ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের খেলা চলছে তখন। হঠাৎ ক্যামেরাটা আঁটকে গেল শ্রীলঙ্কার ড্রেসিং রুমে। দলটার কোচ ক্রিস সিলভারউড সিগন্যাল পাঠাচ্ছেন। দুটি কাগজে বড় করে লেখা ‘২এ’। কেননা তখন ব্যাট হাতে মাত্র ঝড়টা তুলতে শুরু করেছেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। আর তখন বল করছিলেন আগের ম্যাচেই অভিষেক হওয়া আসিথা ফার্নান্দো।
পরের ওভারে গুরবাজ যেন আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে শুরু করলেন। ক্রিস সিলভারউডের সংকেতকে সরাসরি উড়িয়ে দিলেন তিনি। মাহিশ থিকশানাকে স্লগ সুইপ করে বল কাউ কর্নার অঞ্চল দিয়ে সীমানা ছাড়া করলেন। তবে পরের বলটা থিকসেনা একটা ফাঁদ পাতলেন। তবুও বোলারদের মাথার উপর দিয়ে সজোরে হাঁকালেন গুরবাজ। অনেকক্ষণ ধরে হাওয়ায় ভাসা বলটা ক্যাচও ধরা হলো। আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন গুরবাজ। সিলভারউডের মুখে মুচকি হাসি। আরেকবার ড্রেসিংরুম থেকে কোড পাঠিয়ে সফল হলেন তিনি।
কিন্তু না। বলটা ক্যাচ হয়েছে ঠিকই তবে ফিল্ডারের পা লেগে যায় বাউন্ডারি লাইনে। ফলে গুরবাজ আবার ফিরে এলেন। এরপর আর কোন সুযোগই দেননি লঙ্কান বোলারদের। শারজাহ’র ছোট মাঠটার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে লঙ্কান বোলারদের উঠিয়ে মেরেছেন। রহমানউল্লাহ গুরবাজকে যেন কোনভাবেই ডিকোড করতে পারছেন না ক্রিস সিলভারউড।
শ্রীলঙ্কার এই কোচ ড্রেসিং রুম থেকে সিগন্যাল কিংবা কোড পাঠানোর এই কাজটা বাংলাদেশের সাথে ম্যাচের দিনও করেছেন। বাংলাদেশের ব্যটিং ইনিংসের সময় নানারকম কোড দেখাচ্ছিল তিনি। হয়তো সফলও হয়েছেন। এই নিয়ে অবশ্য অনেক আলোচনা, সমালোচনাও হয়েছে গত কয়েক দিনে।
কেউ এই সিগন্যাল পাঠানোয় কোন সমস্যা দেখেন না। কেউ আবার মনে করেন এটা ক্রিকেটের সাথে কোনভাবেই যায় না। সে যাইহোক, শ্রীলঙ্কার এই কোড সিস্টেম একেবারে ধ্বসে পড়েছে গুরবাজের সামনে। কোড দেখানোর পর থেকে যেন আরো তেঁতে উঠলেন এই ব্যাটার। একের পর এক বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি আসতে শুরু করলো তাঁর ব্যাট থেকে।
নিজের অর্ধশতক পূরণ করেছেন মাত্র ২২ বলে। এরমধ্যে বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ৩৬ রান। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ে প্রথম দশ ওভারে ৮৩ রান তোলে আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও করেছিলেন ৪০ রান। তবে আজ নিজের ইনিংসটাকে আরো বড় করতে চেয়েছেন এই ব্যাটার। অর্ধশতক করেই থামেননি। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে গিয়েছেন।
অবশ্য শ্রীলঙ্কার বোলাররাও আজ বেশ অনিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। শারজাহ’র উইকেট তুলনামূলক ধীর হলেও তাঁর পুরো ব্যবহার করতে পারেনি লঙ্কানরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অধিকাংশ বলই তাঁরা করেছে স্ট্যাম্পের বাইরে। আর এর পুরো ফায়দাই তুলেছেন গুরবাজ। ছোট মাঠটায় বল সীমানা ছাড়া করতেও তাঁকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
ওদিকে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কাকে রীতিমত উড়িয়েই দিয়েছিল আফগানিস্তান। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষেও জয় পায় তাঁরা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যোগ্য দল হিসেবেই সুপার ফোরে জায়গা করে নেয় আফগানরা। গ্রুপ পর্বের সেই আত্মবিশ্বাসটা সুপার ফোরেও ধরে রেখেছে তাঁরা। ব্যাট হাতে শুরুটা একইরকম আক্রমণাত্মক।
শেশ পর্যন্ত গুরবাজের ইনিংসটা থেমেছে ৮৪ রানে। মাত্র ৪৫ বলে বিধ্বংসী এই ইনিংস খেলেন তিনি। ইনিংসটি গুরবাজ সাজিয়েছেন চারটি চার ও ছয়টি ছক্কা দিয়ে। ব্যাটিং করেছেন ১৮৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ে শারজাহ’রত ধীর হয়ে আসা উইকেটেও বড় সংগ্রহ আফগানিস্তানের।