আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটারদের জন্য বড় মঞ্চে খেলার সুযোগ এমনিতেই কম। আইসিসি ওডিয়াই সুপার লিগ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবার পর সেটা কমে গেছে আরো। নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা তাই নিজেদের প্রতিভা দেখানোর মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছে বিশ্বজুড়ে থাকা টি-টোয়েন্টি ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোকেই।
২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ জিতে ১৩ তম দল হিসেবে আইসিসি ওডিয়াই সুপার লিগে কোয়ালিফাই করে নেদারল্যান্ডস। সেই শিরোপা জেতার ফলেই বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ খেলার দ্বার উন্মুক্ত হয় ডাচ ক্রিকেটারদের জন্য। তিন বছরে ক্রিকেটের শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে আটটি সিরিজে ২৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় তাঁরা।
বিশ্বকাপ বাদে ওডিয়াই সুপার লিগই ছিল বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিজেদের প্রতিভা মঞ্চায়নের একমাত্র সুযোগ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর দ্রুত উত্থানে সময় বের করতে না পেরে ফিক্সচার থেকে সুপার লিগ বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। এখন ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই একমাত্র ভরসা ডাচ ক্রিকেটারদের জন্য।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করেছেন ডাচ ক্রিকেটাররা। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে জন্ম দিয়েছিল চমকের। সেই সুবাদেই কিনা বিভিন্ন দেশে ফ্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক মিলছে ডাচ ক্রিকেটারদের। কলিন অ্যাকারমান, ম্যাক্স ও’ডাউড এবং পল ভ্যান মিকেরান বর্তমানে খেলছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলে। অন্যদিকে, বাস দে লিড, ব্র্যান্ডন গ্লোভার, ফ্রেড ক্লাসেনরা খেলছেন আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টিতে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড। রান করার চাইতেও ম্যাক্স আলোচিত হন তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য। সেই কারণেই কিনা তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে বিপিএলের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ওয়ানডে সুপার লিগ বাতিলে হতাশ হলেও ফ্যাঞ্চাইজি লিগে নিজের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে চান এই ব্যাটার।
তিনি বলেন, ‘ওয়ানডে সুপার লিগ বাতিল হওয়া আমাদের জন্য হতাশার। বিশ্বের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে খেললে নিজেদের উন্নতির জায়গাটা বোঝা যায়, তরুণরা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। আপনি দেখেছেন বিগত বিশ্বকাপেই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি এবং বড় দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করেছি।’
তবে ও’ডাউড আশা করছেন সুপার লিগ বাতিল হওয়ায় ফাঁকা সময়টাতে ডাচ ক্রিকেটাররা আরো বেশি ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে ডাক পাবেন। তিনি জানান, ‘সবাই এখন বিশ্বব্যাপী লিগগুলোতে খেলছে। আমি, মিকেরান এবং অ্যাকারমান বাংলাদেশে আছি। বাকিরাও বিভিন্ন দেশে খেলছে। অবশ্যই সুপার লিগ বাতিল হওয়াটা দুঃখজনক, কিন্তু ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আগের চাইতে বেশি সময় পাওয়া যাবে লিগগুলোর জন্য।’
তিনি মনে করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁকে ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত হতে সাহায্য করবে। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলতে পারাটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশি সমর্থকদের সামনে খেলাটা সবসময়ই চমৎকার এবং চট্টগ্রামের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। আমি মনে করি বাংলাদেশে কন্ডিশনে খেলতে পারা আমাকে আরো বেটার ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। আমি আশা করি সামনেও এরকম সুযোগ পাবো।’
সিলেট সিক্সার্সে খেলা কলিন অ্যাকারম্যানও তাল মেলালেন সতীর্থ ও’ডাউডের কথায়। তাঁর মতে, ‘ওয়ানডে সুপার লিগ বাতিল হওয়াটা আমাদের জন্য বাজে এক সিদ্ধান্ত। কারণ সুপার লিগের সুবাদেই আমরা নিয়মিত বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম। বেশ কিছু ম্যাচই আমরা জিততে পেরেছি এবং প্রায় প্রতি ম্যাচেই আমরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম।”
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করার ফলে নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা ফ্যাঞ্চাইজি লিগে সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে ছয়জন ডাচ ক্রিকেটার বিভিন্ন লিগে খেলছে। এর ফলে বুঝা যায় বড় মঞ্চে পারফর্ম করলে আপনি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাবেন।’
‘বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশে খেলতে খেলতেই আমি আরো অভিজ্ঞ হচ্ছি। আপনাকে যেকোনো পরিবেশেই মানিয়ে নেবার মানসিকতা রাখতে হবে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা যেকোনো পরিবেশেই নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে জানেন।’, বলেন অ্যাকারম্যান।
খুলনা টাইগার্সে সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি ডাচ পেসার পল ভ্যান মিকারেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ছয়জন ফ্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছি। ম্যাচ খেলার সুযোগগুলো আমাদেরকে আরো বেশি অভিজ্ঞ করে তুলছে। টি-টোয়েন্টির সেরা ক্রিকেটারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আরো বেশি পরিণত করবে এবং আমরা সেসব জাতীয় দলে প্রয়োগ করতে পারবো। আমি আশা রাখি ২০২৪ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরো বেটার এক নেদারল্যান্ডস দলকে দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।’
বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি খেলতে ডাচ ক্রিকেটারদের একমাত্র ভরসা এখন ফ্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ। ডাচ ক্রিকেটাররা চাইবেন লিগগুলো থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডাচ ক্রিকেটকে আরেক ধাপ উঁচুতে নিয়ে যেতে।