খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে শেষ ধাক্কাটা খেয়েই গেল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। এই আসরে পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর যাত্রার সমাপ্তি আপাতত এখানেই। সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে এবারের আসরের রানার্স আপ তকমাতে। সেই সাথে ক্রিকেটবিশ্ব পেয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল ইংল্যান্ডকে। আপাতত মহারণের সমাপ্তিও ঘটলো এখানেই।
এই ম্যাচে পাকিস্তান বিশাল ভুলটা কোথায় করেছে? কোন বড় ভুলে ম্যাচ হাতছাড়া করেছে? একটু ঘেঁটে দেখা যাক। দলটি গণ্ডগোল পাকিয়েছে আসলে ডেথ ওভারে। ডেথ ওভারে পাকিস্তান হারিয়েছে চার-চারটি উইকেট। আর রান সংগ্রহ করেছে মোটে ১৮ টি। প্রথম ষোল ওভারের পর পাকিস্তানের অবস্থান ছিল চার উইকেটে ১১৯ রান।
কিন্তু, শেষ চার ওভারে স্কোরবোর্ডে কেবল ১৮ রান সংগ্রহ করে মোট ১৩৭ রানে গিয়ে থামে তাঁরা। ইংল্যান্ডের মতো একটি শক্তিশালী দলের জন্য তা মামুলি টার্গেটই বলা চলে। উল্লেখ্য পাকিস্তানের আজকের করা রান এই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ইনিংসে দলটির সর্বনিম্ন রান সংগ্রহ ছিল।
নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তিতুল্য অধিনায়ক এবং আইপিএলের চেন্নাই সুপার কিংসের বর্তমান কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং পাকিস্তানের ডেথ ওভারে এমন নড়বড়ে দশাকে দলটির হারের জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে আপনাদের জানা উচিত স্কোর বোর্ডে কত করতে হবে এবং কত করলে তা প্রতিযোগিতামূলক হবে। শেষ চার ওভারে মাত্র ১৮ রান নেয়াকে আমি মনে করছি বেশ বড় ভুল।’
ফ্লেমিং আরও বলেন, ‘এমনকি ডেথ ওভারগুলোতে দশ রান করে নিলেও আপনারা ১৬১ রানে পৌঁছাতে পারতেন। যদি আপনার একটি ভাল ওভার থাকে তবে আপনি অনায়াসে ১৬৫ রানও করে ফেলতে পারতেন। যেই স্কোর আমরা যা দেখেছি তাঁর চেয়ে বেশি প্রতিযোগীতামূলক হিসেবে বিবেচিত হতো। বিশেষ করে ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়াটা ছিল অপ্রত্যাশিত। সম্ভবত আরো দ্রুত এবং আরও নিপুণ পেস আক্রমণ করা উচিত ছিল পাকিস্তানের। সবমিলিয়ে কিন্তু পাকিস্তান একটি বিশাল কৌশল মিস করেছে। সেটি হলো পাকিস্তান মাঠের ধরণ ও কন্ডিশন ভালোভাবে পরখ করেনি।’
সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘দলগুলো প্রায়শই এমসিজিতে গিয়ে সেই চিরায়ত চিন্তা করে। তাঁরা ভাবে আমরা ষোল ওভার পর্যন্ত দেখে শুনে খেলব এবং তারপর আমরা ওভারপ্রতি ১৫ রান করে একটি দুর্দান্ত স্কোর পাব। কিন্তু এমসিজি আসলে সেই রকম গ্রাউন্ড নয়।’
পাকিস্তানের শেষ তিন স্বীকৃত ব্যাটার শান মাসুদ, শাদাব খান এবং মোহাম্মদ নওয়াজ – সবাই এমসিজিতে বড় হিট করার চেষ্টা করতে গিয়েই ধরা পড়েছেন। ফ্লেমিং ব্যাটারদের এই আচরণকে স্মার্ট ভাবছেন না একদমই।
এদিকে বাবর আজমের উইকেটকেই পাকিস্তানের ইনিংসের টার্নিং পয়েন্ট মনে করছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার টম মুডি। তাঁর মতে, ‘বারোতম ওভারে বাবরকে আউট করার পর, ম্যাচটি পাকিস্তানের হাতছাড়া হতে শুরু করে। পাকিস্তানের কাছ থেকে এটি বেশ হতাশাজনক ফিনিশিং ছিল। তারা যা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত ছিল এবং শেষ দশ ওভারে তাদের ব্যাটিংয়ে দুর্বল ব্যবস্থাপনা ছিল।’
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ও প্রধান কোচ অনিল কুম্বলেও স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের সাথে একমত হয়েছেন। পাকিস্তানের হারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ফ্লেম (ফ্লেমিং) যেমন উল্লেখ করেছেন, তারা সম্ভবত বাউন্ডারি এবং ছক্কার কথা ভাবছিল এবং তাড়াহুড়ো করছিল। আমি মনে করি সেই সময়ে শান মাসুদের আউট হওয়া অবশ্যই পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করেছিল।’
যাই হোক সব কথার এক কথা হলো শেষ অবধি পারলোনা পাকিস্তান। লড়াই করে এতোটা পথ এসেও, পরাজয়ের মেনেই দেশের পথ ধরতে হবে মেন ইন গ্রিনদের। সঙ্গী হিসেবে কেবল শিরোপা হাতছাড়া করার এক আকাশ আক্ষেপ।
পাকিস্তানের এই মিডল অর্ডারের ঘাটতির কথা টুর্নামেন্টের অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছিল। কিন্তু, পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা আমলে নেয়নি একদমই। টুর্নামেন্টের অন্তিম ম্যাচে এসে সেই ভুলেরই মাশুল দিতে হল পাকিস্তানকে।