টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে। এমন ম্যাচে সাকিব আল হাসান ভরসা রাখলেন মিরাজের উপরই। তবে অধিনায়ক কিংবা দল যতটা চেয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজ তারচেয়ে অনেক বেশিই ফিরিয়ে দিলেন।
মিরাজ যখন নিজের অর্ধশতকটা পূরণ করলেন তখন তাই সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত সাকিব নিজেই। ড্রেসিং রুম থেকে ছুটে বের হয়ে আসলেন। বাইরে এসে করতালি দিয়ে উদযাপন করলেন মিরাজের অর্ধশতক।
বাঁচা মরার ম্যাচে তাঁদের হয়ে ওপেন করার জন্য ফরচুন বরিশাল উড়িয়ে এনেছিল আন্দ্রে ফ্লেচারকে। সাথে অধিনায়ক সাকিব নামিয়ে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। ফ্লেচার দলটাকে উড়ন্ত শুরু এনে দিবেন আর মিরাজ তাঁকে সঙ্গ দিবে।
এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। অথচ বাইশ গজে সবকিছু ওলট-পালট করে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বরিশালকে উড়ন্ত শুরু এনে দেয়ার দায়িত্বটা বরং তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন।
মিরপুরের উইকেটে দুপুরের ম্যাচ। তাও আবার আগে ব্যাট করতে হচ্ছে। পাওয়ার প্লেতে ভালো একটা শুরু পাওয়া সহজ কথা না। অন্তত এই বিপিএলে এমন নজির খুব কমই আছে।
তবে, মিরাজের কাছে এই সবকিছুই যেন তুচ্ছ। তিনি নিজের ইনিংসটা সাজালেন ঠিক যেমন করে তিনি চেয়েছে। রংপুরের স্পিনার কিংবা পেসার সবাইকেই অসহায় করে তুলেছেন।
রংপুর রাইডার্সও কোয়ালিফায়ার ম্যাচের জন্য নিয়ে এসেছে আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব উর রহমানকে। মিরপুরের উইকেটে মুজিবকে খেলা কতটা কঠিন হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও তাই নতুন বল তুলে দিলেন এই স্পিনারের হাতে। আন্দ্রে ফ্লেচারও একটা সিঙ্গেল নিয়ে মিরাজকে স্ট্রাইক দিয়ে দিলেন।
এরপর মিরাজ যেন মুজিবকে খেললেন পাড়ার বোলার মনে করে। এই স্পিনারের টার্ন ব্যবহার করে আদায় করে নিয়েছেন বাউন্ডারি। মিরাজের দৃঢ়তায় পাওয়ার প্লেতে বরিশালের তেমন কোন বিপদ ঘটাতে পারেননি মুজিব।
আসলে যা করার তা তো মিরাজই করেছেন। আন্দ্রে ফ্লেচার যতক্ষণ বাইশ গজে ছিলেন শুধু মিরাজের ব্যাটিংটাই দেখেছেন। বারবার সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিয়েছেন দারুণ ব্যাট করতে থাকা মিরাজের কাছে। মিরাজও পাওয়ার প্লের সর্বোচ্চ ব্যবহারই করেছেন।
আন্দ্রে ফ্লেচার আউট হয়ে গেলে মিরাজ জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে। রিয়াদও যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মিরাজকে। রংপুরের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপ অসহায় হয়ে পড়েছিল মিরাজের সামনে।
আন্দ্রে ফ্লেচার খুব একটা ভালো করতে না পরলেও তেমন কোন অসুবিধা হয়নি বরিশালের। রিয়াদকে সাথে নিয়ে মিরাজ মাত্র ৩৫ বলেই গড়েন ৫০ রানের জুটি। তাঁদের দুজনের ব্যাটে চড়ে দুরন্ত গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছিল ফরচুন বরিশাল।
এর মাঝে নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতকটাও তুলে নিয়েছেন তিনি। মাত্র ৩৫ বলেই তুলে নেন এই বিপিএলে তাঁর প্রথম অর্ধশতক। তবে এতেই থেমে যাননি বরিশালের হয়ে ওপেন করতে নামা এই ব্যাটার। অর্ধশতকের পর যেন আরো আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলেন। ডোয়াইন ব্রাভোর এক ওভারে মারলেন টানা দুই বাউন্ডারি। আর তাঁর ব্যাটে চড়েই বড় সংগ্রহের পথে হাঁটতে থাকে বরিশাল।
তাঁর আরেক সঙ্গী রিয়াদও ফিরে গেলে মিরাজ এবার এগিয়ে যেতে থাকেন করিম জান্নাতকে সাথে নিয়ে। তবে এই জুটিটা আর খুব বড় করা হয়নি। দাসুন শানাকার বলে ফিরে যেতে হয়েছে মিরাজকে। তবে তাঁর আগে দলকে দিয়ে গিয়েছেন বড় স্কোর গড়ার ভীত। নিজে ব্যাট হাতে ৪৮ বল থেকে খেলেছেন ৬৯ রানের ইনিংস। নয় চার ও এক ছয়ে সাজানো এই ইনিংসটায় মিরাজ ব্যাট চালিয়েছেন ১৪৩.৭৫ স্ট্রাইকরেটে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ওপেনিং সমস্যাটা পুরনো। সেই সমস্যাটা মেটাতে আগে মিরাজকেও ব্যবহার করেছে বিসিবি। তবে, ব্যাটে-বলে হয়নি। তবে, এবার বিপিএলে ওপেনিংয়ে বেশ কয়েকটা ইনিংস খেলে আবারও বিসিবিকে পুরনো রণকৌশলে ফেরত পাঠাতে পারেন।