কেন মাদ্রিদকেই বেছে নিলেন ব্রাজিলের এনড্রিক?

প্রায় এক যুগ আগের কথা; ইউরোপ তখন মজেছিল নেইমার জুনিয়র নামের এক ব্রাজিলিয়ান তরুণের ফুটবলীয় প্রতিভায়। সান্তোসের হয়ে খেলা নেইমার তখন গড়ে উঠছিলেন নেক্সট বিগ থিঙ হয়ে। অন্য অনেক ইউরোপীয় বড় ক্লাবের মত রিয়াল মাদ্রিদও চেয়েছিল নেইমারকে নিজেদের স্কোয়াডে ভেড়াতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা নেইমারকে নিয়ে যায়। গুঞ্জন রয়েছে, নেইমার নাকি রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি করার কাছাকাছিই ছিলেন।

একযুগ আগে নেইমার জুনিয়রের ট্রান্সফার ব্যর্থ হওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ হয়ে উঠেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ভক্ত। উদীয়মান কোন সেলেসাও ফুটবলারের খবর পেলেই তাঁর উপর নজর রাখতে শুরু করেন তিনি। গত কয়েক বছরে ভিনিসয়াস জুনিয়র, রেইনিয়ের জেসুস, রদ্রিগো সিলভার মত প্রতিভাবান ব্রাজিলিয়ানদের দলে টেনেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর দলটির সেলেসাও কালেকশনে নতুন সংযোজন এন্ড্রিক ফেলিপে।

ব্রাজিলের ক্লাব পালমেইরাস কিশোর এনড্রিক ফেলিপেকে ঘষেমেজে তৈরি করেছিল। ক্লাবের একাডেমি ছেড়ে যুব দলে আসতেই তাঁর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে। বয়সটা আঠারো ছোঁয়ার আগেই ফুটবল বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তিরা ছুট লাগায় এনড্রিকের জন্য। আর এই দৌড়ে বিজয়ীর নাম রিয়াল মাদ্রিদ। ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাঁকে পেয়েছে দলটি, তবে স্পেনে উড়াল দেয়ার জন্য এই তরুণকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

অবশ্য শুধু টাকার জোরেই জিতেনি মাদ্রিদের রয়্যাল ক্লাবটি। পিএসজি, চেলসির মত ক্লাবগুলোও প্রস্তুত ছিল এনড্রিক ফেলিপের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতে; পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর লুইস ক্যাম্পস তো ব্রাজিলেও গিয়েছিলেন এই ফুটবলারের জন্য। কিন্তু এনড্রিক বেছে নিয়েছে অল হোয়াইটদের। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটিই একটি সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন তিনি।

এনড্রিক ফেলিপে বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ খুবই বড় দল। আমার বন্ধু ভিনি (ভিনিসিয়ুস জুনিয়র) সেখানে খেলে, সে আমাকে মেসেজ করে পরামর্শ দিয়েছে। আবার আমার আদর্শ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও দলটির হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এজন্যই আমি রিয়াল মাদ্রিদকে বেছে নিয়েছি এবং আমি মনে করি এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। ঈশ্বর সবসময় আমার সাথে ছিলেন এবং তিনি আমাকে বলেছেন যে এটি সর্বোত্তম পথ।’

এরপর এনড্রিক ফেলিপে তাঁর সঙ্গে ভিনি জুনিয়রের দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্বের বর্ণনা দেন। এনড্রিক জানান, ‘ভিনি আমাকে অনেক উপদেশ দেয়। এগুলোর পরিমাণ এত বেশি যে সব বলতে চাইলে অনেক সময় প্রয়োজন হবে। যেহেতু আমি এখানে বলতে পারছি না তাই আমার মধ্যেই রেখে দিচ্ছি। তবে এটা বলতে পারি যে এসব উপদেশ শুধু ফুটবল সম্পর্কিত না বরং আমার পুরো জীবন সম্পর্কেই। ভিনি আমার বন্ধু এবং আমি মনে করি এই বন্ধুত্ব অনেক বছর টিকবে। আমি আশা করি আমি তার সাথে অনেক পাস আদান-প্রদান করতে পারব এবং গোল করতে পারব।’

লস ব্ল্যাঙ্কোসদের ড্রেসিংরুমে যেমন কয়েকজন ব্রাজিলিয়ান তারকাই আছে তেমনি ব্রাজিলের সাথে তারা একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যা তাদের উদীয়মান ফুটবলার সংগ্রহ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। আর তাই রিয়াল মাদ্রিদ অন্তত নিশ্চিতভাবে বলতে পারে যে, ব্রাজিল ফুটবলের ভবিষ্যতের বড় একটা অংশ তাদের হাতেই থাকবে।

এই মুহূর্তে রিয়াল মাদ্রিদে রয়েছে তিনজন ব্রাজিলিয়ান – ভিনি জুনিয়র, রদ্রিগো সিলভা এবং এডার মিলিটাও। এছাড়া লোনে আছে রেইনিয়ের জেসুস। এদের মধ্যে ভিনি এবং মিলিটাও দলটির নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড়। এছাড়া রদ্রিগোও সুপার সাব হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এবার পালা এনড্রিক ফেলিপের; নিজের স্বপ্নের ক্লাবে এসে স্বপ্নীল পারফরম্যান্সই করবেন এমনটাই চাইবেন তিনি; তাঁকে নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদটাও একটু উঁচুতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link