কিউই স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েলের প্রথম বলটায় জায়গা করে নিয়ে মারতে চাইলেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত বলের কাছাকাছিও ব্যাট নিয়ে যেতে পারেননি। দ্বিতীয় বলটায় জায়গায় দাড়িয়েই একইরকম শট খেলার চেষ্টা। তবে এবার পরাস্ত হয়েছেন অপ্রত্যাশিত বাউন্সের কাছে। তৃতীয় বলটায় আবার পিছনের পায়ে ভর করে লেগে টেনে খেলার চেষ্টা। এবারো পরাস্ত লিটন, নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল।
লিটন যে ভুলটা করেছেন সেটাই আসলে আজ বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের প্রতিচ্ছবি। টেকনিক্যালি দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান একবার জীবন পেয়েও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। বাকিরাও লিটনকে দেখে শিক্ষা নেননি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ক্রাইস্টচার্চের বড় মাঠটার ব্যবহারই করতে পারলেন না।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এমনিতেও খুব বেশি ছয় মারতে পারেননা। আর নিউজিল্যান্ডের বড় মাঠে কাজটা প্রায় অসম্ভবই হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। এই যেমন আজকে বাংলাদেশের পুরো ইনিংসে ছয় এসেছে মাত্র দুইটা। সেই দুইটাই আবার সোহানের ব্যাট থেকে। অথচ আফিফ, মোসাদ্দেকরা যেটা পারেন না সেটাই বারবার চেষ্টা করেছেন।
নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বড় মাঠগুলোতে খেলা হবে বলেই লিটনকে ওপেনিং পজিশন থেকে সরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। যেন লিটন মিডল অর্ডারে বড় মাঠের গ্যাপ ব্যবহার করে সিঙ্গেল, ডাবলস বের করতে পারেন। যেন মাঝের ওভারগুলোতে রানের চাকা সচল থাকে। বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের সবারই এই কাজটা করার কথা ছিল।
অথচ বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানই উল্টোটা করেছেন। বড় মাঠেও বাউন্ডারি মারতে চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডারদের হাতে ধরা পেরেছেন। মিরাজ থেকে শুরু করে মোসাদ্দেক, রাব্বি, সাকিব সবাই একই কাজ করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে ছয়জনই হয়েছেন ক্যাচ আউট। একমাত্র আফিফ হোসেন বোল্ড হয়েছেন ট্রেন্ট বোল্টের বলে।
বাকি ছয়জনই নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়েছেন। শট খেলার সময় মাঠের আয়তনের কথা তাঁরা মাথায় রাখেননি। ফলে প্রত্যেকের আউট হবার ধরনই ছিল ভীষণ হতাশাজনক।
শুরুটা হয়েছিল ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে। এরপর লিটন দাস কিংবা নাজমুল হোসেন শান্তরাও একই ভুল করেছেন। শান্ত অবশ্য ওপেন করতে নেমে একটা শুরু পেয়েছিলেন। তবে সেটাকে বড় করতে পারেননি তিনি। অনেকদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ২৯ বলে করেছেন ৩৩ রান। ব্যাটিং করেছেন ১১৩.৭৯ স্ট্রাইক রেটে।
এরপর অবশ্য আর কেউই দলের হাল ধরতে পারেননি। আফিফ হোসেন ধ্রুব ২৬ বলে করেছেন মাত্র ২৪ রান। এমনকি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আজ ব্যাট করতে নেমেছেন সাত নাম্বারে। তবে তিনিও ফিরে গিয়েছেন ১৬ বলে ১৬ করেই। শেষ পর্যন্ত আট নাম্বারে নামা নুরুল হাসান সোহান দলের মান বাঁচিয়েছেন। তাঁর ১২ বলে ২৫ রানের ক্যামিওতে বোর্ডে অন্তত ১৩৭ রান জমা করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
যদিও ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সংগ্রহ হয়তো যথেষ্ট নয়। তবুও নতুন করে সাজানো বোলিং লাইন আপ হয়তো সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছেন। অভিষেকের পর থেকে ফর্মে কারণে এই প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়লেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তাঁর জায়গায় একাদশে সুযোগ পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া সাকিব আল হাসান দলে ফেরায় বাদ পড়েছেন আরেক স্পিনার নাসুম আহমেদ। তবে, একাদশে এত পরিবর্তনেও কাঙ্খিত ফলাফলটা আদৌ বাংলাদেশ পেল কি না – তা তো জেনেই গেছেন।