প্রায় ৮৭ বছর ধরে ভারত খেলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেই ১৯৩২ সাল থেকে যাত্রা শুরু ভারতীয় ক্রিকেটের। দীর্ঘ এই চলার পথে কত সহস্রাধিক স্মৃতির জন্ম দিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ক্রিকেট পাগল একটা দেশের সমর্থকদের একেবারে চোখে লেগে রয়েছে বেশ কিছু মুহূর্ত।
বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে দেশটির ক্রিকেট সমর্থকরা ভুলতে পারেনি। এখনও যেন সেসব মুহূর্তগুলো উজ্জ্বল, স্পষ্ট ও রঙিন। এমন সব মুহূর্তগুলো নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।
- ধোনির ছক্কায় বিশ্বকাপ জয় (২০১১)
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখেছিল ভারত। এরপর আবার লম্বা একটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁদের। বছরের হিসেবে সেটা ২৭ বছর। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল ভারত। আর সেবারই বিশ্বকাপ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ যেন কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছিল না টিম ইন্ডিয়া। বিশেষ করে ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ভারতের হয়ে সব কয়টি সম্ভাব্য শিরোপা জেতা অধিনায়ক নিজের অর্জনের মুকুটে আরও একখানা পালক যুক্ত করেছিলেন ২০১১ সালে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ফাইনালে নুয়ান কুলাসেকারেকা মারা ছক্কাটা খুব জলদি ভুলে যাবার মত নয়। স্লটে পাওয়া বলটা সজোরে চালিয়ে লং অন অঞ্চল দিয়ে করেছিলেন মাঠছাড়া। আর পুরো ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম সেদিন ভেসেছিল আনন্দ উল্লাসে।
- লর্ডসের বারান্দায় কপিল দেবের হাতে বিশ্বকাপ (১৯৮৩)
একেবারে ‘আন্ডারডগ’ হিসেবেই ইংল্যান্ডে পা রেখেছিল ভারত। শোনা যায় বিশ্বকাপে দল পাঠানোর খুব একটা ইচ্ছেও ছিল না ক্রিকেট বোর্ডের। তবুও গেল দল। একজন মানুষ হয়ত বিশ্বাস করেছিলেন যে ভারত কিছু একটা করবে ১৯৮৩ সালের সে বিশ্বকাপে। অধিনায়ক কপিল দেব সে বিশ্বাস থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে। একেবারে শুরু থেকে দলকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন।
দলের কঠিন সময়ে হাল ধরেছেন। দলকে বেশ কিছু ম্যাচে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই অলরাউন্ডার কপিল দেব অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দুর্দান্ত পারফরমেন্সের বদৌলতে সেবার সবাইকে চমকে দিয়ে শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলেছিল ভারত। আর লর্ডসের বারান্দায় কপিল দেবের হাতে উঠেছিল প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি। সে দৃশ্য তো আর চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
- ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেটের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৪-৮৫)
১৯৮৪-৮৫ সালে আয়োজিত হয় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেট। সেই টুর্নামেন্টে বিশ্বের বাঘা বাঘা দল অংশ নিয়েছিল। তবে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয় করা ভারত দল ছিল অন্যরকম ছন্দে। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে পৌঁছেছিল। ফাইনালে গিয়ে দেখা হয় চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের সাথে। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারিয়েই সেবার শিরোপা নিজেদের করে নেয় ভারত।
- প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় (২০০৭)
ইতিহাসের প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। বহু বাঁধা পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তরুণ মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত দল। তারুণ্য নির্ভর সে দলের শিরোপা জয়ের কোন আশাই যেন ছিল না। তবে আবারও বিশ্বকে হতভম্ভ করে শিরোপা নতুন সংস্করণের প্রথম আসরের শিরোপাটা নিজেদের ঘরে তুলেছিল ভারত। তাও আবার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে হারিয়ে।
- শেবাগের প্রথম টেস্ট ত্রিশতক (২০০৪)
মারকুটে ব্যাটার হিসেবে বরাবরই বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। তবে তাই বলে যে তিনি টেস্ট ক্রিকেটটা একদমই খেলতে জানতেন না তা কিন্তু নয়। ভারতের হয়ে প্রথম কোন খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে ত্রিশতক করা ব্যাটার কিন্তু সেই বীরেন্দ্র শেবাগই। ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে তিনি সে কীর্তি গড়েন। ত্রিশতকটা তিনি করেছিলেন নিজের স্টাইলে। ছক্কা হাকিয়েই তিনি পার করেছিলেন মাইলফলক।
- শচীনের প্রথম ওয়ানডে দ্বিশতক (২০১০)
‘মাস্টার ব্লাস্টার’ কিংবা ‘লিটল মাস্টার’ যেকোন নামেই আপনি ডাকতে পারেন শচীন টেন্ডুলকারকে। তাঁর মত কিংবদন্তি ব্যাটারের দেখা হয়ত আর কখনোই পাবে না ভারত। ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে শতকের শতক হাঁকানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। প্রতিনিয়ত যেন তিনি ছাপিয়ে যেতে চেয়েছেন নিজেকে। তেমনই এক দিন এসেছিল ২০১০ সালে।
স্বাগতিক হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দিয়েছিল ভারত। তাঁদের বিপক্ষে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন শচীন। তুলে নেন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তিগত দ্বিশতক। ১৪৭ বল খেলে ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন লিটল মাস্টার। রেকর্ড বইয়ে নিজের নামটি একেবারে গেঁথে রেখে যাওয়ার চেষ্টাই করে গেছেন তিনি।