চার ক্রোয়াটের ভিন্নধর্মী গল্প

টানা দ্বিতীয়বারের মত সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপের মাঝারি সারির দলটির জন্য এমন অর্জন নেহাৎ কম নয়। অবশ্য নামের ভারে পিছিয়ে থাকলেও ইউরোপের দলটিকে ছোট করে দেখার কিছু নেই, ইতোমধ্যে আসরের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে তাঁরা।

এই দলে রয়েছে লুকা মদ্রিচের মত ব্যালন ডি’অর জয়ী ফুটবলার। সেই সাথে রয়েছেন এমন কিছু তারকা যাদের জীবনের গল্প শুনলে অবাক হতে হবে।

  • ইভান পেরিসিচঃ

ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের আক্রমণভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং কার্যকরী খেলোয়াড় ইভান পেরিসিচ। ক্লাব ফুটবলেও তিনি খেলেন টটেনহ্যামের মত বড় ক্লাবে। তবে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর আগে পেরিসিচ ছিলেন নিতান্তই একজন মুরগীর খামারি। পরিবারের সঙ্গে একসাথেই কাজ করতেন মুরগীর ফার্মে।

ক্রোয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী শহর স্পিটে বসবাস করতো ইভান পেরিসিচের পরিবার। পারিবারিক সূত্রে মুরগির খামারেরর মালিক ছিল তারা; ছোটবেলায় বাবার সাথে সেই খামারেই কাজ করতে শুরু করেন পেরিসিচ। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ছিল অসীম। তাই তাঁর স্বপ্ন ছিল একটাই- ফুটবলার হয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানো। ২০০৬ সালে ফ্রান্সের সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাব সোশোর হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন এই উইঙ্গার।

২০১১ সালে জাতীয় দলে সুযোগ পান পেরিসিচ, জাতীয় দলে তাঁকে নেয়ার জন্য কোচকে অনুরোধ করেন পেরিসিচ৷ এমনকি বল বয়ের দায়িত্ব পালন করতেও রাজি ছিলেন তিনি। তবে এখন বল কুড়িয়ে আনার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করে ফেলেছেন ক্রোয়াট তারকা।

  • ডোমিনিক লিভাকোভিচঃ

অনেক ফুটবলারের মত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসতে হয়নি ডোমিনিক লিভাকোভিচকে। লিভাকোভিচের পরিবার শুরু থেকেই বেশ অবস্থাসম্পন্ন ছিল। বাবা ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্রোয়েশিয়া সরকারের সাবেক মন্ত্রী, দাদা ছিলেন ডাক্তার এবং দাদি ছিলেন শিক্ষিকা- তাই সব মিলিয়ে পড়াশোনার দিকেই বেশি ঝোঁক ছিল লিভাকোভিচের।

স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন বড় কূটনীতিবিদ হবেন। কিন্তু স্থানীয় এক ফুটবল কোচের অনুপ্রেরণায় বদলে গিয়েছে লিভাকোভিচের ভাগ্য, এখন তিনি পুরোদস্তুর পেশাদার ফুটবল।

কাতার বিশ্বকাপেই বিস্ময়কর সব সেভের মাধ্যমে এরই মধ্যে ক্রোয়েশিয়ানদের মন জয় করে ফেলেছেন লিভাকোভিচ; তবে গ্লাভস জোড়া তুলে রাখার পর লিভাকোভিচ কূটনীতিবিদ পেশায় ফিরতে চান।

  • দেয়ান লোভরেনঃ

ক্রোয়েশিয়ার হয়ে খেলেন, অথচ জীবনের অনেকটা সময় জানতেন না ক্রোয়েশিয়ান ভাষা। ক্রোয়েশিয়ার দেয়ান লোভরেনের গল্পটা এমনই। সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধের কারণে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার দেয়ান লোভরেনের মা-বাবা পালিয়ে মিউনিখে আসেন, তখন লোভরেনের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। মিউনিখে তারা শরণার্থী হিসেবে ছিলেন সাত বছর। এসময় জার্মান ভাষা শিখেছিলেন লোভরেন এবং স্থানীয় ক্লাবে ফুটবল খেলতেন।

কিন্তু এরপরই জার্মান সরকারের নির্দেশে ক্রোয়েশিয়া ফিরে যেতে হয় লোভরেনের পরিবারকে, দেশে ফিরে ভাষাগত সমস্যায় পড়েন তিনি। আশেপাশের সবার বিদ্রুপও সহ্য করতে হয়েছিল এজন্য। শেষমেশ ক্রোয়েশিয়ান ভাষা শিখতে প্রায় কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল লোভরেনের। বর্তমানে দলটির রক্ষণভাগের গুরুত্বপূর্ণ সেনানি তিনি।

  • মার্চেলো ব্রজোভিচঃ

সব পরিবারই চায় সন্তান পড়ালেখা করে বড় চাকরি করুক, তাই অধিকাংশ খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারের শুরুতে তেমন একটা পারিবারিক সমর্থন পান না। কিন্তু মার্চেলো ব্রজোভিচ সমর্থন একটু বেশিই পেয়েছিলেন। এই মিডফিল্ডারের বাবা পেশায় ছিলেন কসাই। ব্রজোভিচের যখন ষোল বছর বয়স তখন ছেলকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন তিনি।

কারণ স্কুলে থাকলে ফুটবলে পুরো মনোযোগ দিতে পারবেন না ব্রজোভিচ। বাবার এমন সিদ্ধান্ত যে ক্রোয়েশিয়া এবং ব্রজোভিচ উভয়ের উপকারে এসেছে তা মেনে নিতেই হবে। বিশেষ করে লুকা মদ্রিচের সঙ্গে যুক্ত ক্রোয়াট মিডফিল্ডকে যেভাবে গুছিয়ে তুলেছেন ব্রজোভিচ সেটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link