ক্রিকেট খেলায় ভাগ্যের একটা বিষয় সবসময়ই জড়িয়ে থাকে। হাজারটা চেষ্টা করেও যদি ভাগ্য দেবতার সহয়তা না পাওয়া যায় তবে হাতের খুব সন্নিকটে থাকা জয়টাও চলে যায় বহুদূরে। তবে মাঠের লড়াইটা হওয়ার আগে একটা ছোট্ট ভাগ্যের লড়াই হয়ে যায়। সেটাকে ক্রিকেটীয় ভাষায় ‘টস’ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। আর এবারের এশিয়া কাপে এই টসটাই রেখেছে মুখ্য ভূমিকা।
মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসেছে এবারের এশিয়া কাপ। সুপার ফোরের বেশ কিছু ম্যাচ ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে সমাপ্ত। প্রায় প্রতিটা দলই লড়াই করেছে নিজেদের মহাদেশীয় এই লড়াইয়ে সেরাদের সেরা প্রমাণ করতে। মাঠের ক্রিকেটটা হয়েছে জম্পেশ। রান হয়েছে, রান তাড়া করে জয় হয়েছে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে একটা বিষয় সবার মনেই হালকা করে দাগ কেটে গেছে। আর সেটা টস।
এশিয়া কাপের এবারের আসরে এখন অবধি ম্যাচ হয়েছে নয়খানা। একমাত্র বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একটি ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আফগানিস্তানের সাথে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। বাকি থাকা প্রতিটি ম্যাচে, অধিনায়কদের সিদ্ধান্ত ছিল আগে বল করা। আর অভাবনীয় হলেও সত্য যে এতে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন প্রায় প্রতিটি দল।
টুর্নামেন্টের শুরুতে বেশকিছু দল হোচট খেয়েছেন তবে আবার তাঁরা তা সামলে নিয়েছে। কিন্তু সাকিবের সেই সিদ্ধান্তের পর আর কোন অধিনায়কই নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেননি। বা করতে চাননি। এখানে নিশ্চয়ই বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করেছে। এর মধ্যে প্রথম ফ্যাক্টরটাই সম্ভবত ছিল আরব আমিরাতের কন্ডিশন। সেখানে প্রায় সবগুলো ম্যাচই হয়েছে ফ্ল্যাডলাইটের আলোতে।
রাতের বেলা শিশির ফ্যাক্টরটা নিশ্চয়ই ভাবায় সবাইকে। তবে এখানে দুই দলকেই খেলতে হয়েছে দিনের আলো শেষে। তাতেই হচ্ছে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ঠিক সেকারণেই পরে ব্যাটিং করা দলগুলো পাচ্ছে জয়ের দেখা। দ্বিতীয় ইনিংসে বল করা বোলারদের বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। শিশির ভেজা বল রীতিমত বনে যায় সাবান জল মাখানো এক চর্ম গোলক।
তাছাড়া আরব আমিরাতের পিচগুলো সাধারণত স্লো হয়। সেখানে বল ব্যাটে আসতে খানিক সময় নেয়। নিশ্চয়ই সে বিষয় সব দলেরই জানা। যেহেতু আগেরদিন পিচের পরিচর্যায় পানি ব্যবহার করা হয় এবং সারারাত পিচ ঢেকে রাখা হয়। সে কারণেও বল আরও খানিকটা স্লো হয়ে আসে। তাতে ব্যাটারদের খেলতে খানিকটা সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। এতে করে রানটা বেশ খানিকটা কমই হয় পিচের তুলনায়।
কেননা পরের দিকে পিচের আদ্রতা কমতে থাকে, তাতে ব্যাটে বলগুলো অপেক্ষাকৃত দ্রুতই আসে। আর সে সাথে শিশিরে ভেজা বলগুলো দিয়ে পরিকল্পনার সবটুকু আসলে বাস্তবায়ন করতে পারেন না বোলাররা। এখন অবধি পরে ব্যাটিং করেই ম্যাচ জয়ের পাল্লাটা ভারি। কেবলমাত্র দুইটি ম্যাচে এসেছে ভিন্ন ফলাফল। হংকংয়ের বিপক্ষে সেই দুই ম্যাচ জয় পেয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এই পরিসংখ্যানে খুব বেশি পরিবর্তন আসার সুযোগ নেই।
পরিসংখ্যান অন্তত বলে দেয় টসই, ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এমনকি ভারতের কপাল পুড়লো সেই টস ভাগ্যে। সুপার ফোরের দু’টো ম্যাচেই টসে হারলো তাঁরা। ম্যাচে হারলো যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বিদায় নিতে হল ফাইনালের আগেই। রোহিত শর্মা নিজের ভাগ্যকে দুষতেই পারেন।