খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থেকে জ্বলে উঠতে পাকিস্তানের চেয়ে ভাল আর কেই বা পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাঁচা মরার লড়াইয়ে সেটাই যেন করে দেখাল বাবর আজমের দল। এতদিনে এসে যেন ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগ এক সাথে পারফর্ম করল। তাতে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ৩৩ রানের বড় জয় পেল পাকিস্তান। এশিয়ান পরাশক্তিদের সেমিফাইনালের পথ এখনও খোলাই থাকল।
সিডনির মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে এদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। দুই দলই নিজেদের দলে কিছু পরিবর্তন করে। পাকিস্তান দলে ফখর জামান এর পরিবর্তে আসেন মোহাম্মদ হারিস এবং দক্ষিন আফ্রিকা দলে ডেভিড মিলার এর পরিবর্তে হেনরিখ ক্লাসেন এবং কেশব মাহারাজ এর পরিবর্তে তাবরাইজ শামসি দলে ঢোকেন।
টুর্নামেন্ট জুড়েই অফ ফর্মে থাকা পাকিস্তানের মূলশক্তি তাদের দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান নামেন ব্যাটিংয়ে। এদিনও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি তারা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওয়েইন পারনেল এর বলে বোল্ড হয়ে ৪(৪) সাজঘরে ফেরেন রিজওয়ান।
তিন নাম্বারে নামা মোহাম্মদ হারিস নেমেই প্রতি আক্রমণ শুরু করেন আফ্রিকান বোলার দের ওপরে। মাত্র ১১ বলে ৩ ছয়,আর ২ চারের মারে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আনরিখ নরকিয়ার বলে আউট হোন হারিস।
পরের ওভারেই পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম, এনগিডির বলে রাবাদার দারুণ এক ক্যাচে আউট হয়ে ১৫ বলে মাত্র ৬ রান করে আউট হন। পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তোলে।
এরপরই মূলত শুরু হয় পাকিস্তানের প্রতিরোধ। শান মাসুদের আউট হওয়ার পরে ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ নাওয়াজ,তাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ৫২ রানের জুটি বেঁধে প্রাথমিক ধাক্কা টা সামাল দেন ইফতিখার আহমেদ। এরপর মোহাম্মদ নাওয়াজের আউটের পর শাদাব খান পিচে এসে যেন টনের্ডো বইয়ে দেন।
আউট হওয়ার আগে , ২২ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন।যেখানে আনরিখ নরকিয়াকে পরপর দুইবলে ২ ছয় সহ মোট ৪ ছয়, ৩ চারে ২৩০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ঝড়ো ইনিংস খেলেন। আফ্রিকান কোন বোলারেরই যেন শাদাব এর ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে কোন উত্তর জানা ছিল না।
অপরদিকে ইফতিখার আহমেদও ৩৫ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে এই টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি পূরণ করেন। নিজেদের ইনিংসের ৭ ওভারে এক পর্যায়ে ৪৯/৪ থেকে ২০ ওভার শেষে ১৮৫/৯ রানে শেষ করেন। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ইফতখার আহমেদ ৫২, শাদাব খান ৫১, মোহাম্মদ হারিস ২৮ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে এনরিচ নরকিয়া ৪১ রানে ৪ উইকেট লাভ করেন।
জিতলেই সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত। এই লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং এ নামেন দুই ওপেনার ডি কক এবং অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে মোহাম্মদ হারিস কে ক্যাচ দিয়ে ০ শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান ডি কক। নিজের পরের ওভারে আবারও আঘাত হানেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, এবারে ফেরান ফর্মে থাকা রাইলি রুশোকে।
কিন্তু অধিনায়ক বাভুমা, এইডেন মার্করাম কে সাথে নিয়ে ছোটখাটো প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে,দুজনে মিলে ২৭ বলে ৪৯ রানের পার্টনারশিপ করার পরে ইনিংসের অষ্টম ওভারে শাদাব খানের করা ওভারের প্রথম এবং তৃতীয় বলে বাভুমা এবং মার্করাম দুজনই আউট হয়ে গেলে চাপে পড়ে আফ্রিকানরা।
এরপরই আসে বৃষ্টি, প্রায় ১ ঘন্টার মত খেলা বন্ধ থাকার পরে পুনরায় খেলা শুরু হয়। ডিএল মেথড অনুযায়ী আফ্রিকানদের নতুন টার্গেট দাঁড়ায় ১৪ ওভারে ১৪২। বৃষ্টির পরের ৫ ওভারে আফ্রিকানদের প্রয়োজন ছিল ৭৩ রান। কিন্তু নাসিম শাহ, মোহাম্মদ ওয়াসিমদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এর ফলে আর বেশিদূর এগোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
বড় শট খেলার প্রবনতায় একে একে ট্রিসটান স্টাব ,হেনরিখ ক্লাসেন, ওয়েন পার্নেল সবাই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত গেলে নির্ধারিত ১৪ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে কেবল ১০৮ রান সংগ্রহ করতে পারে। সাথে সাথে ৩৩ রানে পরাজিত হয়। আফ্রিকানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন অধিনায়ক বাভুমা, এছাড়া মার্করাম করেন ২০ রান।পাকিস্তানের পক্ষে ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন শাহীন শাহ আফ্রিদি,এছাড়া শাদাব খান নেন ২ উইকেট। ম্যাচ সেরা হন শাদাব খান।
এই জয়ের সাথে সাথে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে গেল। আর দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নাম্বারে অবস্থান করছে। পাকিস্তান তাদের পরবর্তী ম্যাচে বাংলাদেশের মুখমুখি হবে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের পরবর্তী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে। এই দু’টি ম্যাচেই নির্ভর করছে সেমিফাইনালের লাইন আপ।