২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড করে জয় এসেছিল রান তাড়া। তবে দুর্দান্ত সেই ব্যাটিংয়ের সাথে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল মুশফিকুর রহিমের উদযাপন, মাথার উপরে হাত তুলে সাপের মত ফণা তুলে অঙ্গভঙ্গিটি সবার কাছে ‘নাগিন নৃত্য’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়ে যায়।
ধারাভাষ্য বসে সুনীল গাভাস্কার নিজেও এমন অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন সেই সময়। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে যেদিন বাংলাদেশের ফাইনাল নিশ্চিত হয় সেই একই শ্রীলঙ্কাকে শেষ ওভারে হারিয়ে – তখনও সেই একই দৃশ্য। যদিও, বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু আবিষ্কৃত এই উদযাপনটির সমালোচকেরও অভাব ছিল না।
তবে, ক্রিকেটে এমন ভুতুড়ে উদযাপন নতুন কিছু নয়। তেমনই কিছু উদযাপনের কথা বলবো আজকে।
- জোহানসবার্গ, ২০০৭: আন্দ্রে নেল বনাম শ্রীশান্ত
ভারতের অবস্থা সে টেস্টে ছিল বেগতিক, ফলোঅন এড়াতেই নেই নয় উইকেট, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এলেন শ্রীশান্ত। ওদিকে বোলার আন্দ্রে নেল আগুন ঝরা বল করছিলেন, শচীন, দ্রাবিড়রাই খেলতে পারেন নি, আর এই পুঁচকে ত ভয়েই পালাবে! শুরু করলেন স্লেজিং। বুকের লোগো দেখিয়ে বলছিলেন, ‘চেনো এদের? ভয় পাচ্ছো নাকি স্কেয়ারি র্যাবিট!’
শ্রীশান্ত মুখে কিছু বলেননি বটে, কিন্তু পরের ১৪৩ কিমি বলটাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্ট্রেইট দিয়ে পাঠালেন গ্যালারীতে! দারুণ প্রতিশোধ নিয়েই ঝাঁকাতে লাগলেন ব্যাট, অর্থাৎ মাথার উপর দিয়ে ৩৬০ ডিগ্রিতে জোরে জোরে ঘোরাতে লাগলেন নেলের কাছাকাছি এসে!
মুচকি হাসা ছাড়া প্রোটিয়া পেসার নেলের আর কোন জবাব ছিল না!
- ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ, ২০০২: উদ্যাম সৌরভ
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়ক মানা হয় সৌরভ গাঙ্গুলীকে। তিনিও কম ছিলেন না। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ ড্র করে ইংল্যান্ড ৩-৩ ব্যবধানে।
ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ সেদিন জার্সি খুলে উদযাপন করে ভারতীয়দের খানিকটা ব্যঙ্গ করেন। জবাবটা বেশ তিতাভাবেই দেন অধিনায়ক গাঙ্গুরি। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনাল জিতে নেয় ভারত। আর ড্রেসিংরুম থেকে দেখা যায় সেই ঐতিহাসিক উদযাপন, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জার্সি উড়িয়ে ব্রেভ ইন্ডিয়া স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক সৌরভ। অতন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল ‘দাদা’র উদযাপন।
- অ্যাশেজ ২০১১: ইংলিশদের স্প্রিংকল ড্যান্স
২০১১ সালে ইংলিশরা অ্যাশেজ নিজেদের ঘরে তোলে অজিদের ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে। এই অসাধারণ সাফল্যে উদ্বোলিত ইংলিশ ক্রিকেটাররা ভক্তদের চিয়ার আপ করতে এক অদ্ভুত নাচ দেন যা সিনেমায় দেখা গেলেও ক্রিকেট মাঠে দেখা যায়নি। বাঁহাত মাথার পিছন দিকে নিয়ে ডানহাত সোজা করে ঝাঁকাতে থাকা। একে বলে স্প্রিংকেল ড্যান্স। এই উদযাপন প্রবল সাড়া ফেলে ভক্তদের মাঝে।
- শ্রীলঙ্কা সফর ২০১৭: কোহলিদের ড্যাব
এটি বেশিদিন আগের কথা না। নিদাহাস ট্রফির কিছুদিন আগেই শ্রীলঙ্কা সফরেই এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি পান বিরাট কোহলি ও ওপেনার মুরালি বিজয়। প্রায় দুই শতাধিক রানের জুটি গড়েন তারা। সেই জুটির উদযাপন ছিল বেশ মজার। ড্যাব দেন তারা, যা ফুটবলে গোলের পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি স্ট্রাইকার পল পগবা করেন মাঝেমাঝে। এ সেলিব্রেশন দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ভারতীয়দের মাঝে।
শিষ্টাচারের খেলা ক্রিকেট। সাধারণত, যখন আপনি একটি ক্লোজ ম্যাচ জিতেন, আপনি এত ব্যাপকভাবে উদযাপন করতে থাকবেন যে আপনি হেরে যাওয়া প্রতিপক্ষকে শুভকামনা ও ভালো ক্রিকেট খেলায় তাদের অভিনন্দন জানাতে ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি, নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম এলিয়ট, ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটার অ্যানিয়া শ্রাবসোল সবসময় তাদের স্পোর্টসম্যানশিপ ধরে রাখার জন্য বিখ্যাত।
তাঁরা প্রথমেই ভালো খেলার জন্য প্রতিপক্ষকে বাহবা দিতে এগিয়ে যান, কথা বলেন ও উদ্দীপ্ত করেন পরবর্তীতে ভাল খেলার জন্য। তাঁরা এ জন্য প্রবল প্রশংসিত হন। সর্বোপরি ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা, অসভ্যতা এখানে কাম্য নয়। তবে ক্রিকেটাররা যদি শালীনভাবে মাঝেমাঝে এই ধরণের কাণ্ড করে আমাদের বিনোদন দিতে পারেন তবে মন্দ কি?