১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল। চমক দেখিয়ে সেবারের লাহোরের ফাইনালে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। অর্জুনা রাণাতুঙ্গা, রোশান মহানামা, সনাথ জয়াসুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা দুলীপ মেন্ডিসদের নিয়ে গড়া দলটা নিয়ে বিশ্বজয়ের দিকেও চোখ রেখেছিল লঙ্কানরা।
ফাইনালের দিনে একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠেছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রাণাতুঙ্গা। সকালের নাস্তা করতে যাবেন। এমন সময়ে তাঁর সাথে যোগ দিলেন রোশান মহানামা, দুলীপ মেন্ডিসও। তো এমন সময়ে তারা দেখলো, আরেক ফাইনালিস্ট দল অস্ট্রেলিয়া নিজেদের জার্সি পরে একই জায়গায় ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনায় ব্যস্ত।
আর ওদিকে লঙ্কান ক্রিকেটার সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে নির্ভার হয়ে একটি কার্পেটের দরদাম করতে ব্যস্ত। নিজ দলের খেলোয়াড়দের এমন দৃশ্য দেখে খুব রেগে গেলেন অর্জুনা রাণাতুঙ্গা। তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। কোথায় সবাই একটু সিরিয়াস থাকবে। তা তো নয়ই, বরং সবার ভাবটা এমন যেন অবকাশ যাপনে বেরিয়েছে।
নাস্তা শেষ না করেই উঠে গিয়ে সতীর্থদের উপর নিজের অগ্নিমূর্তি দেখাতে যাচ্ছিলেন রাণাতুঙ্গা। দুলীপ মেন্ডিশ শেষ পর্যন্ত থামালেন রাণাতুঙ্গাকে। তারপরও রাণাতুঙ্গার রাগ কমে না। মহানামা, মেন্ডিসদের বললেন, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আর ওরা করছে টা কী!
তবে দুলীপ মেন্ডিস একটা কথায় হঠাৎ শান্ত হয়ে পড়লেন রাণাতুঙ্গা। মেন্ডিস বললেন, আজ ফাইনাল ম্যাচ। ওদের চাপমুক্ত থাকতে দাও। এটা ফাইনালে কাজে দিবে। মেন্ডিসের কথা বেশ মনে ধরলো রাণাতুঙ্গার। আসলেই তো, বড় ম্যাচের আগে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ভার থাকাটাই ভাল। এতে করে চিন্তামুক্ত ভাবে পারফর্ম করা যায়।
অবশ্য সে বারের ফাইনালটা লঙ্কানরা জিতেছিল প্রায় অসম এক চাপ কাটিয়েই। অজিদের দেওয়া ২৪২ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লঙ্কানরা। এরপর আসাঙ্কা গুরুসিনহা একটা ক্যাচ তুলে দেন! কিন্তু সেই সহজ সুযোগ মিস করেন স্টুয়ার্ট ল।
আর সেখান থেকে ৬৫ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলে দলকে জয়ের ভিত গড়ে দেন গুরুসিনহা। যদিও ম্যাচের মূল নায়ক ছিলেন নায়ক অরবিন্দ ডি সিলভা। তাঁর অপরাজিত ১০৭ রানে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানের জয়ে শিরোপা ঘরে তোলে লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপের মহাকাব্য রচিত হয় এভাবেই। এখনও অনেক আলাপচারিতায় বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রাণাতুঙ্গা ফাইনালের সেই সকালের স্মৃতিকথা টেনে আনেন। আর দুলীপ মেন্ডিসের সেই ভাবনাটা যে দারুণ কাজে দিয়েছিল দলটাতে সে কথাও এক বাক্যে সব জায়গায় স্বীকার করে নেন রাণাতুঙ্গা। সে দিনের নির্ভার দলটাই যে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল।