স্পর্ধার বিলম্বিত বিশ্বাস

ঋষাভ পান্ত আর লাল বলের ক্রিকেট দুটো ব্যাপার যেন খুব সহজেই খাপ খেয়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পান্ত টেস্টে যতটা উজ্জ্বল, সাদা বলের ক্রিকেট বিশেষ করে টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেন কিছুটা মলিন। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও, দীনেশ কার্তিকের আড়ালে পান্তের নাম খোয়া যাবে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়ার মত না।

পান্তকে মানা হয় ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিণত করার কাজ করেছেন পান্ত। তা বাইশ গজে কিংবা বাইশ গজের বাইরে ব্যক্তি জীবনেও। এক সময়ের বেপরোয়া ব্যাটারের তকমা থেকে নিজেকে পরিণত করেছেন পরিস্থিতি বুঝে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট চালানোর মত একজনে। সবটুকু দিয়ে পান্ত যে নিজেকে ভেঙ্গে গড়ে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন তা চোখ এড়ায়নি দলের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরের।

সম্প্রতি অধিনায়ক রোহিত শর্মার কথায় স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে দলে দীনেশ কার্তিককে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি। তার কথায় পরিস্কার যে একাদশে কার্তিক থাকবেন, পান্ত জায়গা পাবেন না। রোহিত শর্মাদের ধারণা পান্ত এখনও নিজের খোলস ছেড়ে বেরোননি, সাদা বলের ক্রিকেটে নিজের সেরাটা  দেওয়া বাকি তাঁর।

২০২০ এবং ২০২১ সময়কালে অসামঞ্জস্যপূর্ণ রানের কারণে পান্ত স্বল্পতম ওভারের ফরম্যাটে একাদশে নিজের নাম খুঁজে পেতেন না। ২০২২ এর আসন্ন টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দীনেশ কার্তিকের নামের আড়ালে পাইপলাইনের বাহিরে থাকবেন পান্ত, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

পান্তের সামনে তাই অনিশ্চিত গন্তব্য। টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও কার্তিককে এগিয়ে রেখেছেন রোহিত শর্মা। কেবল মাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইন আপ যদি একজন বাঁ-হাতি ব্যাটার দাবি করে, কেবল তখনই ভাগ্য খুলবে পান্তের। নইলে কার্তিককেই দেখা যাবে দলের অংশ হিসেবে। তাছাড়া দীনেশ কার্তিক রয়েছেন অধিনায়কের সুনজরে। পান্ত সেখানে কিছুটা অবহেলিত যেন!

অবশ্য পান্ত এই টানপোড়েনের সময়ে পাশে পাচ্ছেন দলের সাবেক ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরকে। গত বছর ঋষাভ পান্ত অস্ট্রেলিয়া সফরে গাব্বা মাঠে ১৩৮ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংস খেলে টিম ইন্ডিয়াকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা মনে করে শ্রীধর বলেন, ‘তখন সাজঘরে পান্তকে উচ্ছ্বসিত রোহিত বললেন, ‘তুমি জান না আজ তুমি কী করেছ।’ পান্ত তা নির্লিপ্ত ভাবে শুনে গিয়েছিলো যেন এই ইনিংস খেলে দলকে জেতানো বেশ সহজ- স্বাভাবিক ঘটনা তাঁর কাছে।’

শ্রীধর আরও বলেন, ‘সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও (পান্ত) যে এখনও বিশ্বক্রিকেটে আগুন ধরায়নি, সেটা এক দিক থেকে ভাল। আমি লিখে দিতে পারি যে পান্তের থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আছে। ম্যানচেস্টারে পান্ত দেখিয়েছে দিয়েছে যে ও কী করার সামর্থ্য রাখে। আগে কী হয়েছে তা নিয়ে ভাববেন না। পান্তের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’

সেই সাথে মহেন্দ্র সিং ধোনির উদাহরণ টেনে পান্ত কীভাবে অভিষ্যতে অধিনায়কত্বের দারুণ ভূমিকায় পারদর্শী হতে পারেন সেইটি জানান দিতেও ভোলেননি শ্রীধর। সব মিলিয়ে ঋষাভ পান্ত যে দারুণ দক্ষতা রাখেন সেই দিকটি আলোকপাত করলেন বৈকি। পান্তর বয়সটাও এখনও বেশ কম, নিজের উপর বিশ্বাস রাখলে সামনে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে পারবেন তিনি। কে জানে হয়তো ভবিষ্যতে ধোনির সাথেই উচ্চারিত হবে তাঁর নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link