ছয় বলের রান উৎসব

ব্যাটিংবান্ধব পিচ, ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের মত বিভিন্ন সুযোগে রান বাড়িয়ে দেয়ার উপায় করে দেয়া হয় ব্যাটারদের। তাই সবার-ই লক্ষ্য থাকে ব্যাট হাতে বোলারদের শাসন করার। প্রতিপক্ষের সব বোলারকে না পারলেও অন্তত কয়েকটা ওভারে ‘বিগ হিট’ করে রান তুলতে বদ্ধপরিকর থাকে ব্যাটমস্যানরা।

গত কয়েক বছরে ক্রিকেটে বড়সড় একটি পরিবর্তন ঘটেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আগমন আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দাপটের পাশাপাশি দর্শকদের কথা চিন্তা করে এখন ম্যাচগুলোতে ব্যাটসম্যানদের সুবিধার দিকটি দেখা হয় বেশি। বিশ ওভারের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেখানে একসময় ১৬০ কিংবা ১৭০ করতে পারলেই জয়ের পথে এগিয়ে থাকতো দলগুলো, এখন সেখানে ১৮০ রানের পুঁজি থাকলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না।

ব্যাটিংবান্ধব পিচ, ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের মত বিভিন্ন সুযোগে রান বাড়িয়ে দেয়ার উপায় করে দেয়া হয় ব্যাটারদের। তাই সবার-ই লক্ষ্য থাকে ব্যাট হাতে বোলারদের শাসন করার। প্রতিপক্ষের সব বোলারকে না পারলেও অন্তত কয়েকটা ওভারে ‘বিগ হিট’ করে রান তুলতে বদ্ধপরিকর থাকে ব্যাটমস্যানরা।

কিন্তু কখনো কখনো নির্দিষ্ট একটি ওভারে এত বেশি রান চলে আসে যা অবাক করে দর্শকদের, আলোড়ন তুলে রেকর্ডের পাতায়। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের এমন খরুচে ওভারগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন।

  • যুবরাজ সিং বনাম স্টুয়ার্ট ব্রড (৩৬ রান)

২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং ইংল্যান্ড। ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ হঠাৎ স্লেজিং করে বসেন ভারতের যুবরাজ সিং-কে। কিন্তু স্লেজিংয়ের জবাবে যুবরাজ যা করলেন সেটি আগে অনুভব করলে হয়তো মুখ বন্ধ রাখতেন তিনি।

স্লেজিংয়ের পরের ওভারে তরুণ স্টুয়ার্ট ব্রডকে রীতিমতো অপদস্ত করেন যুবরাজ। কথার মারপ্যাঁচে নয়, বরং ব্যাট হাতে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে ব্রডকে বিধ্বস্ত করেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সেবারই প্রথম ছয় বলে ছয় ছক্কার ঘটনা ঘটেছিল। আজ পর্যন্ত এটিই এই ফরম্যাটের সবচেয়ে খরুচে ওভার।

  • কাইরেন পোলার্ড বনাম আকিলা ধনাঞ্জয়া (৩৬ রান)

পথটা দেখিয়েছিলেন যুবরাজ; প্রায় এক যুগের বেশি সময় পর তাঁর পথে হাঁটলেন কাইরেন পোলার্ড। যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছয় বলে ছয়টি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়লেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এমন অনবদ্য কীর্তি গড়েন পোলার্ড।

সেদিন লঙ্কান স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার ছয়টি বলই গ্যালারিতে ফেলেন তিনি। মজার ব্যাপার যে, আকিলার সে-ই ওভারটিও ছিল ইনিংসের ষষ্ঠতম। এর পরেই অন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক ওভারে সবথেকে বেশি রান তোলার ক্ষেত্রেও যুবির কীর্তি ছুঁয়ে ফেলেন কাইরেন।

একইভাবে এক ওভারে সবচেয়ে খরুচে বোলারের রেকর্ডে স্টুয়ার্ট ব্রডের সঙ্গী হন আকিলা ধনাঞ্জয়া। মজার ব্যাপার হল, সেই একই ম্যাচে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন ধনাঞ্জয়া।

  • রস টেলর এবং টিম সেইফার্ট বনাম শিভাম দুবে (৩৪ রান)

২০২০ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল ভারত। কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচে লজ্জার এক রেকর্ড গড়েন ভারতীয় অলরাউন্ডার শিভাম দুবে। সেই ম্যাচে ভারতের হয়ে দশম বোলারে বল করতে আসেন দুবে। তার ওভারে রস টেলর আর টিম সেইফর্ট মোট ৩৪ রান নেন।

শুরুর দুটি বলে টিম সাইফর্ট দু’টি ছক্কা মারেন। তৃতীয় বলে আসে আরেকটি চার। চতুর্থ বলে তিনি সিঙ্গল নেন আর পঞ্চম বলটি নো বল ছিল, সেই বলে আবার রস টেলর ওভার বাউন্ডারি মারেন। দ্বিতীয়বার পঞ্চম বলে রস টেলর ছক্কা মেরে দেন। ষষ্ঠ বলে আবারো রস টেলর গ্যালারিতে পাঠান বল। আর সব মিলিয়ে শিভামের এক ওভারে ৩৪ রান আসে।

  • রায়ান বার্ল বনাম নাসুম আহমেদ (৩৪ রান)

স্পোর্টিং বা ফ্ল্যাট উইকেট নাসুম আহমেদের পারফরম্যান্স কিছুটা বাজে। তবে এতটা বাজে হবে সেটা নিশ্চয় নাসুম নিজেও ভাবেননি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে লজ্জাজনক এক রেকর্ড গড়েছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।

জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল তাঁর এক ওভারে পাঁচটি ছয় এবং একটি চারের সাহায্যে মোট ৩৪ রান তুলে নেয়। তবে ওভারের একমাত্র চারটিও অল্পের জন্য ওভার বাউন্ডারি হয়নি। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এখন বাংলাদেশীদের মাঝে নাসুম আহমেদ-ই সবচেয়ে খরুচে বোলার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...