নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই বিশাল বড় এক আয়োজনের ফাইনাল। শ্রীলঙ্কার এশিয়া কাপের যাত্রাটা শেষ হয়ে যেতে পারত প্রথম রাউন্ডেই। তাহলে হয়ত আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হত না। তবে কথায় আছে না, ‘যা হয় ভালর জন্যেই হয়’। তেমনটাই হল প্রমদ মাদুশান লিয়ানাগামেজে সাথে। একটু দেরি করে শুরু হওয়া ক্যারিয়ারটা রাঙালো শিরোপা দিয়ে।
সুপার ফোর রাউন্ডের শেষ ম্যাচ। যে ম্যাচের ফলাফলের কোন প্রভাবই ছিল না পুরো টুর্নামেন্টে। কেননা ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান দুই দলেরই ফাইনাল সুনিশ্চিত। আর মুখোমুখি হয়েছিল সে দুই দল। এমন এক কম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই অভিষেক হয় প্রমদ মাদুশানের। আর সে ম্যাচেই তিনি মন জয় করে ফেলেন লংকান টিম ম্যানেজমেন্টের। আর প্রতিদান স্বরুপ তিনি সুযোগ পেয়ে যান ফাইনালের দলে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাই খুব বেশি লম্বা নয় তাঁর। এই বছরের জুনে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে অভিষেক মাদুশান। সেখানেও খেলেছেন কেবল এক ম্যাচ। আর এবারই এশিয়া কাপে তিনি টি-টোয়েন্টি দলের জার্সি গায়ে জড়ালেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এত বড় চাপ তো সামলে নিতে পারে না। আর যারা পারে তাঁরা নিশ্চয়ই হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা। তেমন আভাসই যেন দিলেন মাদুশান।
ফাইনাল ম্যাচটায় তিনি তো পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার কারিগর। তিনিই তো ভানুকা রাজাপাকশের জ্বালিয়ে দেওয়া আলোর মশালটাই এগিয়ে নিয়ে গেলেন। নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ফাইনালের চাপ, সেই সাথে প্রত্যাশার চাপ। সব মিলিয়ে স্নায়ুচাপের পারদটা ঠিক আকাশ ছোঁবার কথা। সেটা অবশ্য ছুঁয়েছিল লংকান বোলার দিলশান মাদুশাঙ্কার। প্রথম ওভারে এক বলের দশ রান খরচ করে বসেন তিনি।
এরপর সবাই হয়ত ভেবেই নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা বুঝি হেরে যাবে ম্যাচ, স্নায়ুচাপের কাছে। তবে না, প্রমদ মাদুশান দেখিয়ে দিলেন তাঁরা হারতে আসেননি, তাঁরা দমে যেতে ফাইনালে মঞ্চে অগ্রসর হননি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই মাদুশানের চমক। নিজের ভেলকি দেখিয়ে তুলে নিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের উইকেট। সে ওভারে তিনি এক উইকেট শিকার করেই ক্ষান্ত হননি। পরবর্তী শিকার বানান ফখর জামানকে।
ফখর জামানের উইকেট উপড়ে ফেলেন মাদুশান। বাবরকে অবশ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তালুবন্দির ফন্দি করে। ঠিক সেখানেই হয়ত পাকিস্তানের ম্যাচ হারের সুপ্ত এক মানসিকতার বিস্তার হতে শুরু করে। সে বিস্তারের সম্পূর্ণটাই তো প্রমদ মাদুশানের কল্যাণে। তিনিই তো আরও একবার লংকানদের মনে শিরোপা জয়ের স্ফুলিঙ্গটা জ্বালিয়ে দেন। এরপরের কাজটা লংকান বোলারদের খুব ভাল করেই জানা।
শিরোপা জয়ের পথটা আরেকটু মসৃণ করে দেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এই লেগব্রেক বোলারও তুলে নেন তিনখানা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তবে এর আগে অবশ্য আবারও সেই মাদুশানের আঘাত। তাও আবার সেট ব্যাটার ইফতেখান আহমেদের উইকেট। হাসারাঙ্গা ও মাদুশানের তাণ্ডবে আর যেন ম্যাচে ফেরার পথটাই খুঁজে পায়নি বাবর আজমের সতীর্থরা। মোহাম্মদ রিজওয়ান অর্ধশতক করে আউট হওয়ার পর যেন ভ্রান্ত এক পথিক হয়ে বাইশ গজে পড়ে থাকে পাকিস্তানের বাকি ব্যাটাররা।
শেষের দিকে অবশ্য রান খরচা করেছেন প্রমদ মাদুশান। তবে শেষ অবধি আরও এক উইকেট তুলে নিয়ে নিজের অভিষেক টুর্নামেন্টটা মনে রাখার মত করেই রাঙিয়ে গেলেন তিনি। ২৮ বছর বয়সে এসে মাদুশান জাতীয় দলের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। দিনশেষে শিরোপা জয়ে মস্ত বড় অবদান রেখে তিনি জানান দিয়ে গেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে নেই ভুল পথের ঠিকানায়। তিনি ছুটবেন এখন নিজের গতিতে। লংকান ক্রিকেটের হারানো গৌরব ফেরানোতে রাখবেন অবদান। হয়ে উঠবেন বিশ্বসেরা একজন।