রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজের সাত ম্যাচেই লড়াই হয়েছে সমানে-সমানে; প্রায় প্রতিটি ম্যাচের ফলাফল জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। শুধু জয়-পরাজয় নয়, বিশ্বকাপের আগে দুই দলের জন্যই এই সিরিজটি ছিল প্রস্তুতির বড় মঞ্চ; আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে তারা। বিশেষ করে পাকিস্তান নিজেদের শক্তিমত্তা আর দুর্বলতা ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে। দলটির উদ্বোধনী জুটি আবারো প্রমাণ করেছে কেন তারা সময়ের সেরা টি-টোয়েন্টি জুটি।
বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান দুইজনেই ছিলেন দারুণ ছন্দে, বলতে গেলে ইংলিশ বোলারদের একাই শাসন করেছেন তাঁরা। কিন্তু দুর্বলতার কথা ভাবতে গেলেই পুরনো সব সমস্যা নতুন করে চোখে পড়বে। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নড়বড়ে অবস্থা বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাবর আজম কিংবা মোহাম্মদ রিজওয়ানদের মাঝে একজনকে মিডল অর্ডারের দায়িত্ব দেয়া যায় কি না সেটি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সেক্ষেত্রে ইনিংস উদ্বোধন করবেন কারা তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
এছাড়া ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহদের উপর আর কত ভরসা করবে টিম ম্যানেজমেন্ট – সেই উত্তরও অজানা। ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচে একটু নজর দেয়া যাক। ২১০ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সফরকারীরা, সত্যি বলতে এই লক্ষ্য তাড়া করে জেতা বেশ কঠিন। কিন্তু ভক্তদের হতাশ করেছে ব্যাটারদের অ্যাপ্রোচ। তারা কেউই আসলে এই রানের পাহাড় জয়ের মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামেনি। সে ম্যাচে পাকিস্তানের সেরা তিন ব্যাটার ছিলেন শান মাসুদ (৪৩ বলে ৫৬), খুশদিল শাহ (২৫ বলে ২৭) এবং ইফতেখার আহমেদ (১৬ বলে ১৯)। স্ট্রাইক রেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এদের সবাই আসলে অতি-রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিলেন।
অথচ একই সিরিজে কোন উইকেট না হারিয়ে ২০০ এর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে পাকিস্তান। এটাই মূলত দলটির প্রধান দুর্বলতা, বাবর-রিজওয়ানের জুটি স্থায়ী হলে যেকোনো লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের সামর্থ্য আছে তাদের। কিন্তু এদের কেউ একজন দ্রুত আউট হয়ে গেলে নেমে আসে ব্যাটিং বিপর্যয়। পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট এখন কি করবে, তাঁরা কি পরিবর্তনের পথে হাঁটবে নাকি একই স্কোয়াড নিয়েই উড়াল দিবে অস্ট্রেলিয়াতে।
যদি তাঁরা একই দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যায় তবে নিশ্চিতভাবেই সমালোচিত হবে নির্বাচকরা। আবার যদি দলে পরিবর্তন আসে তবে কাদের সুযোগ দেয়া হবে? আপাতত কয়েকটি নাম বেশ শোনা যাচ্ছে, এদের মধ্যে রয়েছে শোয়েব মালিক, শারজিল খান এবং আজম খান।
লম্বা সময় ধরেই শারজিল খান জাতীয় দলের বাইরে, ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও খুব একটা ভাল ফর্মে নেই তিনি। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে একটি সেঞ্চুরি করলেও আসরের বাকি ম্যাচে তিনি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এছাড়া আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শারজিলের গড় মাত্র ২২, তাই এমন একজনকে সহসাই জাতীয় দলে ফেরাবে না পাকিস্তান, সেটি প্রায় নিশ্চিত। অন্যদিকে আজম খান সদ্য সমাপ্ত ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। তবে অনভিজ্ঞতা অনেকটাউ পিছিয়ে দিয়েছে তাঁকে। এক্ষেত্রে শোয়েব হতে পারেন দলটির ত্রাতা। বয়সের অজুহাতে কিছুটা অন্যায়ভাবেই বাদ দেয়া হয়েছিল এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে।
পরিসংখ্যান যেমন তাঁর পক্ষে কথা বলে তেমনি যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতাও আছে এই অভিজ্ঞ তারকার। পাকিস্তানের হয়ে বেশ কিছু স্মরনীয় ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সর্বশেষ পাকিস্তান সুপার লিগের সর্বশেষ দুই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সেরা পাঁচে জায়গা করে নিয়েছিলেন শোয়েব মালিক। সবমিলিয়ে তাই এই ডানহাতিকে আবারো ফেরানো হতে পারে জাতীয় দলে।
পাকিস্তানের কাছে এখন দুইটি অপশন হাতে রয়েছে। প্রথমত বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের উপর নির্ভর করে একই স্কোয়াড নিয়ে খেলতে যাওয়া। অথবা অফ ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে নতুন কাউকে সুযোগ দেয়া। বাবর আজমদের উপর এই অতিনির্ভরতা হয়তো আবারো ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাবে পাকিস্তানকে।
কেননা ইংল্যান্ড সিরিজ এবং এশিয়া কাপে অন্তত একটি জিনিস বোঝা গিয়েছে যে বাবর-রিজওয়ানের পরে আর কোন ভরসাযোগ্য ব্যাটসম্যান নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড জস বাটলার, বেন স্টোকসের মত সেরা তারকাদের বিশ্রাম দিয়েছিল। তরুণ হ্যারি ব্রুক, বেন ডাকেটরা সেই সুযোগে নিজেদের ভালোভাবেই প্রমাণ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তুলনামূলক নতুন হওয়া সত্ত্বেও তারা সাহসী ব্যাটিং করেছে, ঠিক এই সাহসী অ্যাপ্রোচটাই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে অনুপস্থিত।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যদি স্কোয়াডে পরিবর্তন আসে তাহলে তো ভালো; তবে এমন কিছু না ঘটলেও অন্তত খেলোয়াড়দের মানসিকতায় পরিবর্তন দেখতে উন্মুখ হয়ে আছে পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁরা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ভয়ডরহীন খেলা দেখতে চায়, তাঁরা ‘ইন্টেন্ট’ দেখতে চায়। কেননা নি:শর্ত আত্মসমর্পণের চেয়ে লড়াই করে হারাটা অনেক ভাল।