একটা কথা প্রচলিত, শিকারি বাঘ দুই পা পিছিয়ে যায় লাফ দেওয়ার জন্যে ভয়ে নয়। নিতান্ত সাধারণ এক প্রবাদ। তবে ক্রিকেট মাঠেও এই প্রবাদের জলজ্যান্ত সব উদাহরণই যেন দেখা যায়। বিশ্ব নন্দিত ক্রিকেটার বনে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। সবাই সেটা পারে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যারা সে কর্ম সাধন করতে পেরেছেন তাদের মধ্যে বিরাট কোহলি আর বাবর আজমের মত ব্যাটারদের নাম তো থাকবে সবার উপরের দিকেই।
নান্দনিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ যেন বিরাট-বাবর। তাদের খেলা কাভার ড্রাইভের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভাব নেই। এই দুই ব্যাটারের ব্যাট হাসা মানেই যেন বিনোদনের খোরাক মিটবে শতভাগ। দৃষ্টিনন্দন সব শট কেমন অবলীলায় খেলে ফেলেন এই দুই কিংবদন্তি ব্যাটার! একই সময়ে এমন দুর্দান্ত ব্যাটারের ব্যাটিং দেখার সৌভাগ্য যেন সবার হয় না। সেদিকি থেকে এই সময়ের দর্শকরা নিজেদের খানিক ভাগ্যবান বলে দাবি করতেই পারেন।
দুইটি দেশ। প্রতিবেশি হবার কথা থাকলেও, সেই সম্পর্কের ধারে কাছেও নেই ভারত-পাকিস্তান। সে অবশ্য ভিন্ন আলাপ। তবে একটা জায়গায় এই দুই দেশ এক। বিশ্ব ক্রিকেটকে বিকশিত করবার দিক থেকে এই দুই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির জুড়ি মেলা ভার। যুগে যুগে বহু কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের জন্মভূমি হিসেবে নিজেদের এক আধিপত্য ধরে রেখেছে এই দুই দেশ। কিংবদন্তি ব্যাটারদের আতুড়ঘর যদি হয় ভারত, তবে পেস বোলার তৈরি কারখানা পাকিস্তান। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকটায় দুইটি দেশই অসাধারণ দুই ব্যাটার উপহার দিয়েছেন ক্রিকেটকে।
দুই দেশের এই ক্রিকেটীয় মিলের সাথে সাথে বিরাট-বাবর এই দুই ব্যাটারের মাঝেও বেশ একটা মিল রয়েছে। তাঁরা দুইজনই ছিলেন অফফর্মে। বিরাট রান পেলেও তা কেন যেন বিরাট সুলভ মনেই হয়নি কারও কারও কাছে। বিরাটের রান করা মানেই যেন শতক ছাড়িয়ে যাওয়া। মাঠের চারিপাশে দুর্দান্ত সব শট খেলা। সে বিষয়টাই যেন বহুদিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন বিরাটের ব্যাটিংয়ে।
তবে তিনি যখন ফিরলেন স্বরুপে ঠিক তখন পুরো বিশ্ব আবারও ভেসে গেল বিরাট বন্দনায়। নিপুণ ক্রিকেটীয় কারুকার্যের প্রদর্শন ঘটিয়ে বিরাট আদায় করে নেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি শতক। পরান জুড়ালো, চোখ পেল প্রশান্তি! হুট করেই আবার বাবর আজম চলে গেলেন অফফর্মে। একদিকে ভরা জোছনা তো আরেকদিকে ঘোর অন্ধকার। বাবরের ব্যাটে রান যেন খরা। সমালোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন বাবর। তবে তিনি ফিরলেন।
রাজকীয় ভাবেই ফিরলেন। সকল সমালোচনার জবাবটা দিলেন তিনি ব্যাট হাতে। তুলে নিলেন নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও দলকে এনে দিলেন দশ উইকেটের বিশাল বড় জয়। তারা দুইজনই প্রমাণ করলেন কিংবদন্তিদের প্রত্যাবর্তন হয় মনে রাখার মত করেই। তারা অতিসাধারণ কোন পন্থায় নিজেদের সমালোচকদের জবাবটা দেন না। যখন জবাব দেন তখন যেন নিন্দুকের চোখ হয়ে যায় ছানাবড়া। সবচেয়ে বড় সমালোচকটাও তখন যেন তাদের নিয়ে রাজ্যের সব প্রশংসায় মেতে যান।
তবে সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় আরও একটি বিশ্বকাপের আগে এই দুই দুর্ধর্ষ ব্যাটার ফিরেছেন ফর্মে। এবারে বিশ্বকাপের উত্তেজনার মাত্রাটা আরেকটু যেন বেড়ে গেল। এই সময়ের সেরা দুই ব্যাটারের লড়াইটা জমবে ষোল আনা সেটাই হয়ত প্রত্যাশা ক্রিকেটের সব দর্শকদের। আর তেমনটা হলে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। সেটাই তো চাই, সেটাই তো প্রয়োজন।