‘ফাটাকেষ্ট’ সাকিব

জলঘোলা হল, সমালোচনা হল। দিনশেষে তাঁর হাতেই চলে গেল দলের দায়িত্ব। কলকাতার এক বিখ্যাত সিনেমার কথাই যেন বারবার মনে পড়ে যায়। ‘ফাটাকেষ্ট খবর দেখে না, খবর পড়ে না, খবর তৈরি করে।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটের ফাটাকেষ্ট নি:সন্দেহে সাকিব আল হাসান। তাঁকে ঘিরেই তো সকল খবরের আনাগোনা।

সাম্প্রতিক সময়ে জোর গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের ভয়ংকর বাজে পরিস্থিতির মাঝে অধিনায়কত্বে  আসতে চলেছে পরিবর্তন। সে পরিবর্তনটায় প্রথম নাম হিসেবে যুক্ত হয় নুরুল হাসান সোহানের নাম। তবে সেটা মূল গুঞ্জন নয়। সাকিব হবেন আরেক দফা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক গুঞ্জনটা তেমনই ছিল।

অবশেষে হলও তাই। তবে এর আগে যুদ্ধ হয়ে গেল। সাকিব আর বিসিবি দুইজন মুখোমুখি লড়াইয়ে। বেটউইনার নামক একটা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন সাকিব। আর তাতেই চটেছিল বিসিবি। বিসিবি তো বটেই দেশের আইনেও যেকোন ধরণের জুয়ার সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ।

তবুও সাকিব কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার সুযোগটা লুফে নিলেন। যদিও তাঁর ভাষ্যমত তিনি কেবল সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি হয়েছিলেন। সে কথা আসলে ধোপে টেকে না। যাই হোক বিসিবি সভাপতির কাছ থেকে সোজাসাপ্টা একখানা হুমকিই ছুঁড়ে দেওয়া হল। হয় ক্রিকেট, না হয় বেটিং। সাকিব ক্রিকেটটাকেই বেছে নিলেন।

কেননা এই তারকাখ্যাতি, এই জশ সবকিছুর পেছনে তো এই ক্রিকেটটাই পালন করেছিল মুখ্য ভূমিকা। আর বিসিবির পরিকল্পনার একটা বড় অংশ জুড়েই সাকিব ছিলেন বলেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন খোলামেলাভাবেই বলেছিলেন সাকিবকে একটা কিছু বেছে নিতে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের পারফরমেন্স যাচ্ছেতাই।

দলের সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অনেকদিন ধরেই রয়েছেন অফ ফর্মে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাঁর অধীনের দলের পারফমেন্সের গ্রাফ যেন হয়েছে ক্রমশ নিম্নমুখি। ২০২১ বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর নেতৃত্বের পরিবর্তনটাই যেন ছিল মুখ্য। সেটাও অবশ্য এলো বড্ড দেরি করেই।

সাম্প্রতিক সময়ে সাকিবের কাঁধে বাংলাদেশ টেস্ট দলেরও দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। এসেই তিনি রাতারাতি কিছু পরিবর্তন করে ফেলতে পারেননি। তবে আভাস দিয়েছেন পরিবর্তনের। সময় পেলে হয়ত সাকিব পরিবর্তনটাও ঘটিয়ে ফেলবেন। সে সময়টাই যেন এবার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে পাচ্ছেন না সাকিব।

এই মাসের শেষের দিকেই বসতে চলেছে এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপকে সামনে রেখেই ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অবধি সাকিবকে দেওয়া হয়েছে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। তিন মাসের মাথায় এত বড় এক আয়োজনে ভঙ্গুর একটা দল নিয়ে খুব বেশি কিছু সাকিব করতে পারবেন কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তবে এর আগে সাকিব বাংলাদেশকে ২১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার ৩৩ শতাংশ ম্যাচ জিতেছেন তিনি। প্রায় দ্বিগুণের বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদউল্লাহর জয়ের পরিসংখ্যান শতকরা হিসেবে ৩৮। তবে এই সময়ে তাঁর অ্যাপ্রোচ নিয়ে বড্ড বেশি প্রশ্ন উঠেছে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র। সাকিব রক্ষণাত্মক নন রিয়াদের মত।

তিনি বরং আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটাই খেলতে বেশি পছন্দ করেন। আর আধুনিক টি-টোয়েন্টির যুগে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাটাই প্রয়োজন। সেদিক থেকে সাকিবের কাছে সমর্থকরা ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা করতেই পারে। তবে চোখের পলকে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের পরিস্থিতি বদলে যাবে শতভাগ এমনটা বলবার সুযোগ নেই।

সাকিবকে অধিনায়ক করে টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করা হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানের বাসভবন থেকে। বহুদিন বাদে দলের ফিরেছেন সাব্বির হোসেন আর সাইফউদ্দিন। একেবারে নতুন মুখ পেসার এবাদত হোসেন। দল থেকে বাদ পড়েছেন মুনিম শাহরিয়ার। পাঁচ মাস পড়ে আবারও দলে মুশফিকুর রহিমের অন্তর্ভুক্তি। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট দলের চমকের যেন কমতি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link