চশমার আবরণে চোখেমুখে নিজ দেশের ক্রিকেট আকাশ রক্ষার অনিন্দ্য এক স্বপ্ন।
চশমা চোখে বাইশ গজের ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের আগ্রাসনের দৃশ্যায়ন যে একেবারে হয়নি তা কিন্তু নয়। হ্যঁ। সংখ্যায় হয়তো নগণ্য। তবে ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম হয়েছে এই চশমা পরা ক্রিকেটারদের বদৌলতেই।
কিউই অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সিগনেচার স্টাইলই ছিল তাঁর চশমা। খেলোয়াড়ি জীবনে কতশত ব্যাটারদের যে স্পিন ভেলকিতে ভুগিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে সাইদ আনোয়ারের সেই ১৯৪ রানের ইনিংসকে প্রথম ছুঁয়েছিলেন এক চশমা পরিহিত বাঁ-হাতি ব্যাটার। তিনি জিম্বাবুয়ের চার্লস কভেন্ট্রি। এ ছাড়া লেগ স্পিন দিয়ে উপমহাদেশের ক্রিকেটে কিংবদন্তী বনে যাওয়া অনিল কুম্বলেও একটা সময় চশমা পরেই বল করতেন। তাঁর সতীর্থ বিরেন্দর শেবাগকেও বেশ কিছু ম্যাচে চশমা পরেই ব্যাটিংয়ে নামতে দেখা গেছে।
বর্তমান সময়েও অবশ্য তাদের ধারক হিসেবে চশমা পরিহিত ক্রিকেটারদের দেখা মেলে। তবে খুব বেশি তাদের লাইমলাইটে দেখা যায় না। আড়ালেই থেকে যায় তাদের গল্পগুলো। মূলত বর্তমানে চশমা পরিহিত ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। চলুন চশমার বৃত্তে আটকে বাইশ গজ সামলানো বর্তমান ক্রিকেটারদের চিনে নেওয়া যাক।
- জ্যাক লিচ (ইংল্যান্ড)
জ্যাক লিচকে না চেনার সামান্যতম কারণও নেই। একটু স্মৃতি হাতড়ে ২০১৯ সালের অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টের কথা স্মরণে আনলেই হয়। শেষ উইকেট জুটিতে বেন স্টোকস যাকে নিয়ে সেই প্রায় অসম্ভব পথটা পাড়ি দিয়েছিলেন সেই তিনি হলেন জ্যাক লিচ।
২০১৮ সালে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল এ বাঁ-হাতি স্পিনারের। চশমা পরে বাঁ-হাতি স্পিনটা যে তিনি ভালই করে গেছেন তা তাঁর পরিসংখ্যানেই মেলে। টেস্ট অভিষেকে ৪ বছরের মাঝেই শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ইংলিশ টেস্ট একাদশে এখন পর্যন্ত পেসারদের ভীড়ে একজন স্পিনার থাকলেও এই জ্যাক লিচকেই বিবেচনা করা হয়। বলাই বাহুল্য, চশমার আবরণে বাইশ গজের বৃত্তে তিনি ভালভাবেই নিজেকে আটকে নিতে পেরেছেন।
- মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
চশমা পরা বাঁ-হাতি স্পিনার- কিউই ক্রিকেটে এমন কিছুর দৃশ্যায়ন ঘটিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। সেই ভেট্টোরি ক্রিকেট ছেড়েছেন , বহু বছর হল। তবে তাঁর ধারাবাহিকতায় আরো একজন চশমা পরিহিত বাঁ-হাতি স্পিনারের অগ্রযাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন ভেট্টোরি। আর তাঁর প্রস্থানের সাথে সাথেই আগমন ঘটে মিচেল স্যান্টনারের। কিউইদের তিন ফরম্যাটেই বর্তমানে অটোমেটিক চয়েস তিনি। বোলিংয়ের পাশাপাশি ভেট্টোরির মত ব্যাটিংটাও ভালই পারেন স্যান্টনার। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে ২১৭ টি উইকেটের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে দুই হাজারের বেশি রান করেছেন কিউই এই অলরাউন্ডার।
- ইমাম উল হক (পাকিস্তান)
চশমা পরে ব্যাটিং করেন- বর্তমানে এমন ব্যাটার খুঁজে বের করা বেশ দুস্করই। তবে এ অনুসন্ধান সহজ হয়ে যায়, আইসিসি’র ওয়ানডে ব্যাটারদের র্যাংকিং দেখলেই। শীর্ষ ব্যাটারদের সে তালিকায় দুই নম্বরে থাকা ব্যাটারই তো চশমা পরে ব্যাটিং করতে নামেন। তিনি পাকিস্তানের ইমাম উল হক। যিনি আবার পাকিস্তানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ইনজামাম উল হকের সম্পর্কে ভাতিজা।
পাকিস্তানের হয়ে সাদা আর রঙিন, দুই পোশাকে খেললেও এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ সফল ইমাম। এই ফরম্যাটে ৫২.৬৬ গড়ে আড়াই হাজারের বেশি রান করেছেন তিনি। ৫৪ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে হাঁকিয়েছেন ৯ টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি। আগামী ২০২৩ বিশ্বকাপে তাই বেশ বড় একটা ভূমিকায় পালন করতে হবে ইমাম উল হককে।
- আবরার আহমেদ (পাকিস্তান)
এই ডিসেম্বরেই টেস্টে অভিষেক হয়েছে আবরার আহমেদের। চোখে চশমা পরা এই ২৪ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার প্রথম টেস্টেই দেখিয়েছেন নিজের কারিশমা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে খেলতে নেমেই ছুঁয়েছেন ৪৬ বছরের পুরনো এক রেকর্ড।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ১৩তম বোলার হিসেবে অভিষেকেই নিয়েছেন প্রতিপক্ষের প্রথম ৫ উইকেট। আর এ কীর্তিটা তিনি গড়েছেন সে টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই। আর সব মিলিয়ে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ টি উইকেট নিয়ে মোট ১১ টি উইকেট নেন আবরার।