আয়াক্স অ্যামস্টারডাম: ফুটবল প্রতিভার সেরা কারখানা

ফুটবলে খেলোয়াড় ক্রয়-বিক্রয় যদি হয় ব্যবসায়, তবে নি:সন্দেহে বলা যায় এই ব্যবসাতে সবচেয়ে সফল ডাচ ক্লাব আয়াক্স, আয়াক্স অ্যামস্টারডাম। কিশোর প্রতিভাবানকে ঘষেমেজে শাণিত করে তোলা, এরপর বিশাল অংকে বড় কোন ক্লাবে বিক্রি করা – এভাবেই কাজ করে আসছে আয়াক্স। ফুটবলীয় প্রতিভা খুঁজে বের করা এবং সেই সাথে তাদের সেরা খেলোয়াড়দের একজনে পরিণত করার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই দলটির।

সম্ভবত ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ট্যালেন্ট ফ্যাক্টরি নেদারল্যান্ডসের ক্লাব আয়াক্স। জোহান ক্রুইফ, মার্কো ভ্যান বাস্তেন, ডেনিশ বার্গক্যাম্প, ওয়েসলে স্নেইডারের মত কিংবদন্তিরা বেড়ে উঠেছিলেন আয়াক্সেই। এছাড়া বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জার্সিতে মাঠ মাতিয়ে বেড়ানো ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ম্যাথিউজ ডি লিট, ক্রিস্টিয়ান এরিকসনের মত ফুটবলারদেরও পূর্বের ঠিকানা এই ক্লাব।

এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোর গল্পটাও একই। শুরুটা হয়েছে গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানার মধ্য দিয়ে। এই গোলরক্ষককে ইন্টার মিলানের কাছে বিক্রি করেছে আয়াক্স। এরপর রাইটব্যাক নৌসোর মাজরুই চলে গিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখে, একই পথে হেঁটে বাভারিয়ানদের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন মিডফিল্ডার রায়ান গ্রাভেনবার্চ।

এরপর আক্রমণভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সেবাস্তিন হলার বিদায় বলে দেন আয়াক্সকে। এই স্ট্রাইকার পাড়ি দিয়েছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। এছাড়া লম্বা সময় ধরে আয়াক্সে থাকা নিকোলাস ট্যাগ্লাফিকোকে দলে ভেড়ায় ফরাসি ক্লাব লিয়ন। তবে আয়াক্সকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল লিসান্দ্রো মার্টিনেজ এবং অ্যান্টনির ট্রান্সফার।

আয়াক্সের বার্ষিক বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭০ মিলিয়ন। অথচ মার্টিনেজ এবং অ্যান্টনিকে বিক্রি করেই ক্লাবটি পেয়েছে ১৫০ মিলিয়ন – এই আর্থিক লাভটাই মূলত আয়াক্সের লক্ষ্য। প্রতি বছর খেলোয়াড় তৈরি এবং সরবরাহের মাধ্যমে ইউরোপীয় ফুটবলে অন্যরকম এক আধিপত্য তৈরি করেছে তারা।

কিন্তু ক্লাবের ভক্তদের জন্য এমন ব্যাপার মোটেই সুখকর কিছু নয়। উদীয়মান তারকাদের প্রতিনিয়ত বিদায় বলাটা তাদের জন্য বেদনাদায়ক। তারা হয়তো কোন আয়াক্স ফুটবলারের জার্সি কিনেছে, পরের বছরই সেই জার্সি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কেননা ওই খেলোয়াড় হয়তো ঠিকানা বদলে ফেলেছে।

যদি, কিন্তু এমন সব ধারনা এখন সমর্থকদের মাঝে আছে। তারা ভাবে যদি গ্রাভেনবার্চ ডি ইয়ং এর সাথে খেলতে পারতেন; অ্যান্টনি যদি আরও এক বছর থাকতেন; প্রিয় ক্লাবটি যদি ট্রান্সফার মার্কেটে এতটা জড়িয়ে না পড়তো!

অবশ্য বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোতে নিজেদের কেউ খেলছে – এমন ভাবনা জায়গা করে নিয়েছে আয়াক্স ভক্তদের হৃদয়ে। বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আয়াক্সের সাবেক খেলোয়াড়দের খেলতে দেখাটা তাদের জন্য সৌন্দর্যের, গর্বের।

খেলোয়াড় তৈরিতে আয়াক্সের সাফল্য-ই মূলত তাদের সমস্যার কারণ। একজন খেলোয়াড়কে যত বেশি দক্ষ করে তুলবে তারা, সেই খেলোয়াড়ের চলে যাওয়া ততই নিশ্চিত হয়ে যাবে। তাই দলটির কোন কোচ চাইলে দীর্ঘ মেয়াদে স্কোয়াড তৈরি করতে পারেন না। প্রতি মৌসুমে নতুন করে শুরু করতে হয়।

নতুন শুরুর কাজটাও ভালভাবেই করতে জানে আয়াক্স। এই যেমন গত মৌসুমের সেরা একাদশের অর্ধেকের বেশি ফুটবলারকে হারানোর পরেও দাপট কমেনি ক্লাবটির। চলতি মৌসুমে লিগে এখন পর্যন্ত অজেয় ডাচ চ্যাম্পিয়নরা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও শুরুটা হয়ে দুর্দান্ত।

মোহামেদ কুদুস, ব্রায়ান ব্রোবে, স্টিভেন বারউইনদের নিয়ে তাই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আয়াক্স। এরাও হয়তো একটা সময় পর ইউরোপের সেরা কোন লিগের ক্লাবে খেলবে, তবে এখন এরা সবাই আয়াক্সের জার্সিতে খেলছে।

এই বর্তমানকেই ভালবাসে আয়াক্স; ক্লাবটির ভবিষ্যৎ এই বর্তমানেই লুকিয়ে আছে। শুধুই এই ক্লাব হয়তো নয়, কে জানে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ভবিষ্যতই হয়তো বড় হচ্ছে এই অ্যামস্টারডামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link