স্টিভ স্মিথ, নট ফর টি-টোয়েন্টি!

টি টোয়েন্টির মেজাজটাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় এই তারকা। টিম ডেভিড, মিশেল মার্শদের মতো আক্রমণাত্নক ব্যাটারের আবির্ভাবে দলে তাঁর জায়গা এখন হুমকির মুখে।

বিশ্বজুড়ে বেজে উঠেছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দামামা। বিশ্বসেরা সব ক্রিকেটাররা সারা বছর ধরে নিজেদের প্রস্তুত করেন বৈশ্বিক আসরে সফলতার জন্য। বিশ্বজুড়ে থাকা ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকরা মুখিয়ে থাকেন প্রিয় তারকার জ্বলে উঠার অপেক্ষায়। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে এসে খানিকটা বেকায়দা পরিস্থিতিতে রয়েছেন স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা স্টিভেন স্মিথ।

টি-টোয়েন্টির মেজাজটাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় এই তারকা। টিম ডেভিড, মিশেল মার্শদের মতো আক্রমণাত্নক ব্যাটারের আবির্ভাবে দলে তাঁর জায়গা এখন হুমকির মুখে। 

স্টিভ স্মিথ নিজেও বুঝতে পারছেন কিছু একটা গড়মিল হচ্ছে। ব্যাটিংটা ঠিক ‘ছোট ব্র‍্যাডম্যান’ সুলভ হচ্ছে না। দলে নিজের ভূমিকাটাই যেন ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। ‘আমি বুঝতে পারছি আমাকে আরো বেশি আক্রমণাত্নক শট খেলতে হবে। আমি সম্ভবত অনেক বেশি রক্ষণাত্নক হয়ে পড়ছি এবং শট খেলতে বেশি সময় নিয়ে ফেলছি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের পর বলেন স্মিথ।

তাঁর বাজে ফর্মের সুযোগ যেন দুহাত ভরে কাজে লাগাচ্ছেন সদ্য দলে আসা টিম ডেভিড। সিঙ্গাপুরে জন্ম নেয়া এই অজি শেষ ম্যাচেও খেলেছেন ২০ বলে ৪২ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। তাঁর দুধর্ষ ব্যাটিংয়েই মূলত গ্যাবায় ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। 

অথচ সেই ম্যাচটা হতে পারতো স্মিথের। মিশেল মার্শের অনুপস্থিতিতে বহুদিন পর দলে নিজের পছন্দের পজিশন চার নম্বর জায়গাটা ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম নয় বল খেলে স্মিথ নেন মাত্র চারটি সিংগেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা অসাধারণ বল করছিলেন ব্যাপারটা তাও না। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি শট খেলতে ভয় পাচ্ছেন।

অথচ অন্যপ্রান্তে তাঁর সতীর্থ ডেভিড ওয়ার্নার ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলার পথে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। ১১তম ওভারে টানা চার বল ডট খেললে খানিকটা চাপে পড়েই আক্রমণাত্নক শট খেলতে গিয়ে আউট হন ওয়ার্নার। আট বল পর স্মিথের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরত যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। স্মিথ যেন কোনোভাবে নন স্ট্রাইকপ্রান্তে যেতে পারলে বাঁচেন, ফলে বল ফিল্ডারের হাতে বল থাকা সত্ত্বেও রান নিতে পড়িমরি করে ছোটেন। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় আউট হয়ে যান ম্যাক্সওয়েল।

এদিন স্মিথের মতো রান করতে ভুগতে হয়েছে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চেরও। মাত্র এক চারে ১৯ বলে ১৫ রানের কচ্ছপগতির এক ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন অজি অধিনায়ক। তবে আগের ম্যাচগুলোতে যথেষ্ট স্বাছন্দ্যেই ব্যাটিং করেছেন ফিঞ্চ। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবে একাদশে ফিঞ্চের জায়গাটা একপ্রকার নিশ্চিত।

কারো অপ্রত্যাশিত ইনজুরিতে বিশ্বকাপে দলে ক্যামেরন গ্রিনের আগমণ না হলে বিশ্বকাপে ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামবেন তিনিই। এছাড়াও শেষ ১২ ম্যাচে ফিঞ্চের ১২১ স্ট্রাইকরেট, স্মিথের ১১২ স্ট্রাইক রেটের তুলনায় বেশি। এই সময়ে ফিঞ্চ রানও করেছেন স্মিথের চাইতে ঢের বেশি। 

সর্বশেষ যে ম্যাচটাতে স্মিথ কিছুটা রান করেছেন, সেই ম্যাচেও শুরুতে ভুগেছেন। পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেললেও প্রথম ১৫ রান করতে খেলে ফেলেছিলেন ১৭ বল। সেদিন স্মিথ শেষপর্যন্ত ব্যাট করতে পেরেছিলেন স্ট্রাইকরেটটা ভদ্রস্থ জায়গায় নিতে পেরেছিলেন। সবদিন তিনি তা পারবেন না, ফলশ্রুতিতে চাপে পড়বেন অন্যপ্রান্তের ব্যাটার এবং বিপদে পড়বে দল।

মোহালিতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুন, স্মিথ যখন ৯ বলে ৮ রান করে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাটে বলে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে, ঠিক অন্যপ্রান্তে গ্রিন ব্যাট করছেন প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে। সেই ম্যাচে স্মিথ ১৪৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করলেও ব্যাটিংনির্ভর সেদিনের পিচে দুই দল মিলিয়েও বাকিদের মাঝে সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭০!

স্মিথ জানেন টিম ডেভিড কিংবা ম্যাক্সওয়েলের মতো পেশিশক্তির জোরে তিনি ছক্কা হাঁকাতে পারবেন না। তাঁকে নির্ভর করতে হয় টাইমিং এবং মাঠের খালি জায়গাটা কাজে লাগিয়ে দৌড়ে রান নিতে। কিন্তু তিনি সেটাও করতে পারছেন না ইদানীং।

ওয়ার্নারের ৭৫ রানের ইনিংসেই ছিল না পেশিশক্তির ব্যবহার, পুরো ইনিংসই ওয়ার্নার সাজিয়েছেন চমৎকার সব স্ট্রো প্লে আর রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে। স্মিথ ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাতে এই কাজটাতেই পটু ছিলেন। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে তিনি আর প্রতিপক্ষের বোলিং শিবিরে ত্রাস ছড়াতে পারছেন না। যেটা তিনি নিয়মিতই করে থাকেন টেস্ট এবং ওয়ানডেতে।

অন্যদিকে অপেক্ষার পর দলে পাওয়া সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করছেন টিম ডেভিড। গ্যাবার বিশাল বাউন্ডারি থাকা সত্ত্বেও কি অবলীলায় সীমানাছাড়া করছিলেন ইয়ানিক কারিয়াহ, ওবেদ ম্যাকয়দের। যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কেন প্রতিটি ফ্যাঞ্চাইজি অন্যতম প্রধান আকর্ষণ তিনি। ঘরোয়া মাঠে বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে অধিনায়ক ফিঞ্চের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস হতে যাচ্ছেন তিনি।

ম্যাচের পর ডেভিডের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেন ওয়ার্নারও, ‘তাঁর আগমণে আমাদের দলটা পূর্ণতা পেয়েছে। সে অসাধারণ একজন ক্রিকেটার। মিডল অর্ডারে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং নিশ্চিতভাবেই আমাদের সাহায্য করবে।’

দলে ডেভিডের পজিশন এবং রোল সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়ার্নার বলেন, ‘আপনি এই ধরনের ক্রিকেটার প্রতিদিন পাবেন না। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। আমার ধারণা নির্বাচকরা তাঁর জন্য দলে জায়গা খুঁজে বের করে ফেলবেন দ্রুতই।’

আপাতদর্শনে ছয় নম্বর পজিশনের জন্য ডেভিড এবং স্টোয়িনিসের মাঝে লড়াউ হবে মনে হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। দলে তাঁদের ভূমিকা আলাদা। স্টয়নিসের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি বল করতে জানেন। তাঁর স্লো মিডিয়াম পেস মাঝের ওভারগুলোতে কার্যকরী হয়ে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে ডেভিড পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়া কোনোভাবেই তাঁদের ছয় ব্যাটারের মাঝে চারজন স্পেশালিস্ট ব্যাটার রাখতে পারবে না। কারণ মিচেল মার্শের ইনজুরি সমস্যার কারণে তাঁর বোলিং করার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই ইনজুরি থেকে ফেরার পরই স্টয়নিস সরাসরি একাদশে ঢুকবেন এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই বললেও চলে। 

ফলে লড়াইটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে টিম ডেভিড এবং স্টিভেন স্মিথের মাঝে। স্মিথ কোনোভাবেই টি টোয়েন্টির মেজাজ বুঝে ব্যাট করতে পারছেন না, তিনি রয়ে গেছেন নিজের পূর্বের স্টাইলেই। এখন দেখার বিষয় বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে নামার আগে অস্ট্রেলিয়া কিভাবে স্মিথ আর ডেভিডের জন্য জায়গা বের করে। নাকি স্মিথকে বাদ দেয়ার কঠিন সিদ্ধান্তটা শেষপর্যন্ত নিতে হয়ে তাঁদের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...