রশিদ খানের বিফলে যাওয়া ইনিংস

অ্যাডিলেড। রশিদ খানের জন্য বড্ড চেনা মাঠটা। বিগব্যাশটা তো খেলেছেন এই অ্যাডিলেডের হয়েই। তাই নিজের আরেক ‘ঘরের মাঠ’ বললেও খুব একটা ভুল হয় না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাও হলো, রশিদের চেনা এই মাঠে। বল হাতে আজিদের বিপক্ষে একটি উইকেট পেলেন বটে। কিন্তু সেটা যেন রশিদ খানের মতো বোলিং ফিগার না।

৭.২৫ ইকোনমিতে বল করলেন। একটি মাত্র উইকেট পেলেন, তাও সেটি অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি নাগালের বাইরে যাওয়ার পর। তবে কি ব্যক্তিগত, দলগত-দুইয়েরই ব্যর্থতায় শূণ্য প্রাপ্তিতে শেষ হবে রশিদ খানের বিশ্বকাপ মিশন? এমন শঙ্কাটা শেষ পর্যন্ত দূর হয়েছে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে। দুই পরিত্যাক্ত ম্যাচে রশিদ খানরা দুই পয়েন্ট পেয়েছে। এ বাদে তারা এবারের বিশ্বকাপে জয়শূণ্য। সেই শূণ্যতার ক্ষত মুছতেই যেন রশিদ খান রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন ব্যাটিংয়ে।

ব্যাটিংয়ের সময় আফগানদের সমীকরণ যখন ১৮ বলে ৪৯, ঠিক সেই মুহূর্তটিকেই রশিদ খান পাল্টে দিলেন কিছুক্ষণের মাঝে। প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচটিকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে আনলেন ২ বলে ১১ রানের সমীকরণে। অজিরা শেষ পর্যন্ত ৪ রানে ম্যাচটা জিতেছে বটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল আফগান এই অলরাউন্ডার। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ ম্যাচে রশিদ খান খেলেছেন ২৩ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো এক ইনিংস। দিনশেষে ম্যাচটা জেতাতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু একটা রেকর্ড করেছেন এই ইনিংসের মাধ্যমে। ইতিহাস বলে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল ৪৬। গতবারের বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির ক্রিকেটার কিপলিন দোরিগা ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে এই ইনিংসটি খেলেছিলেন। প্রায় এক বছর পর সেই রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন রশিদ খান। অজিদের বিপক্ষে আজ ৪৮ রানের ইনিংসটি খেললেন ঠিক আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে। 

স্লগ শটে সব সময়ই পারদর্শী ছিলেন রশিদ খান। কব্জির মোচড়ে যেকোনো বল স্কোয়ার লেগের দিকে মেরে বাউন্ডারি মারতে পারতেন অবলীলায়। দুর্দান্ত এ ইনিংস খেলার পথে আজ সেই অঞ্চলেই টার্গেট করেছিলেন রশিদ খান। নিজের মারা ৪ ছক্কার মাঝে দুটি ছয়ই হাঁকিয়েছেন স্লগ শট খেলে। তবে এ দিন শুরু থেকেই যে বিধ্বংসী রূপে ছিলেন তা কিন্তু নয়। নিজের খেলা প্রথম ৯ বলে তুলেছিলেন ৮ রান। কোনো বাউন্ডারিও ছিল না। কিন্তু এরপরই শুরু করেন চার ছক্কার ফুলঝুরি। পরের ১৪ বলে করেন ৪০ রান! আর সেই ৪০ রানের মাঝে ৪ ছক্কা আর ৩ চারের মাধ্যমে বাউন্ডারি থেকেই তুলেছিলেন ৩৬ রান। 

এ দিকে, সেমিফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে এ ম্যাচটি জিততেই হতো অস্ট্রেলিয়াকে। তবে ইংল্যান্ডকে রান রেটে পিছনে ফেলতে আফগানিস্তানকে ১০৬ রানের ব্যবধানে হারাতে হতো তাদের। অ্যাডিলেডে হওয়া এ ম্যাচে সেটি তো হয়ই নি, বরং কোনোভাবে ম্যাচ জিতে দুটি পয়েন্ট তারা নিজের দখলে নিতে পেরেছে। এখন অজিদের সেমিফাইনাল স্বপ্ন টিকে আছে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচের উপর। সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতলেই তবে সেমিতে যেতে পারবে অস্ট্রেলিয়া। আর ইংল্যান্ড জিতলে গত বারের চ্যাম্পিয়ন এবার ঘরের মাঠে হওয়া বিশ্বকাপে সুপার-১২ থেকেই বাদ পড়ে যাবে। 

আর গ্রুপ ‘এ’ তে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করতে হচ্ছে আফগানিস্তানকে। পুরো টুর্নামেন্টে রশিদ খানের এই ঝলকটুকু বাদ দিলে দল হিসেবে আফগানিস্তান এবার বেশ বিবর্ণই ছিল। জয়শূণ্য একটা বিশ্বকাপ অভিযান তাই খুব তাড়াতাড়িই ভুলে যেতে চাইবে রশিদ খানরা। এমনকি নিজের এমন ইনিংসের পরও খুব একটা আত্মতৃপ্তিতে তুষ্ট হওয়ার কথা না রশিদ খানের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এ ফেরিওয়ালার এমন পারফর্মেন্স তা আর নতুন কিছু নয়, যেটি নিয়ে তিনি আত্মকেন্দ্রিকতায় মগ্ন হয়ে যাবেন। রশিদ খান একজন সত্যিকারের পারফর্মার। আর তার উপরে তিনি একজন টিমম্যান।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link