এশিয়া কাপের আগে দেশ ছাড়ার আগে দলের অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলন করবেন এটাই প্রথা। তবুও আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে একটা বাড়তি উত্তেজনা। কেননা অধিনায়কের নাম সাকিব আল হাসান। সাকিব সংবাদ সম্মেলনে আসা মানেই ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের বহিঃপ্রকাশ। সাথে আবার রসবোধেরও কমতি নেই।
ফলে সাংবাদিক কিংবা দর্শক সবার জন্যই সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলন একটু বাড়তি উপভোগ্য। আজও প্রায় ৩২ মিনিট ধরে চলা সেই সংবাদ সম্মেলনে হতাশ করেননি নয়া টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর চিন্তা ভাবনা যেমন স্পষ্ট হয়েছে কথায়, আবার নানারকম হাস্যরসেও রাঙিয়ে রেখেছিলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষ।
নতুন অধিনায়কের কাছে প্রথম প্রশ্নই ছিল দলকে নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে। সাকিব আল হাসানও দিয়েছেন সোজা সাপ্টা উত্তর। তিনি বলছিলেন, ‘কোচ আর অধিনায়কের তো একটা পরিকল্পনা থাকেই। আমাদের নতুন একজন এসেছেন তাঁর সাথে বসেই সব ঠিক করবো। আর সব ক্রিকেটারদের আলাদা করে বলার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে সবাই নিজের কাজটা বোঝে। আমরা তো আর ফোর-ফাইভের বাচ্চা নই, যে সবকিছু শিখিয়ে দিতে হবে।’
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এশিয়া কাপ বলেই বাংলাদেশের জন্য আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। তবুও গত কয়েক আসরে এশিয়া কাপের অন্যতম সফল দল বাংলাদেশ। ফলে প্রত্যাশা এবারো থাকছে। বাংলাদেশ এবার ফাইনাল খেলতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে সাকিবের ভাবনাটা রিয়েলিস্টিক। তিনি বলেন,’ আমাদের জন্য কঠিন। আমি আসলে রিয়েলিস্টিক চিন্তাই করতে চাই। তবুও আমরা যদি প্রথম দুইটা ম্যাচ ভালো খেলতে পারি কিংবা একটু উন্নতির ছায়া আমরা রাখতে পারি সেটাই এবার একটা সাফল্য হবে বলে আমি মনে করি।‘
সাকিবের কথায় স্পষ্ট তিনি এবারের এশিয়া কাপ নিয়ে খুব বড় কোন স্বপ্ন দেখছেন না। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের করুণ অবস্থার কথাই মাথায় রাখছেন তিনি। এছাড়া গত একবছরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা যেভাবে খেলেছে সেখান থেকেও বেরিয়ে আসতে চান সাকিব। তিনি চান নতুন একটা ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে।
ওদিকে এশিয়া কাপের আগে অন্যতম আলোচনার বিষয় মুশফিকুর রহিমের উইকেটরক্ষক হিসেবে ফেরা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কিপিং গ্লাভসটা একরকম তুলেই রেখেছিলেন মুশফিক। তবে এশিয়া কাপে আবার সেই দায়িত্বটা নিতে যাচ্ছেন তিনি। গুঞ্জন ছিল সাকিবের অনুরোধেই আবার কিপিং গ্লাভস হাতে নিয়েছেন মুশফিক।
সেই প্রশ্নও সাকিবকে করা হয়েছিল আজকের সংবাদ সম্মেলনে। সাকিব মুশফিকের উইকেট কিপিং নিয়ে বলছিলেন, ‘আসলে উনি কিপিং করলে আমার লাইফটা অনেক ইজি হয়ে যায়। কারণ উইকেটের পিছন থেকে উনি ভালো ভাবে ফিল্ডারদের পজিশন দেখতে পারেন এবং কোন সমস্যা থাকলে উনিই ঠিক করতে পারেন। এতে আমার আর ওদিকটা নিয়ে ভাবতে হয়না। আমি বরং ম্যাচের অন্যান্য বিষয় নিয়ে বেশি ভাবতে পারি।’
ওদিকে ক্রিকেট বোধের পাশাপাশি সাকিবের ক্রিকেট রসেরও পরিচয় পাওয়া যায় এই সংবাদ সম্মেলনে। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকেই টানা অনুশীলন করেছেন মিরপুরে। আর সাকিবের এই ট্রেনিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিরপুরে অনুশীলন করলে আপনারা দেখেন, আবার বাইরে কোথাও করলে কিন্তু আপনারা দেখতে পাবেন না। তারমানে এই না যে আমি করিনি। আর আমি তো অত ভিডিও টিডিও পোস্ট করিনা (হাসি)।’
সাকিব আল হাসান নিজের ট্রেনিং এর ভিডিও পোস্ট করলেও প্রস্তুতিটা যে পুরোপুরি নিয়েছেন সেটা তাঁর মুখের কথাতেই স্পষ্ট। এবার নতুন অধিনায়কের সেটা এশিয়া কাপের মঞ্চে দেখানোর পালা। তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারলে তো বাংলাদেশও ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারে।