রান, বাউন্ডারি বৃষ্টি, শতক, অর্ধশতক – কি ছিলো না চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আর খুলনা টাইগার্স ম্যাচে। শীতের রাতে দর্শকদের মাঝে উত্তাপ ছড়িয়েছে এই দুই দলের দ্বৈরথ। প্রথম ইনিংসে আজম খানের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের পর, দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা মিলেছে চট্টলার ওপেনারদের তান্ডব। আর শেষ পর্যন্ত উসমান খানের সেঞ্চুরিতে ভর করে জয় তুলে নিয়েছে চট্টগ্রাম।
বিপিএলের এবারের আসরে ভাল শুরু পায়নি খুলনা টাইগার্স আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। প্রথম ম্যাচে খুলনা হেরেছিল ঢাকা ডমিনেটর্সের কাছে। আর চট্টগ্রামকে উড়িয়ে দিয়েছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট হারানো দুই দল তাই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়েই শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল একে অপরের।
মাঠে নামার উদ্দেশ্য একই হলেও রান বন্যার ম্যাচে সফল হয়েছে আফিফ হোসেনের চট্টগ্রাম। বন্দরনগরীর প্রতিনিধিরা নয় উইকেটে হারিয়েছে খুলনাকে। যদিও লড়াইটা হয়েছে সমানে-সমানে; লড়াই হয়েছে দুই সেঞ্চুরিয়ানের মাঝেও। শেষপর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে একেবারে ২০তম ওভারে। ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ঠিক যেমন রোমাঞ্চ দেখতে চান দর্শকেরা, তেমনটাই হয়েছে চট্টগ্রাম-খুলনা ম্যাচে।
টসে হেরে খুলনার অধিনায়ক ইয়াসির আলীকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের শুভাগত হোম চৌধুরি। তবে শুরুটা ভাল হয়নি তামিমদের। অন্যদের ব্যর্থতার মাঝে আলো ছড়িয়েছেন শুধুই আজম খান। বলতে গেলে খুলনা টাইগার্সের ইনিংস পুরোটাই আজম খান-ময়।
এই পাকিস্তানি তরুণ যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন খুলনা তখন রীতিমতো ধুঁকছিল। ৩.৫ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২ রান করেছিল তাঁরা। এরপর সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে শুরু করেন আজম খান; অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল তাঁকে যথাযথ সমর্থন দিলেও পারেননি তেমন কিছু করতে। ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংসে সেই স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না, ছিল না তামিম সুলভ ব্যাটিংটাও।
তবে থেমে থাকেননি আজম খান; চার আর ছয়ের সাহায্যে এগুতে থাকেন লাফিয়ে লাফিয়ে। একটা সময় দলীয় সংগ্রহ ১৫০ অনেক দূরের পথ মনে হচ্ছিলো, কিন্তু এই উইকেট রক্ষকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে খুলনা পেয়েছে ১৭৮ রানের বিশাল পুঁজি। ৫৮ বলে অপরাজিত ১০৯ রান করা পাক তারকা একাই করেছেন প্রায় ৬২ শতাংশ রান।
এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আর বিপিএলের ইতিহাসে উইকেটরক্ষক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আজম খান নয় চার আর আট ছয়ে তাঁর অবিশ্বাস্য ইনিংসটি সাজিয়েছেন। তামিম ইকবালের ৪০ ছাড়া আর কেউই পারেননি বলার মত কিছু করতে। বিশেষ করে অধিনায়ক ইয়াসির আলী আজকেও ব্যর্থ হয়েছেন; অধিনায়কত্বের চাপে ফর্ম হারিয়েছেন কি না সেটি তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
১৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে আজম খানের ভূমিকায় কাউকে প্রয়োজন ছিল চট্টগ্রামের। সেই প্রয়োজন মিটিয়েছেন আরেক পাকিস্তানি উসমান খান। তিনিও পেয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।
ব্যাট করতে নেমে আসলে প্রত্যাশার চেয়ে ভাল শুরু পেয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’ডউড আর উসমান খান খুলনার বোলারদের কোন সুযোগই দেননি। দুইজনের জুটি স্থায়ী হয়েছিল ১৫ ওভার পর্যন্ত। আর এসময় রান এসেছে ১৪১। বলাই যায়, উদ্বোধনী দুই ব্যাটারই চট্টগ্রামকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছেন। ৫৮ করে ডাচ তারকা ফিরলেও অবিচল ছিলেন উসমান। শেষপর্যন্ত দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
দুই ইনিংস মিলিয়ে রান হয়েছে ৩৬০; দুই দলের দুই ব্যাটার করেছেন বড় স্কোর। তবে শেষ হাসি হেসেছেন চট্টগ্রাম আর উসমান খান, পাকিস্তানী এই ব্যাটারের ১০৩ রানের ইনিংসের কাছে ম্লান হয়েছে স্বদেশী আজম খানের সেঞ্চুরি।
চট্টগ্রামের ব্যাটাররা দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন ঠিকই, তবে খুলনা তাদের বোলারদের কাছ থেকে নিশ্চিতভাবেই আরো ভাল কিছু দেখতে চেয়েছিল। বিশেষ করে পেসার ভ্যান মিকেরেন রান বিলিয়েছেন দুই হাতে; নাসুম, নাহিদুলরাও পারেননি আর্লি উইকেট এনে দিতে। তাই তো টানা দুই পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয়েছে খুলনা টাইগার্সকে।
প্রথম ম্যাচে না পারলেও দ্বিতীয় চেষ্টায় জয় তুলে নিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কাগজে-কলমে তুলনামূলক দুর্বল দল হলেও যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য আছে দলটির – সেটাই প্রমাণ হলো এই ম্যাচে। অন্যদিকে দুই ম্যাচ খেলেও জয়শূণ্য খুলনার জন্য টুর্নামেন্টে টিকে থাকাই হয়ে গিয়েছে চ্যালেঞ্জিং।