নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২০৯ রানের লক্ষ্যে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৫২ রানে ২ উইকেট। মন্দ নয়। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কা বাদ দিলে বড় প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে এটাই গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই ইন্টেন্ট, ইম্প্যাক্টের দিক দিয়ে কিছুটা তো এগিয়েছেই বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুর সেই ইনটেন্ট তো আর শেষ দিকে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই দিনশেষে বাংলাদেশের সামর্থ্য সেই ১৬০-এই আটকে রয়েছে।
কিউইদের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ পরের তিন ওভারে করেছে ৩৪ রান। ৬ ওভারে ৫২ থেকে ৯ ওভারে ৮৬! উইকেট সেই দুটিই। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ৯ ওভারের সময় রান ছিল ৮১। অর্থাৎ বেশ সমান তালেই লড়াই হচ্ছিল তখন। পরবর্তী ১১ ওভারে ১২৩ রান কঠিন, তবে বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধরনে অসাধ্য কিছু নয়।
কিন্তু বাংলাদেশ সেটি তো করতেই পারলো না বরং শুরুর ছন্দ হারিয়ে তারা শেষ ১১ ওভারে তুলতে পেরেছে মাত্র ৭৪ রান। আরও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, বড় রান চেজের ম্যাচেও শেষ ১৯ বলে কোনো বাউন্ডারি বের করতে পারেনি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। ফলত, ম্যাচ জয়ের পথে সমানতালে এগোতে থাকা বাংলাদেশ শেষের ব্যর্থতায় ম্যাচ হেরেছে ৪৮ রানে।
নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান বাদে বাকি ব্যাটারদের একটু ব্যাটিং চিত্রটা দেখা যাক। পরের চার ব্যাটার আফিফ, নুরুল, মোসাদ্দেক আর সাইফ উদ্দিন মিলে আজকের ম্যাচে বল খেলেছেন ৩১ টি। কিন্তু ওভার প্রতি দশেরও বেশি রান করার সমীকরণে তাঁরা সবাই মিলে রান করতে পেরেছেন মাত্র ২৪ রান! আরও অবাক করা ব্যাপার হল, এই ৩১ টি বলে তারা মাত্র একটি বলেই বাউন্ডারি মারতে পেরেছে।
একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে মিডল অর্ডার থেকে লেট মিডল অর্ডারদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হয়। কিন্তু এমন বড় রানের ম্যাচে আফিফ থেকে শুরু করে কেউই উইকেটে তো দাঁড়াতে পারেননি, উল্টো বল ডট খেলে বাংলাদেশ ইনিংসে চাপ বাড়িয়েছেন। একদম স্বচ্ছ দৃষ্টিতে যদি দেখা যায়, কোনো দলের ৪ ব্যাটার যদি ২০০ রানের টার্গেটে ৫ ওভারে মাত্র ২৪ রান তোলে তাহলে আর ম্যাচের অবশিষ্ট কিছু থাকে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। সাকিবের একার লড়াইয়ের দিনে অন্যান্য ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের শামিল হয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে গ্লেন ফিলিপস যখন উইকেটে এলেন তখন ১৪ তম ওভারের খেলা চলছে। নিউজিল্যান্ডের তখন রান রেট ৯.৪২। এর কিছুক্ষণ বাদে ৬৪ করা কনওয়ে আউট হয়ে ফিরে যান। এ সময় কিউইদের রানের গতি কিন্তু কমেনি। বরং গ্লেন ফিলিপস বাংলাদেশি বোলারদের উপর চড়াও হতে শুরু করেন। ৫ ছক্কা ও ২ চারে ২৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে নিয়ে যান ২০০ এর উপর। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে ফিলিপসের মত হিটার নেই। সেটা না হয় নিঃসঙ্কোচে মেনে নেওয়া যেতেই পারে।
কিন্তু ২৪ বলে ৬০ না হোক ৪০ করা ব্যাটারও কি নেই মিডল অর্ডারে? টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ব্যবধানটা তো এখানেই তৈরি হয়। শুরুর ছন্দ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হয়। ম্যাচের সমীকরণ যেমনই থাকুক না কেন সেটিকে অতিক্রম করার ইনটেন্ট টা তো ব্যাটে থাকতে হবে। কিন্তু ম্যাচ হারার আগেই হেরে যাওয়ার মত ব্যাট করলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনোই মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব না।
আটে ব্যাট করতে আসা মোসাদ্দেক আজ বল খেলেছিলেন ১০ টি। সেই দশ বলে তাঁর রান মাত্র ৯ , কোনো বাউন্ডারি নেই। অথচ তিনি ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন ইনিংসের ১৬ তম ওভারে। শেষ চার ওভারে স্কোয়ার লেগে একটি বড় শট মারার ইনটেন্ট ব্যতিত একটি বলেও তাঁকে বোলারদের চার্জ করতে দেখা যায়নি। এটা তাঁর পেসারদের বিপক্ষে দুর্বলতা নাকি বড় শট খেলার সীমাবদ্ধতা -সেটা নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নসাপেক্ষ।
একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটিং ইনিংসে সব কিছুর মিশ্রণ প্রয়োজন। ক্যালকুলেটিভ ইনিংস, সাথে বিগ হিটিং, আর ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় টানা বিশ ওভার রান করে যাওয়া- এ সব কিছুর মিশেলেই একটি দল বড় রান চেজ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে হয় একদিন ব্যাটিং পাওয়ার ভাল হয় , নয়তো ফিনিশিং ভাল হয়। দুটি একই সাথে ভাল হয়েছে এমন ম্যাচ অতি সাম্প্রতিক কালে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েই খুঁজতে হবে।
অথচ, অন্যান্য দল গুলো ভাবনার বাইরের সমীকরণে থাকা ম্যাচ গুলোও জেতার চেষ্টা করে। মাঝে মধ্যে জেতেও। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে সেই প্র্যাক্টিসটাও হয়ে ওঠেনি, তাই ম্যাচও জেতা হয়ে ওঠে না। এজন্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনও তিমিরেই রয়েছে। সে আঁধার থেকে সহসাই যে আলো আসবে সেটিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলা যায় না।