‘আমি এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি’

কী বিস্ময় জাগানিয়া এক চরিত্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দিনের পর দিন সেই একই আগ্রাসন। বাইশ গজটাকে পাড়ার গলি বানিয়ে রানের পর রান করে চলেছেন। ব্যাট হাতে তো সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেনই, শরীরি ভাষায়ও যেন আর সবার থেকে পার্থক্যটা স্পষ্ট। মাঠে বিরাট কোহলি থাকা মানেই যেন দলের সবার মাঝে একটা স্পার্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে চুরমার করে দেয়া এক মানসিকতা।

টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই একজন ক্রিকেটার সমানতালে রান করে যাচ্ছেন। একটা ২০ ওভারের ম্যাচে তাঁর শরীরি ভাষা যতটা তীব্র, পাঁচদিনের ম্যাচেও যেন ঠিক ততটাই। এই সময়ে এসেও টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিবেদন মানুষকে মুগ্ধ করে। তাঁর এই আক্রমণাত্মক শরীরি ভাষা, মানসিক দৃঢ়তা ক্রিকেট দুনিয়া আর কখনো দেখেনি।

বিরাট কোহলির এই আগ্রসান হয়তো আপনার পছন্দ, আবার হয়তো অপছন্দ। তবে এই কোহলিকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না। এই ইস্পাত কঠিন মানসিকতার প্রশংসা না করে আপনি পারবেন না। অথচ সেই বিরাট কোহলিই যখন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার কথা বলেন তখন ক্রিকেট দুনিয়া খানিক থমকে যায়। আমাদের আবার মনে পড়ে, কোহলিও তো রক্ত মাংসের মানুষ।

ব্যাট হাতে প্রায় এক দশক ধরে রান করে যাচ্ছিলেন। সেঞ্চুরি ব্যাপারটা যেন মামুলি এক ব্যাপার। তবে সেই কোহলি আবার উলটো রূপও দেখেছেন। অনেকদিন ধরেই আগের সেই কোহলিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। একেবারে রান করছেন না তা নয়, তবে কোহলি রাজত্ব করতে পারছেন না। বিরাট কোহলিরা বাইশ গজে পা দিবেন অথচ, মাথায় মুকুট থাকবেনা তাতো হয়না।

সেজন্যই ভারত দল কোহলিকে সময় দিয়েছিল। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল। তবে এশিয়া কাপের জন্য আবার দলে ফিরেছেন বিরাট কোহলি। ফলে এবারের এশিয়া কাপ তাঁর জন্য একটা ফিরে আসার মঞ্চও বটে। আর শুরুটা হচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।

তবে এই টানা অফ ফর্ম, দল থেকে বাদ পড়া এইসবকিছুই মানসিকভাবে আঘাত করেছে বিরাট কোহলিকে। তাঁর দৃঢ় মানসিকতায় একটু হলেও চিড় ধরেছে। এমনকি যেই ব্যাট হাতে কোহলির এই রাজত্ব, মাঝে প্রায় এক মাস সেই ব্যাটটাই ছুঁয়ে দেখেননি। কোহলি নিজের মুখেও এসব কথা স্বীকার করেছেন।

এশিয়া কাপের আগে আজ স্টার স্পোর্টসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কোহলি এসব কথা বলেন, ‘গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি এক মাস ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি। বুঝতে পারছিলাম, ভালো খেলার জন্য নিজের ভেতরে যে তীব্র ক্ষুধা, তা ঠিকমতো অনূদিত করতে পারছি না। নিজেকে বুঝিয়েছি, ক্ষুধাটা এখনো মরেনি। কিন্তু শরীর থামতে বলছিল। মন বলছিল, একটা বিরতি নাও। এমনিতে আমি মানসিকভাবে শক্তিশালি। কিন্তু সবারই একটা সীমা আছে, নিজের সীমানাটা সবাইকে জানতে হয়। অন্যথায়, তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সে সময়ে আমি অনেক কিছুই শিখেছি।’

এছাড়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার কথাও অকপটে স্বীকার করে কোহলি বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দশায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা নিজেদের ভেতরকার দ্বিধার জন্য এসব নিয়ে কথা বলি না। কারও চোখেই আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হিসেবে ধরা পড়তে চাই না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মানসিকভাবে দুর্বল—এটা স্বীকার করার চেয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালি হওয়ার ভণিতা করা বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে।’

এইসবকিছু থেকেই বোঝা যায় কোহলিরাও রক্ত মাংসেরই মানুষ। এই বাজে সময়টা তাঁর মত একজনকে চুড়মার করে দিচ্ছে ভিতর থেকে। রানমেশিন হয়ে উঠা কোহলিও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। সেজন্যই মনে তাগিদে একটা বিশ্রাম নিয়ে আবার ফিরে এসেছেন। মাঠেও কোহলির সেই পুরনো শরীরি ভাষা, পুরনো দৃঢ়তা ফিরে আসুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link