শুধু ভাড়ার টাকাটা দিয়েই ঢাকায় পাঠাতে পেরেছেন।

তবে এসবকিছুই রাজশাহী থেকে ছুটে আসা আতিকের কাছে তুচ্ছ। তিনি শুধু জানেন দুপুরে আবাহনী মাঠে তাঁর বোলিং দেখবেন গুরু ওয়াহিদুল গনি। আতিক নিজের বোলিং দেখিয়েছেন, সারারাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢাকায় এসেও নিজের শিল্পটা দেখাতে ভুল করেননি। আতিকে লেগ স্পিন শিল্পে মুগ্ধ হয়েছেন কোচ। সেজন্যই আতিকের হাতে তুলে দিয়েছেন একটা লাল বল। হয়তো এই কোচ বুঝতে পারছেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের একজন লেগ স্পিনার কতটা প্রয়োজন।

আবাহনী মাঠে ওয়াহিদুল গনির কাছে ট্রায়াল দেয়ার পর কথা হচ্ছিল আতিক হাসানের সাথে। আতিক বলছিলেন,’স্যার একদিন আমার বোলিং দেখতে চেয়েছিল। সেজন্য রাজশাহী থেকে হুট করেই চলে আসা। টিকিটও পাইনি, তাই দাড়িয়েই আসতে হয়েছে। সারারাত জার্নি করে প্রথমে বল করতে একটু কষ্ট হচ্ছিল তবে পরে ভালোই বোলিং হয়েছে।‘

বোলিং দেখে কোচ ওয়াহিদুল গনি কী বললেন এমন প্রশ্ন করতে আতিক বলেন, ‘স্যার, বোলিং দেখে খুশি হয়েছে। কিছু স্কিল নিয়েও কাজ করার কথা বলেছেন। রাজশাহী গিয়ে সেসব নিয়ে কাজ করবো। স্যার, বলেছেন এসব নিয়ে কাজ করে আবার পরে দেখা করতে। এছাড়া স্যার বলেছেন চাইলে আমি ঢাকার এসেও খেলতে পারি।’

এতদূর থেকে ঢাকায় এসেছেন তাই কিছুদিন থেকে যাবার ইচ্ছে ছিল। এছাড়া কয়েকজন ক্রিকেটারের সাথে দেখা করার স্বপ্ন নিয়েই ঢাকায় এসেছিলেন আতিক। তবে ঢাকায় থাকার মত জায়গা বা টাকা সাথে না থাকায় পরের দিনই আবার রাজশাহী ফিরে যেতে হয়েছে। আতিককে।

এত কষ্ট করে ঢাকায় এসেছেন তবে একবার হোম অব ক্রিকেট ঘুরে যাবেন না তা তো হয়না। সেজন্যই আজ আতিক এসেছিলেন মিরপুরে কোন ক্রিকেটারকে বোলিং করা আশায়। তবে স্বাভাবিক ভাবেই মাঠে ঢোকার অনুমতি মেলেনি।

আতিক বলছিলেন, ‘মিরপুরে এসেছিলাম যদি বোলিং করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে মাঠে ঢুকতে পারিনাই। রাজশাহীতে বাংলা ট্র্যাকে সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ সুজন) আমাদের কোচ। স্যার তো দেশে নাই তাই দেখাও হলো না।’ ফলে খানিক মন খারাপ নিয়েই আবার রাজশাহীর ট্রেন ধরবেন। তবে এই ছোট্ট ঢাকা সফরে আতিকের প্রাপ্তিও যে অনেক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link