পেনাল্টি বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না কাতার বিশ্বকাপের; এত এত উন্নত প্রযুক্তি আর ক্যামেরার ব্যবহার সত্ত্বেও পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট মিলছে না। গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে লিওনেল মেসি, ঘানার বিপক্ষে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে রিচার্লিসনের পেনাল্টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সবশেষ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জুলিয়ান আলভারেজের পেনাল্টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ম্যাচের ৩২তম মিনিটের কথা, বল নিয়ে ক্রোয়াটদের বক্সে ঢুকে পড়া জুলিয়ান আলভারেজকে আটকে দিতে গোললাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ। তবে বল আটকাতে না পারলেও লিভাকোভিচের শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আটকে যান স্বয়ং আলভারেজ। সাথে সাথেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি ড্যানিয়েল ওর্সাটো। স্পট কিক থেকে দলকে এগিয়ে নিতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
কিন্তু ইতালিয়ান রেফারির এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। মাঠে তো বটেই, ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও রেফারির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি তারা। দলটির অধিনায়ক লুকা মদ্রিচের চোখে আর্জেন্টিনার ম্যাচটি সবচেয়ে বাজে রেফারিংয়ের নমুনা ছিল।
রিয়াল মাদ্রিদ এবং ক্রোয়েশিয়ার এই তারকা মিডফিল্ডার রেফারিং নিয়ে খুব বিরক্ত ছিলেন, খেলার পরে তিনি বলেন, ‘ওর্সাটো আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ, সে একটি বিপর্যয়! পেনাল্টি আমাদের ধ্বংস করেছে।’
শুধু ক্রোয়াট ফুটবলাররাই নয়, ম্যাচ অফিশিয়ালদের সমালোচনায় মেতে উঠেছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমও। কাতারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ক্রোয়েশিয়ার ৩-০ গোলে পরাজয়ের জন্য ইতালীয় রেফারি ড্যানিয়েল ওর্সাটো এবং ফিফাকে দায়ী করেছে ক্রোয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম। অবশ্য ভাল খেলার জন্য আর্জেন্টিনার প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেনি তারা।
ক্রোয়েশিয়ার জনপ্রিয় একটি পত্রিকা লিখে, আর্জেন্টিনা ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে। কিন্তু কে জানে, বিতর্কিত সেই পেনাল্টির ঘটনা না ঘটলে হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতো। ইতালিয়ান রেফারি ওর্সাটো এমন ভুল না করলে ক্রোয়েশিয়া নিশ্চয়ই আরো ভাল ফুটবল খেলতে পারতো সেদিন।
আরেকটি সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করে যে, ‘এটি মেনে নিতেই হবে যে আর্জেন্টিনা তুলনামূলক ভাল দল ছিল। কিন্তু এটাও স্পষ্ট যে ফিফা লিওনেল মেসির পক্ষ অবলম্বন করার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের বার বার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো যে ওর্সাটো কি আমাদের জন্য জল্লাদ হয়ে এসেছে?’ কিছুই আমাদের সাথে ছিল না এদিন; মাঠে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স অগুছালো ছিল। কিন্তু এটা সত্য যে, আমরা ম্যাচে পিছিয়ে পড়েছিলাম এমন একটি সিদ্ধান্তে, যেটা সম্পূর্ণ আমাদের পক্ষে আসা উচিত ছিল।’
এতকিছুর পরেও ক্রোয়েশিয়ার সাংবাদিকরা ঘরের ছেলেদের অভিনন্দন জানিয়েছে। দেশের সাধারণ জনগনও সেমিফাইনালে এমন হারকে মেনে নিয়েছে। তাঁরা মদ্রিচ, পেরিসিচদের অর্জনকে উদযাপন করার জন্য পার্টির আয়োজন করেছিল ম্যাচের পরে।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেস প্যানাডিচ বলেন, ‘এই ছেলেরা দেশের নায়ক; তারা যা করেছে সেটি পুরো দেশের সাফল্য। এমন অর্জনের জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত আমাদের।’ বিখ্যাত টেনিস প্লেয়ার নোভাক জোকোভিচও মদ্রিচ, লিভাকোভিচদের অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি।
২০১৮ সালের পর ২০২২ সালের বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত ছিল ক্রোয়েশিয়া, শেষটা সুন্দর না হলেও দেশের মানুষকে গর্বিত করেছে ক্রোয়াট ফুটবলাররা। শিরোপা জিততে পারেনি ঠিকই, তবে এই দলের অনুপ্রেরণাতেই হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে।