হ্যারি ব্রুক। ক্রিকেটের পাড়ভক্ত না হলে নামটা বড্ড অচেনা লাগারই কথা। তবে শরতের এই শিশিরভেজা ভোরের আগেই ক্রিকেট মর্ত্যে ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে উঠেছে হ্যারি ব্রুক নামটা। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর খেলা ৩৫ বলে দুর্দান্ত ৮১ রানের ইনিংসটি নিয়ে এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বহু আলোচনা।
সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার জেমস টেইলর তো তাঁর টুইট বার্তায় ব্রুকের এই ইনিংসটিকে মাস্টারক্লাস তকমাই দিয়ে ফেলেছেন। আর সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেন সুর তুলেছেন আরো উচ্চ ডেসিবেলে। তাঁর মতে, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড একাদশে হ্যারি ব্রুককে অবশ্যই খেলাতে হবে।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটে আগমনী বার্তা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। ২০১৮ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। আর সে বিশ্বকাপেই এক সেঞ্চুরিসহ ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ২৩৯ রান করেছিলেন এই ব্রুক। অ্যালিস্টার কুকের পর প্রথম কোনো ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে করেছিলেন সেঞ্চুরি।
ব্যাটিংয়ে দারুণ সময় কাটানো ব্রুক অবশ্য সেই বিশ্বকাপেই অন্যরকম এক তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হারার পর শৃঙ্খলাজনিত ইস্যুর কারণে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য সে সময় ইসিবি কোনো কারণই প্রকাশ্যে আনেনি।
সে তিক্ত স্মৃতির কথা আড়ালেই থাক। আপাতত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্রুকের জাগরণের গল্প স্মৃতি হাতড়ে বের করা যাক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হ্যারি ব্রুকের শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে। শুরুটাও মন্দ হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে সে পারফরম্যান্সকে দারুণও বলা যেতে পারে। ইয়র্কশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে ৩১ বলে খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। এর পর থেকেই আলো ছড়ানো শুরু। দারুণ সব পারফর্মেন্সের দীপ্তিতে দলের দীপ্তাংশু হয়েছেন। তবে আলাদা করে নজরে আসেন টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে দারুণ পারফর্ম করার পর। ২০২১ সালে এই টুর্নামেন্টে ৬৯.৪২ গড়ে ব্রুক রান করেন ৪৮৬। সাথে প্রায় ১৫০ স্ট্রাইকরেটে সেবার ব্যাট করেছিলেন তিনি।
সেই ফর্মের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন এবারের আসরেও। আগের বারের চেয়ে এবার গড় কমে ৩৯.৬৩ হলেও পুরো টুর্নামেন্টে ৪৩৬ রান করেছিলেন ১৬৪ স্ট্রাইকরেটে। টানা পারফর্ম করায় এরপর থেকে পিএসএল, বিগব্যাশেও ডাক পেতে শুরু করেন হ্যারি ব্রুক। একই সাথে ২০২২ এর শুরুতে ইংল্যান্ড দলেও ডাক পেয়ে যান তিনি।
হ্যারি ব্রুকের ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে শক্তিমত্তার জায়গা হলো, সব দিক দিয়ে প্রায় সমান ভাবে শট খেলতে পারেন। ওভার মিড উইকেট কিংবা কভার, মোটামুটি সব জায়গাতেই শট খেলতে দক্ষ তিনি। আর পেসারদের বিপক্ষে তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বল হিট করতে পারেন। সেই প্রমাণ দিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজেই। পাকিস্তানের পেসাররা তাঁর বিপক্ষে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি।
প্রথম দুই ম্যাচে ২৫ বলে ৪২*, ১৯ বলে ৩১ করার পর তৃতীয় ম্যাচে এসে খেলেছেন ৩৫ বলে অপরাজিত ৮১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। দারুণ এ ইনিংস খেলার পথে মাঠের প্রায় সবদিকেই শট খেলেছেন ব্রুক। কভার, লং অন, দুই দিক দিয়েই সমান ১৭ রান করেছেন। এ ছাড়া মিড উইকেট, ফাইন লেগেও বেশ স্বাচ্ছন্দেই শট খেলেছেন।
মিডল অর্ডারে এসে ধারাবাহিকভাবে রান করবে, সাথে রানের গতিও থাকবে, ইয়ন মরগ্যান অবসরে যাওয়ার পর এমন একজন ব্যাটার বেশ হন্যে হয়েই খুঁজছিল ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুক যেভাবে পাকিস্তান সিরিজে খেলছেন তাতে সেই সমস্যার দারুণ এক সমাধান হতে পারেন তিনি। ইংলিশ ক্রিকেটের কাশবনে এর মধ্যেই দোলা লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে শরতের শিশির ভেজা ঘাসে প্রভাত-আলোর বিচ্ছুরণে শিউলিতলায় ঝরে পড়ে শিউলিরাও। হ্যারি ব্রুক নিশ্চয় সেই শরতের শিউলি হতে চাইবেন না।